Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Bolpur

বীরভূমের আড়াইশো বছরের পুরনো নীলকুঠিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার দাবি

ময়ূরাক্ষী এবং অজয় নদের জলপথ যোগাযোগের অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহার জন্য ১৭৭৫ সালে ব্রিটিশ বণিক এডওয়ার্ড হে গুনুটিয়ার নীলকুঠি নির্মাণ করেছিলেন।

গুনুটিয়া নীলকুঠির মিনার।

গুনুটিয়া নীলকুঠির মিনার। নিজস্ব চিত্র।

সন্তু হাজরা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২১ ১৮:২৭
Share: Save:

দাদন দিয়ে নীলচাষ এবং কৃষকদের অত্যাচারের ইতিহাস রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব জুড়ে। বীরভূমে জঙ্গলে ঘেরা গুনুটিয়ায় চাপা পড়ে রয়েছে এমনই এক ইতিহাস।

বোলপুর-লাভপুর সড়ক বরাবর কুয়ে নদী পার হয়ে লাভপুর থেকে লাঘাটা দিকে রওনা দিয়ে পৌছে যাওয়া ময়ূরাক্ষী নদীর কাছে। সেতু পার হলেই সামনে বিস্তীর্ণ জঙ্গল। আর তারই মাঝে জারাজীর্ণ একটি মিনার। জঙ্গলে আর একটু ঢুকলে রয়েছে নির্মাণ কাজের ইটের টুকরো। সেই ইট প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো গুনুটিয়ার নীলকুঠি মহলের নানা ইতিহাসের সাক্ষী। সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে ঘিরে এ বার পর্যটনকেন্দ্র গড়ার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।

বীরভূমের গুনুটিয়ার নীলকুঠির পরতে পরতে রয়েছে আরও নানা ইতিহাস। একদা বাংলার জলপথ বাণিজ্যের অন্যতম যোগসূত্র ছিল এই নীলকুটি। ময়ূরাক্ষী এবং অজয় নদের জলপথ যোগাযোগের অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহার জন্য ১৭৭৫ সালে ব্রিটিশ বণিক এডওয়ার্ড হে গুনুটিয়ার নীলকুঠি নির্মাণ করেছিলেন।

সে সময় আগে জলপথে যাতায়াতের সুবিধা, আবহাওয়া, কাঁচামাল, উর্বর জমির জন্য বীরভূম জেলায় লাক্ষা, তুঁত, রেশম, নীল চাষ ভালো হত। রেশম চাষের জন্য এডওয়ার্ড বীরভূমের লাভপুরে ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে গুনুটিয়া কুঠি তৈরি করে। প্রথম দিকে এখান থেকে রেশম, তুঁত প্রভৃতি চাষের তত্ত্বাবধান করা হলেও পরবর্তীকালে নীল চাষ শুরু হয়। তাই গুনুটিয়া কুঠি পরিচিতি পায় নীলকুঠি হিসেবেই।

১৭৮৫ সালে ফরাসি বণিক জেমস ফ্রুশার্ড ২০ হাজার টাকায় গুনুটিয়া কুঠি কিনে নেন। সে সময় কুঠির পরিধিও বৃদ্ধি পায়। এর পর ভারতে ব্রিটিশ সরকার আধিপত্য বাড়তে শুরু করে। ১৮০৮ সালে এই কুঠি ফের হাতবদল হয়ে যায় ব্রিটিশদের কাছে। কুঠির দায়িত্ব দেওয়া হয় জন চিপের হাত। ওই ব্যক্তি ছিলেন শান্তিনিকেতনের (তখনও নামকরণ হয়নি) সুরুল কুঠিবাড়ির মালিক। তাই লাভপুরের গুনুটিয়া কুঠির সঙ্গে সুরুল কুঠির জলপথে যোগাযোগ ছিল। জনের হাত ধরেই গুনুটিয়া কুঠির ব্যবসায়িক প্রসার বাড়তে থাকে। রেশম, তুঁত চাষের পাশাপাশি নীল চাষ শুরু হয় ময়ূরাক্ষী নদীর পাড় বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। অবিভক্ত বাংলার অন্যতম বৃহৎ নীলকুঠি ছিল গুনুটিয়া।

বর্তমানে ময়ূরাক্ষী নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ জঙ্গলের মধ্যে এই কুঠির ভগ্নাবশেষ পড়ে রয়েছে। মূল কুঠি-সহ একাধিক গোলাবাড়ি, জনের সমাধি, চাষের জন্য জলের ব্যবস্থা, নজরদারির জন্য মিনার সব কিছুই বর্তমান। তবে জরাজীর্ণ অবস্থায়। ইতিহাসবিদদের একাংশ এবং স্থানীয়দের দাবি, এই কুঠিটি সংস্কার করলে এটি জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। অধ্যাপক রামানুজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বীরভূমে নীল, রেশম প্রভৃতি চাষের প্রসার ঘটেছিল জন চিপের হাত ধরে। এই চিপ সাহেবের জন্যই গুনুটিয়া কুঠি বাণিজ্যে সমৃদ্ধ হয়েছিল। এখনও কুঠির নিদর্শন রয়েছে। এগুলো সংস্কার করলে পর্যটনের অন্যতম জায়গা হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Travel and Tourism forest Bolpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE