সরকারি খাতায় কো-এড স্কুল। অথচ, বীরভূমের খয়রাশোলের বড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য সপ্তাহে তিন দিন আলাদা করে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা দফতরকে অন্ধকারে রেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলেন কী করে, উঠছে সে প্রশ্নও।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাসের কথায়, ‘‘এ ভাবে পড়ুয়াদের জন্য দিন ভাগ করা যায় না।’’ ঘটনা জেনে রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় সরাসরি ফোন করেন বীরভূমের জেলা স্কুল পরিদর্শককে। কল্যাণময়বাবুর আশ্বাস, কাল, সোমবার থেকে আগের মতোই এক সঙ্গে ক্লাস হবে।
শতাব্দী প্রাচীন এই স্কুলে পড়ুয়া প্রায় ২,৬০০। শিক্ষক-শিক্ষিকা ৩১ জন। একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ২৩৬ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২৩০ জন। ওই দুই শ্রেণিতেই মেয়েরা সংখ্যায় বেশি। স্কুল সূত্রের দাবি, একটি ক্লাসঘরে এত জনকে পড়াতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। সমস্যা বাড়িয়ে দেয় কিছু ছাত্র। তাদের বিরুদ্ধে ক্লাসের মধ্যে মেয়েদের বিরক্ত করা, অশালীন মন্তব্য করা, আপত্তি করলেও মোবাইলে মেয়েদের ছবি তোলার মতো অভিযোগ নিয়মিত পাচ্ছিলেন শিক্ষকেরা। কিন্তু ছাত্রদের বকে-বুঝিয়ে কাজ হচ্ছিল না বলে দাবি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন অধিকারী বলেন, ‘‘গত বছরও একই ধরনের পরিস্থিতি হওয়ায় দিন কয়েক ক্লাস সাসপেন্ড করতে হয়েছিল। এ বার প্রথমে কিছু ছাত্রকে সতর্ক করা হয়েছিল। তাতেও ফল না হওয়ায় অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করে আলাদা ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’’ গত পনেরো দিন সোম-মঙ্গল-বুধবার ছেলেরা এবং বৃহস্পতি-শুক্র-শনিবার মেয়েরা ক্লাস করছিল।
তাতে কি কাজ হয়েছে? একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির একাধিক ছাত্রীর বক্তব্য, ‘‘ক্লাসে ঢুকে কিছুটা স্বস্তি হচ্ছে। কারণ, কয়েকটা ছেলের জন্য ক্লাস করাই দায় হয়ে উঠেছিল। চিন্তা হচ্ছে, সিলেবাস শেষ হবে কি না।’’ চিন্তায় অভিভাবকদের বড় অংশও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বদ ছেলেপুলেরা স্কুলের বাইরেও মেয়েদের বিপদে ফেলতে পারে!’’ তাঁদের দাবি, ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া উচিত ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক বলছেন, ‘‘আলাদা করে পড়ানোর এই সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘পরিস্থিতি সামলাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ কী করছেন, শিক্ষা দফতরকে কেন জানাননি, বুঝতে পারছি না!’’ প্রধান শিক্ষকের জবাব, ‘‘সাময়িক সিদ্ধান্ত। তাই আর...।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy