Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাস গেলে এখনও কুণালের টাকা দলে

সারদা কেলেঙ্কারিতে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে ‘সমান ভাবে জড়িত থাকার’ অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশই। জেলে বসেই তৃণমূলনেত্রী-সহ দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগও এনেছেন তিনি। যার জেরে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে দলকে। গ্রেফতারের আগেই অবশ্য দলবিরোধী কাজের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল। সাসপেন্ড হওয়া সেই সাংসদ কুণাল ঘোষের রাজ্যসভা থেকে প্রাপ্ত বেতনের একটা অংশ কিন্তু এখনও নিয়মিত জমা পড়ছে তৃণমূলের দলীয় তহবিলে! গত এক বছর ধরেই সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া সাংসদের বেতন থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জমা পড়ছে তৃণমূলের তহবিলে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারিতে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে ‘সমান ভাবে জড়িত থাকার’ অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশই। জেলে বসেই তৃণমূলনেত্রী-সহ দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগও এনেছেন তিনি। যার জেরে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে দলকে। গ্রেফতারের আগেই অবশ্য দলবিরোধী কাজের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল। সাসপেন্ড হওয়া সেই সাংসদ কুণাল ঘোষের রাজ্যসভা থেকে প্রাপ্ত বেতনের একটা অংশ কিন্তু এখনও নিয়মিত জমা পড়ছে তৃণমূলের দলীয় তহবিলে! গত এক বছর ধরেই সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া সাংসদের বেতন থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জমা পড়ছে তৃণমূলের তহবিলে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পরেই সংসদে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া সংসদ শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলা হয় কুণালের। সংসদের ভিতরের ওই শাখায় সব সাংসদেরই অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সাংসদদের বেতন সরাসরি জমা হয় ওই শাখায়। সাংসদ হিসাবে অ্যাকাউন্ট খোলার পরেই কুণাল ওই শাখায় একটি ইসিএস (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) ফর্ম জমা করেন। তাতে ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দেওয়া হয়, প্রতি মাসে সাংসদ হিসেবে তিনি যে বেতন পাবেন, তার থেকে ১০ হাজার টাকা যেন তৃণমূলের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই মতো এখনও প্রতি মাসে কুণালের বেতনের টাকা থেকে ওই টাকা কেটে তৃণমূলের অ্যাকাউন্টে জমা করে দিচ্ছে এসবিআই। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই টাকা তৃণমূলের অ্যাকাউন্টে যাওয়া বন্ধ করার দু’টি উপায় আছে। এক, কুণালবাবুকে লিখিত ভাবে ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিতে হবে যে, তাঁর বেতনের টাকা তৃণমূলের অ্যাকাউন্টে পাঠানো বন্ধ করা হোক। অথবা, তৃণমূল নেতৃত্ব লিখিত ভাবে ওই টাকা পাঠানো বন্ধ করার জন্য ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দেবেন। এ দু’টির কোনওটিই যতক্ষণ না হবে, ততক্ষণ স্বয়ংক্রিয় ভাবে ওই টাকা তৃণমূলের অ্যাকাউন্টে জমা হতে থাকবে।

কিন্তু যে কুণালকে নিয়ে এত বিতর্ক, তাঁর বেতন থেকে কেন টাকা নিচ্ছে তৃণমূল? দলীয় মুখপাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কুণাল দল থেকে বহিষ্কৃত নন। তিনি ‘সাসপেন্ডেড’। যত ক্ষণ না বহিষ্কৃত হচ্ছেন, তত ক্ষণ ওঁর লেভি দলের তহবিলে আসবে।” দলের এক শীর্ষনেতা এ দিন বলেন, “এখনও এই হিসেব পরীক্ষা করে দেখিনি। অডিট রিপোর্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেব। তবে এর মধ্যে বেআইনি কিছু নেই। কারণ, কুণাল ঘোষ এখনও তৃণমূলেরই সাংসদ।” লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দলীয় সাংসদের টাকা ব্যাঙ্কে জমা রয়েছে। তা তোলা হয়নি।”

তৃণমূল বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যাখ্যা দিলেও বিরোধীরা এ ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্নটিই বড় করে তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ খান বলেন, “নৈতিক ভাবে এটি নেওয়া উচিত নয়। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে আদর্শের তো কোনও সম্পর্ক নেই! দল ও সরকার পরিচালনার সময়ও তাদের থেকে নৈতিকতা আশা করা যায় না! যে দলের নৈতিকতার ‘ন’ নেই, সেখান থেকে আর কী প্রত্যাশা করা যায়?” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, “তৃণমূল তো টাকা সর্বস্ব দল! যদি লাজলজ্জা থাকত, তা হলে কুণালের টাকা নিত না।”

সিপিএমও বিষয়টি নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর মম্তব্য, “তৃণমূল টাকা নিয়ে প্রমাণ করছে, কুণাল আসলে ওদের দলেরই লোক!” সিপিএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, “আমাদের দলে এমন ঘটনা ঘটে না। পুরো টাকাটাই পার্টি তহবিলে চলে যায়। পার্লামেন্টের স্টেট ব্যাঙ্কের শাখায় নির্দেশ দেওয়া থাকে, সাংসদের বেতন জমা পড়লে তার পুরো টাকাটাই পার্টির অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যাবে। তবে কাউকে সাসপেন্ড করা হলে নৈতিক ভাবে তাঁর বেতনের টাকা নেওয়া হয় না।” দলের কথায়, ব্রতীন সেনগুপ্তকে যখন সাসপেন্ড করা হয়েছিল, তখন দল থেকেই বলে দেওয়া হয়েছিল, তাঁর টাকা যেন পার্টি অ্যাকাউন্টে জমা করা না হয়।

রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ মনে করেন, কুণালের টাকা নেওয়া উচিত হয়নি তৃণমূলের। তাঁর কথায়, “সাসপেন্ড হওয়ার পরেও তৃণমূল যে ভাবে কুণালের থেকে টাকা নিচ্ছে, তার অর্থ, সারদা কাণ্ড নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে তারা! কুণালকে সাসপেন্ড করে আসলে নাটক করছে দল! আদালতে গিয়ে কুণাল দাবি করতে পারেন, তাঁর টাকা নিয়ে যে হেতু এখনও দলের কাজ হচ্ছে, তাই তিনি আদৌ সাসপেন্ডেড নন।” রাজ্য নেতা তথাগত রায় মনে করেন, নীতিগত ভাবে তৃণমূলের উচিত কুণালের টাকা ফেরত দেওয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE