Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্টেশনে নয়, মিষ্টি হাতে সিসিটিভি ফুটেজ অন্য কিছুই বলছে অর্ণব রহস্যে

অনেকের মতে, এই সিসিটিভি ফুটেজ অর্ণব রহস্য নিয়ে সিআইডি-র ‘ব্যাখ্যা’-কে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। যদিও এই সিসিটিভি ফুটেজের সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি। 

সিসিটিভি ফুটেজে অর্ণব।

সিসিটিভি ফুটেজে অর্ণব।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৫
Share: Save:

সিআইডি বলেছিল, কাজের চাপে পালিয়ে এসে টানা সাত দিন হাওড়া স্টেশনেই পড়ে ছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে নিখোঁজ, ইভিএমের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অর্ণব রায়। মোবাইল ফোনের সূত্রে খবর পেয়ে গোয়েন্দারা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন।

অথচ আনন্দবাজারের হাতে আসা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে অর্ণব একাই ঢুকছেন একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে। হাওড়ার শিবপুর ব্যাতাইতলায় ওই বাড়ির তিন তলার বাসিন্দা নবীন শর্মা জানান, গত তিন বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটেই থাকেন বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএসপি (ট্র্যাফিক) নির্মল যশ। তিনি অর্ণবের শ্বশুর।

অনেকের মতে, এই সিসিটিভি ফুটেজ অর্ণব রহস্য নিয়ে সিআইডি-র ‘ব্যাখ্যা’-কে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। যদিও এই সিসিটিভি ফুটেজের সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি।

গত ১৮ এপ্রিল কৃষ্ণনগরে নিজের কর্মস্থল থেকেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ডব্লিউবিসিএস অফিসার অর্ণব। দু’দিন পরে তাঁর স্ত্রী তথা সহকর্মী অনীশা যশ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, কেউ তাঁর স্বামীকে আটকে রেখেছে। তাঁর যুক্তি ছিল, কাজের চাপে পালিয়ে যাওয়ার লোক অর্ণব নন। এর আগেও তিনি একাধিক ভোটের দায়িত্ব সামলেছেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বৃহস্পতিবার ডিআইজি সিআইডি (অপারেশনস) নিশাত পারভেজ দাবি করেছিলেন, অর্ণবকে হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করেছে সিআইডি। তিনি সাত দিন ধরে ওই স্টেশনেই ছিলেন। মোবাইল ফোনের সূত্রে ধরে তাঁকে ‘উদ্ধার’ করা হয়। সকালেই তাঁকে সিআইডির সদর দফতর ভবানী ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ দিন বারবার চেষ্টা করেও নিশাত পারভেজকে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি তাঁকে পাঠানো মেসেজেরও।

প্রথম ফুটেজে দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটে মিষ্টির বাক্স নিয়ে একাই ফিরছেন অর্ণব রায়। দ্বিতীয় ফুটেজে আধ ঘণ্টা পরে তাঁকে দেখা গেল শ্বশুর নির্মল যশ এবং দুই অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে। তৃতীয় ফুটেজে দুপুর তিনটের সময়ে স্ত্রী অনীশাকে নিয়ে অর্ণবকে ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে দেখা যায়। চতুর্থ ফুটেজে রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে নীচে যেতে দেখা যায় অর্ণবকে। এই ফুটেজগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার।

কিন্তু সিসি ক্যামেরার যে ফুটেজ আনন্দবাজারের হাতে এসেছে, তার উপরে তারিখ রয়েছে ২৫ এপ্রিল। ওই ফুটেজে অনুযায়ী, অর্ণব বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটে ঢুকেছিলেন তাঁর হাওড়ার শ্বশুরবাড়ি, ৪৪০ নম্বর জি টি রোডে। গায়ে গাঢ় নীল শার্ট, কালো ট্রাউজার্স, সাদা স্নিকার্স। হাতে মিষ্টির প্যাকেট। মোবাইলে কথা বলতে বলতে তিনি সিঁড়ি দিয়ে উঠে যান ফ্ল্যাটবাড়ির চারতলায়। এই ফুটেজ সত্যি হলে প্রশ্ন উঠছে, যিনি সাত দিন হাওড়া স্টেশনে পড়েছিলেন, তিনি কেন হঠাৎ মিষ্টির বাক্স হাতে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে এলেন?

ওই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সকাল ৯টা ২ মিনিটে শ্বশুর নির্মল যশের সঙ্গে একই পোশাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন অর্ণব। ২০ মিনিট পর ফের দু’জন লোককে সঙ্গে নিয়ে তিনি ফিরে আসেন। নির্মলকে তাঁদের কাঁধে হাত দিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। বাড়ির নীচে দক্ষিণ দিকে এক টুকরো ফাঁকা জায়গার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি কিছু বলেন। এর পর ওই দুই ব্যক্তি বেরিয়ে যান। অর্ণব উপরে উঠে যান।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আরও দেখা যায়, অর্ণব আর তাঁর স্ত্রী অনীশা দুপুর ৩টে ৫ মিনিটে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা আবার ফিরে আসেন বিকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ। এর মধ্যে কোনও সময়ে তাঁরা ভবানী ভবনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গিয়েছিলেন বলে সিআইডি-র দাবি। ফের রাত ৮টা ৩৭ নাগাদ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হাতে মালপত্র নিয়ে ফ্ল্যাটের নীচে কাউকে পৌঁছে দিয়ে হাসতে-হাসতেই ফের উপরে উঠে আসছেন অর্ণব।

অনীশা ও নির্মল যশ দাবি করেছিলেন, অর্ণব কোনও পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। কারও কথায় তাঁকে কোথাও আটকে রাখা হয়েছিল। সাত দিন তিনি কোথায় ছিলেন, তা কেউ জানতেন না। তা হলে সিআইডি কী ভাবে বলল অর্ণব সাত দিন হাওড়া স্টেশনেই ছিলেন? তার পরে এতটা সুস্থ, স্বাভাবিক, হাসিখুশিই বা তিনি রইলেন কী করে? এত গোপনীয়তা কিসের, কোনও ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে কি না, কলকাতা ও কৃষ্ণনগরের অফিসার মহলেই সেই প্রশ্ন ঘোরাফে‌রা করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE