Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
কারখানায় বিস্ফোরণ, জখম ২

উৎসবের বাজি, ভোটের বোমা এক আঁতুড়েই

কলকাতায় হাজার কিলোগ্রাম বিস্ফোরক পাচারের তদন্তে নেমে জেলায় জেলায় বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরির কথাই উঠে আসছে গোয়েন্দাদের কাছে।

কলকাতার টালা ব্রিজ থেকে একটা মিনি ট্রাককে পুলিশ আটক করে। যাতে এক হাজার কেজি পটাশিয়াম নাইট্রেট ছিল। ফাইল চিত্র।

কলকাতার টালা ব্রিজ থেকে একটা মিনি ট্রাককে পুলিশ আটক করে। যাতে এক হাজার কেজি পটাশিয়াম নাইট্রেট ছিল। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

আস্তানা এক। মজুরেরাও অভিন্ন। সময়বিশেষে শুধু বদলে যায় পণ্য! উৎসবে যদি হয় আতসবাজি, ভোটের সময় তেমনই বোমা! এবং সেই বোমা এবং বাজি তৈরির ব্যাপারটা দক্ষিণবঙ্গের কিছু এলাকায় কুটির শিল্পের চেহারা নিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ গোয়েন্দাদের একাংশের।

কলকাতায় হাজার কিলোগ্রাম বিস্ফোরক পাচারের তদন্তে নেমে জেলায় জেলায় বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরির কথাই উঠে আসছে গোয়েন্দাদের কাছে। রবিবার সেই সন্দেহকে জোরালো করেছে দক্ষিণ শহরতলির বলরামপুরের একটি ঘটনা। পুলিশের দাবি, বলরামপুরে একটি অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে দু’জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। ওই এলাকায় বেআইনি শব্দবাজির একাধিক কারখানা রয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, দুষ্কৃতীদের হাতবোমা তৈরির জন্য মজুত করা মশলাতেই বিস্ফোরণ হয়।

পুলিশি সূত্রের দাবি, নজরদারদের এড়াতে ভিন্‌ রাজ্যের দোকান থেকে বিস্ফোরক কেনা হচ্ছে। নিয়ম মেনে বৈধ দোকান থেকে বিস্ফোরক কিনতে হলে নথি প্রয়োজন হয়। কিন্তু শুক্রবার রাতে পটাশিয়াম নাইট্রেট এসেছিল ওড়িশার বালেশ্বরের রূপসা শহরের ‘সাই ট্রেডার্স’ নামে একটি বৈধ দোকান থেকে। ওই দোকানের মালিকেরা ২০১১ সালে লাইসেন্স পেয়েছিলেন। সেই বৈধ দোকানের অবৈধ লেনদেনে মধ্যস্থতা করেন পূর্ব মেদিনীপুরের এক বাসিন্দা। রবিবার রাত পর্যন্ত তাঁকে ধরতে পারেনি কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ওই দোকান থেকে আগেও বিস্ফোরক রাসায়নিক কিনে এ রাজ্যে পাচার করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে টালা সেতুতে এক হাজার কিলোগ্রাম পটাশিয়াম নাইট্রেট-সহ একটি ম্যাটাডর ভ্যান আটক করা হয়। গ্রেফতার করা হয় চালক ও খালাসিকে। পরে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে রবিউল ইসলাম নামে আরও এক জনকে পাকড়াও করা হয়। সে আদতে উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। ওই এক হাজার কিলোগ্রাম মশলা থেকে কয়েক লক্ষ হাতবোমা তৈরি করা সম্ভব বলে পুলিশি সূত্রে জানানো হয়েছে।

এক পুলিশকর্তার দাবি, বোমার মশলার জন্য গন্ধকের সঙ্গে সঙ্গে মূলত পটাশিয়াম নাইট্রেট এবং পটাশিয়াম ক্লোরেটের মতো রাসায়নিক মজুত করা হয়। বাজি-শ্রমিকদের ভাষায় যা ‘লাল ও সাদা মশলা’। এই সব মশলা একসঙ্গে রাখলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই সেগুলো আলাদা ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার রাতে যে-আস্তানায় পটাশিয়াম নাইট্রেট পাচার করা হচ্ছিল, সেখানে আগে অন্য কোনও বিস্ফোরক তৈরির উপাদান পাঠানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, এই ধরনের আস্তানা সাময়িক। প্রথমে এক জায়গায় মজুত করে সেখান থেকে অন্য কয়েকটি জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এক জায়গায় এক হাজার কিলোগ্রাম বারুদ মজুত করা হয় না। কারণ, কোনও ভাবে বিস্ফোরণ ঘটলে বড় বিপদ হতে পারে। এক পুলিশকর্তার মতে, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এই ধরনের কিছু অস্থায়ী বোমা কারখানা রয়েছে। পুলিশি সক্রিয়তার আঁচ পেলেই সেগুলি গুটিয়ে ফেলা হয়।

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, বোমার খদ্দের মূলত রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীরা। ভোটের আগে-পরে এলাকা দখলের হাতিয়ার এই হাতবোমা বা পেটো। লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই ওই সব মশলা কেনা হচ্ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সাই ট্রেডার্সের মালিক সুকান্ত সাহুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ক্রেতাদের ব্যাপারে সূত্র মিলতে পারে। এই বিষয়ে বালেশ্বরের পুলিশের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE