Advertisement
E-Paper

দিনভর দৌড়, বিকেলে তৃপ্ত দিলীপ, মেজাজ ভাল নেই মানসের

সব মিলিয়ে দিনের শেষে ভোট করিয়ে অত্যন্ত তৃপ্ত দিলীপ, এমনটাই দাবি কর্মী-সমর্থকদের।

দিনের শেষে খড়্গপুরে নিজের বাংলোয় দিলীপ ঘোষ। ছবি: মৃণালকান্তি হালদার।

দিনের শেষে খড়্গপুরে নিজের বাংলোয় দিলীপ ঘোষ। ছবি: মৃণালকান্তি হালদার।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ২১:৫৪
Share
Save

ঘাটাল এবং মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের পাশাপাশি দু’কেন্দ্রে রবিবার ভোটের দিন দেখা গেল সম্পূর্ণ দুই ভিন্ন চিত্র। ঘাটালে দিনভর বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের প্রতিটি পদক্ষেপ ঘিরে যখন ঝড় উঠছে কোনও না কোনও ভাবে, তখন তৃণমূল প্রার্থী দেবের নাম জড়াল না কোনও একটি ঝুট-ঝামেলার সঙ্গেও। মেদিনীপুরে আবার সকাল থেকেই প্রায় মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের একের পর এলাকা চষে বেড়ালেন মানস, একের পর এক অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেখানে কোথাও কোনও ঝামেলার রাস্তায় হাঁটলেন না দিলীপ। কোথাও উত্তেজনা কমাতে দলীয় কর্মীদের শান্ত করলেন, কোথাও আবার পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিজেই বেরিয়ে গেলেন এলাকা ছেড়ে। আর দিনের শেষে জানালেন, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই লিড পাওয়া নিয়ে নিশ্চিত তিনি।

মেদিনীপুরের নির্বাচনী লড়াইটা যে দু’পক্ষের কাছেই কঠিন, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল না কোনও রাজনৈতিক শিবিরেই। সেই কারণেই বর্তমান সাংসদ সন্ধ্যা রায়কে সরিয়ে দুঁদে রাজনীতিক মানস ভুঁইঞাকে প্রার্থী করে তৃণমূল। বিজেপির প্রার্থী খোদ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। হেভিওয়েট এই লড়াই নিয়েও ছিল উত্তেজনার আশঙ্কা। যদিও দিলীপ ঘোষ যে অন্য রকম ভাবছেন, সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল সকালেই। সতর্ক অবস্থাতেই দিনটা শুরু করেছিলেন দিলীপ। চোখে মুখে একটু উদ্বেগ ছিল। যদিও তা যেন অনেকটাই সচেতন ভাবেই নিশ্চিন্ত না-হতে চাওয়া।

অন্য দিকে, তাঁর প্রতিপক্ষ মানস ভুঁইঞাকে সকাল থেকেই দেখা গেল প্রচণ্ড উদ্বেগ নিয়ে ছোটাছুটি করতে। দাঁতন-১, দাঁতন-২, নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর— হেন জায়গা নেই, যেখানে পাওয়া গেল না মানসকে। দিনভর অভিযোগ আনলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও। দিনের শেষেও সেই উদ্বেগ থেকে বেরোতে পারলেন না মানস।

কতটা নিশ্চিত ছিলেন ছিলেন, তা বোঝা গেল দুপুর একটা নাগাদ হঠাৎই গোপীবল্লভপুরের দিকে দিলীপ ঘোষের কনভয় ঘুরে যাওয়ায়। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র মেদিনীপুর ছেড়ে পাশের কেন্দ্র ঝাড়গ্রামের দিকে রওনা দেন তিনি। নয়াগ্রাম ছাড়িয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গোপীবল্লভপুরের দিকে ছুটতে থাকা কনভয় অবশ্য মাঝে মধ্যেই থামল বিজেপি কর্মীদের বিভিন্ন ক্যাম্প অফিসে। এখানে বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম। সেখানকার ভোটের খবর নিতে নিতেই দিলীপ পৌঁছে যান নিজের পৈতৃক বাড়িতে। পরিবারের লোকের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বুথে ভোট দেন তিনি। তাঁর মা ঘোল খাইয়ে দিলেন দিলীপকে। কর্মী-সমর্থক ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে মধ্যাহ্ণভোজনটাও এখানেই সেরে নেন দিলীপ। তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।

অবশ্য উত্তেজনার আশঙ্কা যে একেবারেই ছিল না, তা নয়। বুথে বুথে ঘোরার ফাঁকেই মোহনপুরের রামপুরা বলে একটি এলাকায় বড়সড় হামলার মুখে পড়েন দিলীপ। সেখানে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর কনভয়ের উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একটি গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও গন্ডগোল বাড়তে দেননি দিলীপ।

বাংলা-ওড়িশা সীমানার সোনাকনিয়া থেকে দিলীপ খবর পান, দাঁতনের উঁচুডিহা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে বিজেপি কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। এর পরই নিরাপত্তারক্ষী, কর্মী-সমর্থক ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে তাঁর বিরাট কনভয় যায় উঁচুডিহার দিকে। সেখানে পৌঁছতেই বিজেপি কর্মীরা নেমে আসেন রাস্তায়। হামলাকারী প্রতিপক্ষ কোথায় লুকিয়ে আছে, সেই খবরও তাঁরা দেন দিলীপকে। কিন্তু কোনও ঝামেলার রাস্তায় না গিয়ে বুথে ঢুকে বুথকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন তিনি। কোনও ঝামেলায় না জড়াতে অনুরোধ করেন দলের কর্মী-সমর্থকদের।

আরও পড়ুন: বিজেপিকে ভোট দিতে বলার পাশাপাশি গুলিও চালাল কেন্দ্রীয় বাহিনী, অভিযোগ মমতার

মেদিনীপুর শহরের ধর্মাতেও তৈরি হয় উত্তেজনার পরিস্থিতি। দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে ছাপ্পা ভোট চলার অভিযোগ পেয়ে তিনি হাজির হন ত্রিনারায়ণ বিদ্যাভবনে। এখানে তাঁকে দেখেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। গেট আটকানোর চেষ্টা, তাঁকে ঘেরাও করার পাশাপাশি দেওয়া হল ‘গো ব্যাক দিলীপ ঘোষ’ আর ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান। উল্টো দিকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে হাজির ছিল বিজেপি ব্রিগেডও। তুমুল বিক্ষোভের মধ্যেও অবশ্য উত্তেজনা আর বাড়তে দেননি দিলীপ।

ধর্মায় দিলীপ ঘোষের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। ছবি: মৃণালকান্তি হালদার।

মেদিনীপুর শহরের নির্মল হৃদয় আশ্রমে ছাপ্পা ভোট পড়ার খবর ছিল দিলীপের কাছে। বিকেলে তিনি সেখানে পৌঁছতেই শুরু হয় উত্তেজনা। সেখান থেকে তাঁকে তাড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়। যদিও আগাগোড়াই হাসিমুখে ছিলেন দিলীপ। বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসতেই উড়ে এল ঢিল। এ বারও প্ররোচনায় পা না-দিয়ে এলাকা ছাড়েন তিনি।

এ সবের ফাঁকেই খড়্গপুরে চারটি বুথ দখল হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে বিজেপি। তৃণমূলের এক যুবনেতার মদতেই এই বুথদখল বলে জানায় তারা। ছিল পাল্টা অভিযোগও। মেদিনীপুর পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলর আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি কর্মী সমর্থকদের হাতে, এই নিয়েও সরগরম ছিল মেদিনীপুর শহরও।

শেষ বেলায় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ খড়্গপুরে নিজের বাংলোয় ফিরে আসেন দিলীপ ঘোষ। যদিও সরকারি ভাবে ভোট শেষ হওয়ার তখনও বাকি আরও আধ ঘণ্টা। এ বার সকালের সেই থমথমে ভাবটা উধাও। চোখেমুখে অসীম পরিতৃপ্তির ছাপ। নিজের বাংলোর সামনে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বসার ফাঁকেই মেতে উঠলেন মিডিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায়। বললেন, ‘‘মেদিনীপুরের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই লিড পাব আমি।’’ সব মিলিয়ে দিনের শেষে ভোট করিয়ে অত্যন্ত তৃপ্ত দিলীপ, এমনটাই দাবি কর্মী-সমর্থকদের।

আরও পড়ুন: রক্তাক্ত কেশপুরে চলল গুলি, স্লোগান উঠল ‘ভাগ ভারতী ভাগ’

অন্য দিকে তৃণমূল সূত্রে খবর, কাল রাত থেকেই মেজাজ বিগড়ে ছিল তৃণমূল নেতা মানস ভুঁইঞার। সকালেই চলে যান দাঁতনে। তাঁর কাছে খবর ছিল, সেখানে সমস্যা তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। দিনভর একের পর এলাকা চষে ফেললেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমল না একটুও। একে একে ঘুরতে থাকেন খাকুড়দা, এগরা-সহ বিভিন্ন জায়গায়। বার বার অভিযোগ তুললেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপির হয়ে কাজ করছে। ভোট শেষের পরেও বললেন, ‘‘ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে ওঁরা এখন ইভিএম লুঠ করার চেষ্টা করছে। সর্বত্রই হতে পারে। সতর্ক থাকতে হচ্ছে।’’

মেদিনীপুরের সাতটি আসনেই বিজেপি লিড পাচ্ছে— দিলীপ ঘোষের এই আত্মবিশ্বাসের কোনও ভিত্তি নেই, এমনটাই অবশ্য দাবি মানস ক্যাম্পের। দিলীপের দাবি শুনে চমকে উঠে জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি বললেন, ‘‘মাথা ঠিক আছে তো? মাটির দিকে তাকিয়ে চলে কিছু মানুষ। তাই আশপাশে কী আছে বুঝতে পারে না। দিলীপবাবুকে মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকাতে বলুন। তা হলে উনি বাস্তবটা বুঝতে পারবেন।’’

কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘ভারতী, দিলীপ প্ররোচনা ছড়িয়েছে। কিন্তু আমরা পা দিইনি, গোলমাল রুখে দিয়েছি। ঘাটাল, মেদিনীপুর দুই আসনেই জিতব আমরা।’’

লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Lok Sabha Election 2019 Manas Bhunia Dilip Ghosh Midnapur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}