অর্ণবের স্ত্রী অনীশা যশ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
এত দিন ছিল নিজেই চলে যাওয়া। এ বার যোগ হল চক্রান্ত করে আটকে রাখার অভিযোগ।
নদিয়ায় ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট যন্ত্রের দায়িত্বে থাকা অফিসার অর্ণব রায়ের খোঁজ নেই চার দিন হয়ে গেল। তাঁকে ‘চক্রান্ত’ ও ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ করে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন তাঁর স্ত্রী অনীশা যশ। শনিবার রাত ১২টা নাগাদ কৃষ্ণনগরে কোতোয়ালি থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার সকালে তিনি পুলিশ সুপারের সঙ্গেও দেখা করতে আসেন। তবে দেখা হয়নি। এই বিষয়ে সমস্ত প্রশ্নই তিনি কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন। অনীশা শুধু বলেন, “আমি কিছু ভাবতে পারছি না। শুধু জানতে চাইছি, মানুষটা কোথায় আছে? কেমন আছে?”
আগের দিনই অনীশা বলেছিলেন, অর্ণব আদৌ মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন না। ফলে, কেন তিনি উধাও হয়ে যাবেন তা অনীশার বোধগম্য হচ্ছে না। যদিও প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত তাঁকে বকাঝকা করায় এবং দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় অর্ণব ভেঙে পড়েছিলেন। তার জেরেই গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সহকর্মীর হাতে দফতরের চাবির গোছা দিয়ে তিনি কৃষ্ণনগর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবে জেলাশাসক এবং অনীশা দু’জনেই বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে কে বা কারা তাঁকে চক্রান্ত করে আটকে রেখে থাকতে পারে, তা স্পষ্ট করে জানাননি অনীশা।
নদিয়া জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের নোডাল অফিসার অর্ণব রায় দক্ষ অফিসার বলেই কর্মক্ষেত্রে পরিচিত। এখনও ‘প্রবেশন’-এ থাকা ডব্লিউবিসিএস অফিসার অনীশা ছিলেন তাঁর সহকারী। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বার হওয়ার পরে অফিসের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে অর্ণবের ফোনে ছ’বার কথা হয়েছে। শেষ বার, দুপুর ২টোর একটু আগে তিনি তাড়াহুড়ো করে ফোন রেখে দেন। দুপুর ২টো ১৭ মিনিটে শান্তিপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় তাঁর মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ পাওয়া গিয়েছিল। তার পর থেকে মোবাইল বন্ধ। অনীশা জানিয়েছেন, শেষ বার যখন তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়, তিনি বাস বা ট্রেনের শব্দ পাননি। তা হলে? রহস্যটা থেকেই যাচ্ছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের খবর, সে দিন অর্ণবকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কৃষ্ণনগরে বিপিসিআইটি কলেজ চত্বরে। ফোনে কারও সঙ্গে নিচু গলায় কথা বলছিলেন তিনি। ওই কলেজের পাশেই জাতীয় সড়ক। তদন্তকারীদের প্রাথমিক ধারণা হয়েছিল, সেখান থেকেই বাসে তিনি কলকাতার দিকে গিয়েছেন। কিন্তু ওই কলেজের কাছে যেখান থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ে, সেখানে রাস্তার পাশের হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কিছু পাওয়া যায়নি। শান্তিপুরেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে কোনও সূত্রে মেলেনি। ইতিমধ্যে পুলিশ অর্ণবের সহপাঠী ও পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু এখনও তেমন কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি।
অনীশার বিশ্বাস, কেউ আটকে না রাখলে অর্ণব এত দিন কোনও খবর না দিয়ে আত্মগোপন করে থাকতে পারেন না। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, সাধারণত শহর ছেড়ে দূরে কোথাও যেতে হলে অর্ণব যে সাদা জুতো পরতেন, সে দিনও সেই জুতোই পরে গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, নিজের ইচ্ছায় শহর না ছাড়লে দফতরের কর্মীর হাতে চাবি দিয়ে যাবেন কেন, সেই প্রশ্নও তাঁদের ভাবাচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “অপহরণ বা আত্মগোপন— দুটো সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু কোনওটারই কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেনই বা তাঁকে অপহরণ করা হবে আর কেনই বা তিনি আত্মগোপন করে থাকবেন এত দিন?”
তবে রাজনৈতিক জলঘোলাও শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। তৃণমূল-বিরোধীদের একাংশের দাবি, জেলাশাসকের ঘাড় থেকে দায় ঝাড়তেই এখন অপহরণ বা আটকে রাখার ‘গল্প’ ফাঁদা হচ্ছে। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “আমরা শুনেছি, ইভিএমে কারচুপি করার জন্য ওই অফিসারের উপরে চাপ সৃষ্টি করছিল শাসক দল ও প্রশাসনের একটা অংশ। ঘটনাটি তারই পরিণতি।’’ জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত অবশ্য বলেন, “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ।” জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ সব কষ্টকল্পিত অভিযোগের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনই বোধ করি না।’’
ঘটনাচক্রে, আজ, সোমবার কৃষ্ণনগরে জনসভা করতে আসছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মহাদেব বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কানে তুলব। আমরা চাই, কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থাকে দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করানো হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy