অগ্নিদগ্ধ সেই বাড়িতে দমকল কর্মীরা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন লেগে গুরুতর দগ্ধ হলেন দুই ব্যক্তি। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে হিন্দুস্থান পার্কে। দগ্ধ ব্যক্তিদের নাম জগদীশ দাস ও রঞ্জিত দাস। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, প্রথমে শর্ট সার্কিট এবং পরে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে বাড়ির তিনতলার ফ্ল্যাটে আগুন লাগে।
দমকল সূত্রের খবর, দুপুর ১টা নাগাদ ৫১/১ হিন্দুস্থান পার্কের ওই বাড়িতে আগুন লাগার খবর আসে। জলের পাইপ নিয়ে তাঁদের কর্মীরা উপরে যাওয়ার সময়েই ভয়ঙ্কর আওয়াজে বাড়ি কেঁপে ওঠে। কোনও রকমে উপরে উঠে তাঁরা উদ্ধার করেন বাড়ির সদস্য এবং অগ্নিদগ্ধ আরও দুই ব্যক্তিকে। দমকল জানায়, পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য নিতাই দাস হাসপাতালে ভর্তি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পিজিতে ভর্তি স্থানীয় সাফাইকর্মী জগদীশ দাস এবং একটি বেসরকারি চ্যানেলের প্রোডাকশনের সদস্য রঞ্জিত দাস।
বাড়িটির দোতলার বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী আহেলি দাস জানায়, তিনতলার ওই ফ্ল্যাটটিতে থাকেন তার দাদু নিতাই দাস (৮১), ঠাকুরমা মিনু দাস, তাঁদের ছেলে-বৌমা স্বরূপ ও জুলি, তাঁদের দুই ছেলে এবং একটি ডালমেশিয়ান কুকুর। এ দিন দুপুরে ছিলেন শুধু নিতাইবাবু, মিনুদেবী, স্বরূপবাবু এবং পোষা কুকুরটি। পৌনে ১টা নাগাদ উপর থেকে চিৎকার শুনে আহেলি গিয়ে দেখে বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ভিতরে দাদু-ঠাকুরমার আর্তনাদ। সবাইকে ডাকতে ডাকতেই আহেলি দমকলে ফোন করে।
আহেলি জানায়, সামনের বাড়িতে তখন শু্যটিং চলছিল। চিৎকার শুনে ওই বাড়ি থেকে ছুটে আসেন প্রোডাকশনের কর্মী রঞ্জিত এবং সাফাইকর্মী জগদীশ। ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁরাই সকলকে উদ্ধার করে নীচে নিয়ে যান। আহেলির কথায়, “কুকুরটাকেও ওঁরা নীচে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কুকুরটা আবার ঘরে ঢুকে যায়। রঞ্জিত ও জগদীশ তাকে আবার ধরে আনতে যান। তখনই ভয়ঙ্কর আওয়াজে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়।”
সেই সময়েই পৌঁছয় দমকল। দমকলকর্মীরা উপরে উঠতে গিয়ে জানতে পারেন, বাড়ির সদস্যরা বেরোতে পারলেও দুই ব্যক্তি আটকে পড়েছেন। তার পরেই অগ্নিদগ্ধ জগদীশ এবং রঞ্জিতকে উদ্ধার করেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে যান গড়িয়াহাট থানার আধিকারিকেরা এবং পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার।
খবর পেয়ে স্কুল থেকে তড়িঘড়ি বাড়িতে ফেরেন শিক্ষিকা জুলিদেবী। নিতাইবাবু, জগদীশ এবং রঞ্জিতকে পিজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নিতাইবাবুকে।
আড়াইটে নাগাদ হিন্দুস্থান পার্কের ফ্ল্যাটটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরে জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড। আলমারির কাচ টুকরো হয়ে ছড়িয়ে। শোয়ার ঘরে বিছানার গদি ছিঁড়ে তুলো ছড়িয়ে গিয়েছে গোটা মেঝেতে। রান্নাঘরে দরজা বলতে আর কিছু নেই। চার দিকে ছিটকে গিয়েছে ঝলসে যাওয়া বাসনপত্র। স্টিলের সিঙ্কের হদিস মিলছিল না। পরে তা পাওয়া যায় নীচে, বাড়িতে ঢোকার গলিতে।
দমকলের প্রাথমিক অনুমান, শর্ট-সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল। তবে পরে সিলিন্ডার ফাটতেই আগুন বড় আকার নেয়। দমকলের আরও অনুমান, সিলিন্ডারটির সুইচ খোলা ছিল কিংবা পাইপে ফুটো ছিল, যার ফলে গ্যাস লিক করে।
‘বাঁচাও, বাঁচাও’ কানে আসতেই ছুটলেন ওঁরা
নিজস্ব সংবাদদাতা
প্রতিদিন ভ্যানে করে আলো, ক্যামেরা, আলোর স্ট্যান্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ান তিনি। শুক্রবারও শু্যটিংয়ের কাজে হিন্দুস্থান পার্কে ছিলেন রঞ্জিত দাস (৩৫)। বেলা পৌনে ১টা নাগাদ উল্টো দিকের ৫১/১ হিন্দুস্থান পার্কের বাড়ি থেকে চিৎকার “বাঁচাও, বাঁচাও, আগুন...”।
হরিদেবপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত তা শুনেই সোজা ওই বাড়ির তিনতলায় দৌড়ন। আর এক ব্যক্তিও চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তিনি জগদীশ দাস। গত কয়েক বছর ধরে বিহারের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের জগদীশকে এলাকার লোকেরা সাফাইকর্মী বলেই চেনেন। ততক্ষণে তিন তলার ফ্ল্যাটটি ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। বাড়ির কয়েক জন সদস্য ছাড়াও ভিতরে ছিল পোষ্য ডালমেশিয়ান কুকুরটি। রঞ্জিত আর জগদীশ মিলে অন্যদের বার করে আনার পরে খেয়াল হয় প্রবীণ সদস্য নিতাই দাস স্নানে ঢুকেছেন। তাঁকে দু’জনে বারও করে আনেন। কিন্তু পোষ্য ডালমেশিয়ান আবার ফাঁক বুঝে ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে। তাকে বার করতে গিয়ে তিন তলায় যাওয়া মাত্রই হঠাৎ বিস্ফোরণ। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন রঞ্জিত ও জগদীশ। বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালে শয্যায় মশারির ভিতরে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় জগদীশকে ছটফট করতে দেখা গেল। সারা শরীর ঝলসে গিয়েছে। রঞ্জিতেরও পুরো মুখ অগ্নিদগ্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy