Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দ্রুত বিবাদ মিটিয়ে নজির গড়ল আলিপুর কোর্ট চত্বরের বিকল্প কেন্দ্র

জন্মের ১ মাস ১২ দিনের মধ্যেই ৫২০টি বিবাদ মিটিয়ে ফেলল ‘বিকল্প বিবাদ নিষ্পত্তি কেন্দ্র’। তার মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সংক্রান্ত ১৩টি অভিযোগের মীমাংসা হয়েছে এক দিনেই। আলিপুর জজ কোর্ট চত্বরে ওই কেন্দ্র চালু হয়েছে গত ২০ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যেই ওই কেন্দ্রের এই সাফল্যে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি।

কল্যাণ দাশ
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

জন্মের ১ মাস ১২ দিনের মধ্যেই ৫২০টি বিবাদ মিটিয়ে ফেলল ‘বিকল্প বিবাদ নিষ্পত্তি কেন্দ্র’। তার মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সংক্রান্ত ১৩টি অভিযোগের মীমাংসা হয়েছে এক দিনেই। আলিপুর জজ কোর্ট চত্বরে ওই কেন্দ্র চালু হয়েছে গত ২০ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যেই ওই কেন্দ্রের এই সাফল্যে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি।

রাজ্য মহিলা কমিশন বা থানায় বিবাহিতা মহিলাদের নানা অভিযোগ প্রায়ই জমা পড়ে। গত ২৩ মার্চ রাজ্য মহিলা কমিশন ওই রকম ১৩টি বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আলিপুরের ‘বিকল্প বিবাদ নিষ্পত্তি কেন্দ্র’-এ পাঠিয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা জজ তথা জেলা লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির চেয়ারম্যান সমরেশ প্রসাদ চৌধুরী জানান, ওই কেন্দ্রে মহিলা লোক আদালত বসিয়ে ওই দিনই বিরোধগুলি মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কেন্দ্রে প্রচলিত বিচারব্যবস্থার বাইরে গিয়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়। আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার আগেই বিরোধগুলি মিটিয়ে দেওয়ায় স্বামী-স্ত্রীরা ফের দাম্পত্যে ফিরে যান।

যেমন গিয়েছেন ইতু দাস, নার্গিস বেগম, পূজাদেবী ধানুক ও আফরিন বেগমের মতো মহিলারা।

সিঁথির ঘুঘুডাঙার বাসিন্দা ইতুদেবী এবং তাঁর স্বামী স্মরণেন্দু দাসের সমস্যা ছিল একটি মাত্র ঘরে থাকা নিয়ে। ইতুদেবীর দুই পা অকেজো। সেই সমস্যা মানিয়ে নিয়েই তিনি ওই ঘরে বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। মেয়েও থাকত তাঁর সঙ্গে। ঘর ছিল ইতুদেবীর নামে। তিনি ওই ঘর ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাইতেন না। কিন্তু স্মরণেন্দুবাবু ওই পরিস্থিতিতে ওই ঘরে থাকতে চাইতেন না। এক দিন তিনি স্ত্রী-কন্যাকে ফেলে রেখে চলে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষ লেনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। আড়াই বছরের ওই বিরোধ মিটিয়ে নিতে মেয়েকে সঙ্গে করে স্বামী-স্ত্রী যান মহিলা লোক আদালতে। আলোচনায় ঠিক হয়, কেষ্টপুর-বাগুআইটিতে ইতুদেবীর দিদির বাড়ির কাছাকাছি স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকবেন স্মরণেন্দুবাবু। তাতে সায় দেন ইতুদেবী এবং তাঁর কন্যা। প্রয়োজনে একটা ফ্ল্যাটও কেনার সিদ্ধান্ত হয়।

তিলজলার তপসিয়া ফার্স্ট লেনের বাসিন্দা নার্গিস বেগমের সমস্যা আর এক রকম। তাঁর অভিযোগ, স্বামী সোহেল হোসেন সংসারে কোনও নজরই দেন না। স্বামী সোহেলের পাল্টা অভিযোগ, স্ত্রী নার্গিস বিলাসিতায় অভ্যস্ত। ঘরের কোনও কাজই তিনি করতে চান না। এমনকী, রান্নাবান্নাও নয়। বাইরে থেকে খাবার কিনে খান। মেয়েকেও তা-ই খাওয়ান। সোহেলের বক্তব্য, সে জন্যই তিনি বাড়ি ছেড়ে কুষ্ঠিয়ার মসজিদ বাড়ি লেনের একটি বাড়িতে চলে যান। সমস্যা মেটাতে সেই সোহেল, নার্গিসও যান আদালতে। মেয়ের সামনেই তাঁরা একমত হন যে, স্বামী সংসারে নজর দেবেন। রান্নার যাবতীয় উপকরণ কিনে আনবেন। স্ত্রীও রোজই খাবার তৈরি করবেন। তা ছাড়া, সপ্তাহান্তে নার্গিসের বাবা মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে ঘুরে যাবেন।

পূজাদেবী ধানুকের সমস্যা ছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে থাকা নিয়ে। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে পূজাদেবী চুঁচুড়ার আদর্শনগরের শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বছর দেড়েকের মেয়েকে নিয়ে চলে যান ভূকৈলাস রোডে বাপের বাড়িতে। স্বামী সূরয ধানুকের স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকার আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলে। সমস্যা মেটাতে শেষে তাঁরা দু’ জনেই আদালতের আশ্রয় নেন। মেয়ে পূজাদেবীকে নিয়ে আদালতে যান অশোকবাবু। আলোচনায় ঠিক হয়, অশোকবাবু মেয়ের জন্য খিদিরপুর অঞ্চলে একটি বাড়িভাড়া করবেন। ছ’ মাস ধরে বাড়িভাড়ার টাকা তিনিই দেবেন। চুঁচুড়ার বাড়ি থেকে আসবাব ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভাড়াবাড়িতে নিয়ে আসবেন স্বামী সূরযই। সূরজ তাঁর বাবা-মা-র কাছে যেতে পারবেন। আপত্তি করবেন না স্ত্রী পূজাদেবী।

নারকেলডাঙার আফরিন বেগম ও তাঁর স্বামী জাফর আহমেদের মধ্যেকার বিরোধ মিটলেও পুলিশের গেরো থেকে তাঁরা বেরোতে পারেননি। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে আফরিন নিউ টাউন থানায় এবং রাজ্য মহিলা কমিশনে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। কমিশন সেই অভিযোগ আলিপুরের ওই কেন্দ্রে পাঠায়। কিন্তু পরে আফরিন থানায় জানান, কিছু শত্রুর প্ররোচনায় তিনি স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। পরে নিজেরাই বিরোধ মিটিয়ে ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে একসঙ্গে বসবাস করছেন। ফলে আগের অভিযোগ তিনি প্রত্যাহার করতে চান। একই কথা আলিপুরের কেন্দ্রেও জানান আফরিন। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, নিউ টাউন থানার তদন্তকারী অফিসার ওই অভিযোগ প্রত্যাহারের কাজে গড়িমসি করছেন। ওই অফিসার যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেন, তার জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানান আফরিন।

এই সব সাফল্যের কাহিনি উজ্জীবিত করছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalyan dash alipur court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE