ভোট দেওয়ার পরে খান পরিবারের সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র
ভোট মানেই উৎসবের মেজাজ খান পরিবারে। সিউড়ির নগরী পঞ্চায়েতের পাথরচাপুড়ি গ্রামে কলু খানদের মস্ত পরিবার যেন একটা গোটা পাড়া। গ্রামের মানুষ এই পরিবারের নাম দিয়েছেন কলু গোষ্ঠী। কলু খান মারা গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরিরা এলাকায় পরিচিত তাঁর পরিচয়েই।
জন্মদিন, বিয়ে, ইদের মতো নির্বাচনেও পারিবারিক জমায়েত হয় খান পরিবারে। বছরের অন্য দিনগুলোতে হাঁড়ি আলাদা হলেও পরিবারের ২৭৩ জন সদস্য এই সব দিনে এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, মজলিশে মাতেন। সোমবারও তার অন্যথা হল না। ভোট নিয়ে এ দিন সকাল থেকে গোটা বীরভূমে যখন টানটান পরিস্থিতি, তখন কলু খানের পরিবারের ১৬১ জন সদস্য গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের ৮১ ও ৮২ নম্বর বুথ দু’টিতে লাইন দিয়েছেন। এত বড় পরিবারের এক সঙ্গে ভোট দিতে যাওয়া দেখে অবাক ভোটকর্মীরাও।
ভোট পর্ব মিটতেই বাড়ি ফিরে রান্নার তোড়জোড় করেছেন বেলি, জমিরা, আইভি, চায়না বিবিরা। সুগন্ধী চালের ভাত, ডাল, আলু পোস্ত, মুরগির মাংস আর চাটনি দিয়ে ভুরিভোজ হয়েছে। খান পরিবারে এখন সব থেকে প্রবীণ সত্তর ছুঁই ছুঁই সপুরা বিবি। আর ভোটার হিসেবে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, বছর আঠারোর বাদশা খান, কেনিজ খয়রুন্নিসা। সপুরা বিবির নাতি, নাতনি তাঁরা। প্রত্যেকেই এ দিন ভোট দিয়ে বেজায় খুশি। তাঁদের কথায়, ‘‘উন্নয়নের লক্ষ্যেই ভোট দিয়েছি। আমরা চাই, এলাকার আর যা কিছু উন্নয়নের পরিকল্পনা আছে, সেগুলো এ বার সম্পূর্ণ হোক।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ওই পরিবারের সদস্যদের মতে, ভোট নষ্ট করা মানে দেশকে ভুল পথে চালিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। ভোট নষ্ট না করার লক্ষ্যেই পরিবারের সকলে একত্রিত হয়ে ভোট দিতে যাওয়ার ভাবনা। গত কয়েকটি নির্বাচনেই খান পরিবারের এই ভোট উৎসবের কথা রাজনৈতিক দলগুলির স্থানীয় নেতা নেত্রীরাও জানেন। তাই ভোটের আগে তাঁদের সব দলই খাতির করেন। পরিবারের সদস্য জাকির আলি খান, মনসুব খান বলেন, ‘‘ইদ, মহরম বা অন্য উৎসব, অনুষ্ঠানে যেমন সকলেই বাড়ি ফেরেন, ঠিক একই রেওয়াজ ভোটের জন্য। সকাল থেকেই সবাই মিলে ভোট দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিলাম।’’ পরিবারের আর এক সদস্য আশরফ আলি খান বলেন, ‘‘বাবা, কাকা, পিসিরা কেউ বেঁচে নেই। আছেন শুধু চার জন কাকিমা। কলু খানের বংশ বিস্তারিত হয়ে এখন পঞ্চম পুরুষে পৌঁছেছে। প্রত্যেকেরই ভিন্ন মত, ভিন্ন জীবনধারা আছে। কিন্তু ভোট দেওয়া হয় একসঙ্গে।’’
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের রান্নাঘর আলাদা হলেও একত্রিত হওয়ার ভাবনায় কোনও ছেদ পড়েনি। তাই শুধু ভোট নয়, পরিবারের প্রতি সদস্যের জন্যই কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পরিবারের ছোটদের পড়াশোনা এবং স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা তহবিল আছে। যে পেশাতেই থাকুন না কেন, এই পরিবারের বড়রা ছোটদের জন্য নিয়মিত টাকা জমিয়ে তহবিল চালিয়ে যাচ্ছেন। জাকিরের কথায়, ‘‘কৃষিজীবী থেকে সরকারি বেসরকারি সংস্থার কর্মী, পড়ুয়া থেকে দিন মজুরি করে সংসার চালানো — এই পরিবারে সব রকমের মানুষ আছেন। বিপদ আপদে যাতে কেউ বিপাকে না পড়েন, তার জন্যই ওই তহবিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy