Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
West Bengal

প্রয়াত মহাশ্বেতা দেবী (১৯২৬-২০১৬)

প্রয়াত মহাশ্বেতা দেবী। দীর্ঘ রোগভোগের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বিশিষ্ট এই সাহিত্যিকের বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

মহাশ্বেতা দেবী। —ফাইল চিত্র।

মহাশ্বেতা দেবী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ১৬:০১
Share: Save:

প্রয়াত মহাশ্বেতা দেবী। দীর্ঘ রোগভোগের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বিশিষ্ট এই সাহিত্যিকের বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

Advertisement

দুপুর ৩টে ১৬ মিনিটে লেখিকার মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘ দিন তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা তো চিলই। শ্বাসকষ্টেও ভুগছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। তাঁর মৃত্যু সংবাদে গভীর শোকের ছায়া নেমেছে গোটা বাংলায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে এক শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘‘ভারত এক মহান লেখিকাকে হারাল, বাংলা এক মহান মাকে হারাল। আমি এক জন ব্যক্তিগত পথপ্রদর্শককে হারালাম। মহাশ্বেতা দি শান্তিতে থাকুন।’’ মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ দিন দিল্লি থেকে কলকাতা ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুধু বাংলায় নয়, বর্তমান সময়ে ভারতের সবচেয়ে প্রবীণ সাহিত্যিকদের অন্যতম ছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। গোটা দেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে সমসাময়িক কালে সবচেয়ে সম্মানিত নামগুলির অন্যতমও ছিলেন তিনি। জ্ঞানপীঠ, পদ্মশ্রী, পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানও দিয়েছিল। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। পেয়েছিলেন ম্যাগসেসে পুরস্কারও।

মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুর খবর ছড়াতেই এ দিন শোকস্তব্ধ মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছে দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালটিতে। অনুরাগী, সাধারণ মানুষ তো বটেই, রাজ্যের মন্ত্রী, শিল্পী, সাহিত্যিকরাও একে একে হাসপাতালে পৌঁছন। শোকবার্তা আসতে শুরু করে গোটা দেশ থেকে। সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রের জগৎ থেকে তো বটেই, রাজনৈতিক শিবির থেকেও অনেকে শোক জ্ঞাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও লেখিকার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘সমবেদনা, সাম্য এবং ন্যায়ের কণ্ঠস্বর আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, গভীর ভাবে শোকাহত।’’

Advertisement

১৯২৬ সালে জন্ম। পারিবারিক ভাবেই যোগ শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যের জগতের সঙ্গে। প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং সাহিত্যিক মণীশ ঘটকের কন্যা মহাশ্বেতা দেবীর পড়াশোনা শুরু ঢাকায়। পরে বিশ্বভারতীতে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মা ধরিত্রী দেবীও লেখক তথা সমাজকর্মী ছিলেন। নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। তবে ১৯৫৯ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিজন-মহাশ্বেতার পুত্র নবারুণ ভট্টাচার্যও ছিলেন নামী লেখক। তবে বিজন ভট্টাচার্য এবং নবারুণ ভট্টাচার্য মহাশ্বেতার আগেই প্রয়াত হয়েছেন। ঘটনাচক্রে মহাশ্বেতা দেবী এমন একটি তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন, যার ঠিক তিন দিন পরেই পুত্র নবারুণের মৃত্যুবার্ষিকী।

সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি অধ্যাপনা এবং সামাজিক আন্দোলনও চালিয়ে গিয়েছেন সমান তালে। অনগ্রসর শ্রেণির জন্য তাঁর লড়াই চিরস্মরণীয়। আদিবাসীদের মধ্যে, বিশেষ করে লোধা ও শবরদের মধ্যে মহাশ্বেতা দেবীর কাজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও আদায় করে নিয়েছে। ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘অগ্নিগর্ভ’, ‘তিতুমির’, ‘হাজার চুরাশির মা’ সহ তাঁর একাধিক সৃষ্টি চিরন্তন হয়ে গিয়েছে বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যে। তাঁর একাধিক রচনা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার জয়ী ছবি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামীকাল, শুক্রবার লেখিকার দেহ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা ৩০ অবধি রবীন্দ্র সদনে রাখা থাকবে৷ অনুরাগীরা সেখানেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন৷ তার পর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে৷

আরও দেখুন: স্মৃতির পাতায় মহাশ্বেতা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.