শুভজিত্ সরকার
পথ-বিধি ভাঙার দুই নজির। আর পরপর সেই দুই বেনিয়মের মাসুল দিল দশম শ্রেণির এক ছাত্র। তীব্র গতিতে ছুটে আসা বেসরকারি একটি বাস ওভারটেক করছিল সামনের বাসকে। তখনই মোবাইলের হেডফোন কানে গুঁজে রাস্তা পেরোচ্ছিল ওই কিশোর নিজেই। পিছন থেকে আসা ওই বেপরোয়া বাসের চাকার পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল তার।
বৃহস্পতিবার বরাহনগর এলাকার এই দুর্ঘটনা আরও এক বার প্রমাণ করে দিল, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় বাসের ওভারটেক করা যেমন কমেনি, তেমনই বদলায়নি কানে হেডফোন গুঁজে রাস্তা পার হওয়ার প্রবণতার ছবিটাও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগবাজারের বাসিন্দা শুভজিত্ সরকার (১৭) এ দিন সকালে শ্রীরামপুর-বাগবাজার রুটের ৩ নম্বর বাসে বরাহনগরের সবেদাবাগান এলাকায় টিউশনে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ডানলপের পিডব্লিউডি রোডের উপরে ইউবি কলোনি বাসস্টপে দক্ষিণেশ্বরমুখী রাস্তার ডান দিকে বাস থেকে নামে ওই ছাত্র। তার কানে মোবাইলের হেডফোন লাগানো ছিল। রাস্তার ডান দিক থেকে বাঁ দিকের ফুটপাথে আসার সময়েই ঘটে দুর্ঘটনা। আচমকাই সামনের ওই বাসটিকে ওভারটেক করতে তীব্র গতিতে এগিয়ে এসে শুভজিত্কে ধাক্কা মারে ওই রুটেরই আর একটি বাস। বাসের পিছনের চাকায় তার মাথার একটি দিক পিষে যায়। এক পুলিশকর্তার কথায়, “ছাত্রটির কানে হেডফোন ছিল। তবে আচমকা ওভারটেক করে তীব্র গতিতে আসতে গিয়েই বাসটি দুর্ঘটনা ঘটায়।”
পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাজারের লোকেরাই বাসটিকে ধাওয়া করেন। বেগতিক দেখে চালক ও কন্ডাক্টর বাস ফেলে চম্পট দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে ও দেহ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখায়। পরে বরাহনগর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ছাত্রটির দেহ পাঠানো হয় বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে চিকিত্সকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তবে পুলিশের দাবি, ঘটনার সময়ে ওই বাসস্টপে ট্রাফিক সিভিক পুলিশকর্মীরা ছিলেন। তাঁরা হাত দেখালেও থামেনি ঘাতক বাসটি।
পুলিশ সূত্রের খবর, বাগবাজার বোসপাড়া লেনের বাসিন্দা সমীর সরকারের একমাত্র ছেলে শুভজিত্, ডাকনাম ভিকি। সে শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। প্রতিদিনই সে বাড়ির সামনে থেকে শ্রীরামপুর-বাগবাজার রুটের ৩ নম্বর বাসে উঠে বরাহনগরের সবেদাবাগান এলাকায় টিউশন পড়তে যেত। এ দিন বরাহনগর থানায় দাঁড়িয়ে সমীরবাবু বলেন, “পৌনে ৮টায় ভিকির মোবাইল থেকে একটা ফোন এল। বুঝতে পারলাম না, ও পড়তে গিয়ে ফোন করছে কেন। প্রথমে কেটে দিয়েছিলাম। পরে নিজেই আবার ফোন করলাম। অন্য একজন ফোন ধরে বলল, ‘আপনার ছেলের দুর্ঘটনা হয়েছে। চলে আসুন।’ এসে দেখলাম, সব শেষ।”
শুভজিত্ যাঁর কাছে পড়তে যেত, সেই শিক্ষক মোতিলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রোজ কোচিংয়ে চলে আসত শুভজিত্। কিন্তু এ দিন সওয়া ৮টা বেজে গেলেও আসছে না দেখে চিন্তা হয়। তখনই ওঁর বাবা ফোন করে জানান, ইউবি কলোনির স্টপেজে বাস ওকে ধাক্কা মেরেছে। খবর পেয়েই অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সেখানে যাই।” তবে সবেদাবাগান স্টপেজে না নেমে তার দু’টি স্টপেজ আগে ইউবি কলোনিতে শুভজিত্ কেন নেমেছিল তার কারণ অবশ্য জানা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy