Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাসে ধাক্কা গাড়ির, মারা গেলেন বৃদ্ধ ও পুত্রবধূ

দিনটা ছিল তাঁদের বিবাহবার্ষিকী। উদযাপন করতে পরিবারের সকলকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্তা অয়ন বসু। নিউ টাউনের সিটি সেন্টার-২ থেকে খাওয়া-দাওয়া সেরে বাড়ি ফেরার পথে ঘটে গেল মমার্ন্তিক দুর্ঘটনা। রাস্তাতেই তিনি হারালেন স্ত্রী সুপর্ণা বসু (৪৩) ও বাবা প্রণব বসুকে (৬৫)।

বাসের পিছনে ধাক্কা মারায় এ ভাবেই দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে সেই গাড়িটি। শনিবার।  —নিজস্ব চিত্র।

বাসের পিছনে ধাক্কা মারায় এ ভাবেই দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে সেই গাড়িটি। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৯
Share: Save:

দিনটা ছিল তাঁদের বিবাহবার্ষিকী। উদযাপন করতে পরিবারের সকলকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্তা অয়ন বসু। নিউ টাউনের সিটি সেন্টার-২ থেকে খাওয়া-দাওয়া সেরে বাড়ি ফেরার পথে ঘটে গেল মমার্ন্তিক দুর্ঘটনা। রাস্তাতেই তিনি হারালেন স্ত্রী সুপর্ণা বসু (৪৩) ও বাবা প্রণব বসুকে (৬৫)। ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন অয়নবাবু নিজে এবং তাঁর ১৫ বছরের ছেলে সায়ন। প্রথমে তাঁদের নিউ টাউনেরই একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। পরে বেশি রাতে তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিংহোমে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অয়নবাবু থাকেন রঘুনাথপুরের একটি আবাসনে। বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী প্রণববাবু থাকতেন জামশেদপুরে। ছেলের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে দিন দু’য়েক আগে রঘুনাথপুরে এসেছিলেন তিনি। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নিউ টাউনের সিটি সেন্টারের উল্টো দিকে বাসস্ট্যান্ড না হওয়া সত্ত্বেও এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ চিনার পার্ক থেকে ধর্মতলামুখী একটি ৪৬বি রুটের বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল। পুলিশ জানায়, ওই সময়ে অয়নবাবু পিছনের একটি কাট আউট থেকে গাড়িটি বাঁ দিকে ঘোরানোর পরেই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ৪৬বি বাসটির পিছনে সজোর ধাক্কা মারেন। এই দুর্ঘটনায় গাড়িটির বাঁ দিকটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটির চালকের আসনে ছিলেন অয়নবাবু। তাঁর বাঁ দিকে বসেছিলেন স্ত্রী সুপর্ণা এবং সুপর্ণার ঠিক পিছনেই বসেছিলেন প্রণববাবু। অয়নবাবু পিছনের আসনে বসেছিল তাঁদের ছেলে সায়ন।

পুলিশ জানায়, অয়নবাবুর স্যান্ট্রো গাড়িটি বাঁ দিক দিয়ে বাসের পিছনে সজোর ধাক্কা মারায় অয়নবাবুর স্ত্রী ও বাবা গাড়ির মধ্যেই পিষ্ট হয়ে যান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের। শেষ মুহূর্তে গাড়িটি ডান দিকে ঘোরাতে পারায় কিছুটা কম আহত হন অয়নবাবু এবং তাঁর ছেলে। ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা মৃত ও আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যান।

এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নার্সিংহোমে চলে আসেন অয়নবাবুর সহকর্মী ও আত্মীয়েরা। এ দিন রাতে ওই নার্সিংহোমের সামনে দাঁড়িয়ে অয়নবাবুর এক সহকর্মী অমিতকুমার দাস বলেন, “অয়নের মোবাইল থেকেই আমাদের ফোন করে এই দুর্ঘটনার খবর দেওয়া হয়। তার পরেই আমরা সকলে ছুটে আসি। কী ভাবে যে এমন ঘটনা ঘটে গেল!”

এ দিকে, এই ঘটনার জেরে ফের সামনে এল নিউ টাউনের রাস্তায় যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, বাস দাঁড়ানোর জন্য আলাদা একটি সার্ভিস রোড আছে। ৪৬বি বাসটিরও দাঁড়ানোর কথা বড় রাস্তার ধারে ওই সার্ভিস রোডেই। কিন্তু বাসটি ওই জায়গায় দাঁড়ায়নি। নিয়ম না মেনে বাসটি দাঁড়িয়েছিল মূল রাস্তার উপরেই। আর সে কারণেই এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল।

এলাকার বাসিন্দা রমেন আচার্য বলেন, “শুধু ৪৬বি রুটের বাস নয়, প্রায় সব রুটের বাস এসেই ওই জায়গায় রাস্তার উপরে দাঁড়ায়। সন্ধ্যার দিকে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও দিনের বাকি সময়ে তাঁদের দেখা পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে পুলিশকে বারবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।”

এলাকার বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, নিউ টাউনের ওই রাস্তায় যানবাহন চলে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। কিন্তু রাস্তায় যত্রতত্র যেমন বাস দাঁড়ায়, তেমনই রাতে অধিকাংশ দিন রাস্তার আলো জ্বলে না। ফলে নিত্যদিন দুর্ঘটনা লেগেই থাকে।

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “ওই জায়গায় বাস দাঁড়ানো নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। এর সমধান অতি দ্রুত যাতে করা যায় আমরা দেখব। তবে ওই অঞ্চলে আলাদা করে বাস-বে না করা পর্যন্ত সমস্যা মিটবে বলে মনে হয় না। আমরা হিডকোকে একটি বাস-বে করে দেওয়ার জন্য বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bus accident newtown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE