গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্পের সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হল কলকাতা পুরসভা। আগামী বছরের মার্চে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আগামী বছর পুরভোটের কথা মাথায় রেখেই নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে চান পুরকর্তৃপক্ষ।
২০১১-য় গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প অধিগ্রহণের এক বছরের মধ্যেই কলকাতা পুরকর্তৃপক্ষ পাঁচ কোটি গ্যালন পরিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য নতুন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এতে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে পানীয় জলের সঙ্কট মিটবে বলে পুরসভার আশা ছিল। ২০১৩-এ এই কাজ শুরু হয়। কথা ছিল ২০১৫-এর মার্চে কাজ শেষ হবে।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্পের মধ্যে এর জন্য জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে দৈনিক পাঁচ কোটি গ্যালন জল উৎপাদন হবে। তা ছাড়া প্রত্যহ আরও দেড় কোটি গ্যালন জল উৎপাদনের জন্য নতুন আরও একটি প্ল্যান্টের কাজ চলছে।” কাজে প্রযুক্তিগত সমস্যা হলেও এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথমেই কাজ শেষ হবে বলে তাঁর দাবি।
পুরসভা সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের জন্য যেখানে লাইন পাতার কথা, সেখানে সিইএসসি-র লাইন রয়েছে। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি বিভাস মাইতি বলেন, “সিইএসসি-র লাইন সরাতে হবে বলে অন্য জায়গায় জলের লাইন পাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তবুও এ বছরের মধ্যে কাজ শেষের চেষ্টা চলছে বলে পুরসভার দাবি।
বর্তমানে, গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প থেকে প্রতি দিন প্রায় ১০ কোটি গ্যালন পরিশুদ্ধ পানীয় জল উৎপাদন হয়। কিন্তু ১২ কোটি গ্যালন জল উৎপাদন হওয়ার কথা। এই জল দক্ষিণ কলকাতার বেহালা, যাদবপুর, গার্ডেনরিচ ছাড়াও আশপাশের পুজালি, বজবজ এবং মহেশতলা পুর এলাকায়ও যায়। তৃণমূল পরিচালিত নতুন বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরেই কলকাতা পুরসভা ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি’ (কেএমডব্লিউএসএ)-র থেকে জলপ্রকল্পটি অধিগ্রহণ করে। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, এই প্রকল্প থেকে যে জল উৎপন্ন হয় তার বেশিরভাগই কলকাতার পুর এলাকায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের দায়িত্ব-সহ বাকি বিষয়গুলি পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগই দেখে। তাই সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য পুরসভা অধিগ্রহণ করে।
জলপ্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল গঙ্গা থেকে অপরিশোধিত পানীয় জলের ধারাবাহিক জোগান। সেই জল তুলতে প্রায়ই সমস্যা দেখা দিত। গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্পে গঙ্গা থেকে অপরিশোধিত জল তোলার জন্য দু’টি পাম্পিং স্টেশন বা জেটি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পাম্পিং স্টেশন পুরনো এবং কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। ফলে, জোয়ারের সময় ছাড়া জল তোলার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। গ্রীষ্মে গঙ্গার জলতল নেমে গেলে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়।
বিভাসবাবু জানান, পাম্পের ধারাবাহিক নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণের ফলে এই সমস্যা বর্তমানে আটকানো গিয়েছে। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। এর জন্য প্রয়োজন নতুন জেটি নির্মাণ করা বা পুরনো জেটির আমূল সংস্কার করা। গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্পে নতুন চারটি পাম্প বসানো হচ্ছে বলেও বিভাসবাবু জানান। তাই পুরকর্তৃপক্ষ নতুন পাঁচ কোটি গ্যালন পরিশুদ্ধ পানীয় জল উৎপন্ন করার জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি ছাড়াও ১০ কোটি গ্যালন অপরিশোধিত জল তোলার জন্য একটি জেটিও তৈরি করবে। এই জেটির মাধ্যমেই পুরনো এবং নতুন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে অপরিশোধিত জলের জোগান দেওয়ার কাজ চালনো হবে। এই জেটি তৈরির কাজ শেষ হলেই পুরনো জেটির খোলনলচে পাল্টে তা নতুন করে করা হবে। সে ক্ষেত্রে দু’টি জেটি থাকবে। কোনও কারণে একটিতে অসুবিধা হলে অন্যটি কাজ চালাবে। ফলে, দক্ষিণ কলকাতায় পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকবে না বলে পুরকর্তৃপক্ষের দাবি।