এমনই হাল রাস্তার। নিজস্ব চিত্র
বাসের পা-দানিতে বসে এক মনে সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়াচ্ছিলেন মিছিলে আসা এক যুবক। ডিমের খোসাগুলো নির্দ্বিধায় ছড়িয়ে ফেলছিলেন রাস্তায়। পনেরো-কুড়িটা ডিমের খোসা রাস্তায় পড়েই রইল। কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল মানুষের পায়ে-পায়ে। কয়েকটা বাস পরেই দাঁড়িয়ে ছিল দেগঙ্গা থেকে মিছিলে আসা আর একটা বাস। ভিতরে বিরিয়ানি খাওয়া চলছে। হাতে হাতে প্যাকেট। খাওয়া শেষ করে সেগুলো জানলা দিয়েই ছুড়ে ফেলছেন অনেকে। কারও পুরো প্যাকেট শেষ, কেউ বা আধখাওয়া বিরিয়ানি ছুড়ছেন। আলু-মাংসের টুকরো গড়াগড়ি খাচ্ছে রাস্তায়। কুকুর এসে খেয়ে যাওয়ায় রাস্তা কিছুটা সাফ হল বটে। আধখাওয়া লুচি-আলুর দম অবশ্য রাস্তাতেই পড়ে থাকল।
ওই বাসের পিছনে দাড়ানো আর একটি বাসের এক যাত্রী তখন আবার দুপুরের খাওয়া সেরে পরম তৃপ্তিতে ঢেকুর তুলে কুলকুচি করছেন। জানলা দিয়ে সেই জল এসে পড়ছে রাস্তায়। শুধু তিনিই নন, বাসের অধিকাংশ যাত্রীই হাত-মুখ ধুচ্ছেন রাস্তাতেই। মুখ ধোয়া জল গড়িয়ে পড়ছে। দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠার জোগাড়।
এমনকী, মিছিলে এক মাকে দেখা গেল, বছর চারেকের ছেলের প্রস্রাব করার জায়গা হিসেবে একটি বাসের পিছনে চাকার পাশের অংশকেই বেছে ফেলেছেন। এ দিকে ওদিকে তাকিয়ে গলা নামিয়ে বাচ্চাকে বলেও ফেললেন ‘করে ফেল সোনা।’ মিছিলে অংশ নিতে এ ভাবেই মঙ্গলবার দিনভর চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ‘নোংরা’ করলেন বহু মানুষ। যা দেখে এক পথচারী বললেন, “রাস্তা আর রাস্তা নেই। নর্দমা বানিয়ে ছেড়ে দিল দেখছি!”
শুধু বামেদের এই সমাবেশ-মিছিলেই নয়, শহরে যে কোনও রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিং মানেই রাস্তা কার্যত আবর্জনা ফেলার জায়গায় পরিণত হয়। অভিযোগ, যে সব রাস্তায় বাসের পার্কিং হয়, সেগুলোতেই জমে জঞ্জালের স্তূপ। যেমন এ দিনের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। রাস্তার দু’পাশে শুধু বাসই নয়, টেম্পো, ম্যাটাডর সবই দাঁড়িয়েছিল। এমনকী বাসের চাপ বাড়ায় এক সময়ে দুটো বাস পাশাপাশি দাঁড়াতেও দেখা গিয়েছে। দুটো বাসের মাঝে চিলতে রাস্তাটুকুর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। যানজটের জন্য সেখান দিয়ে পেরোতে গিয়ে ফিরে এলেন এক পথচারী। ওই অংশেই পড়ে উচ্ছিষ্ট খাবারের টুকরো।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাফাই অভিযানের ডাক দিয়েছেন। শুধু সাধারণ মানুষই নন, নিজের শহর সাফ করতে ঝাঁটা হাতে দেখা গিয়েছে বিশিষ্ট মানুষদেরও। তবে এ দিনের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ছবিটা দেখে মনে হতে পারে, এ সব অভিযানের কথা হয়তো জানেনই না সাধারণ মানুষ। এক সময়ে মিটিং করতে এসে ময়দানে উনুন জ্বালিয়ে রান্না হতো। পুলিশের দাবি, এখন নজরদারিতে তা বন্ধ হয়েছে। তবে শহর অপরিচ্ছন্ন করার ধারাটা বোধহয় রয়েই গিয়েছে। অন্তত এ দিনের রাস্তার হাল তেমনটাই বলে।
পুরসভার দাবি, রাস্তার জঞ্জাল দ্রুত সাফ হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন, এ ভাবে শহর নোংরা করার আগে কেন মানুষ সচেতন হবে না? ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন বলেন, “আমাদের তো যানবাহন সামলাতেই সময় কেটে যায়। মানুষকে কখন সচেতন করব? এই দায়িত্ব পুরসভাই নেয়।” মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “মানুষ নিজে সচেতন হলে আমাদের কাজ কমে। সেই সচেতনতাটাই কম। তাই এ সব সাফ করতে আমাদের কর্মীরা বিকেল থেকেই নামেন। যাঁরা ময়দান সাফ করেন, তাঁরাই রাস্তা পরিষ্কার করেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy