Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছোট বক্তৃতায় খাগড়াগড়ের নামই নিলেন না মুখ্যমন্ত্রী

ঘটনার পক্ষকাল পরে প্রথম বার জনসমক্ষে বক্তৃতা। তবুও বর্ধমানে-বিস্ফোরণ ও তার পরের ঘটনাবলি নিয়ে একটি শব্দও শোনা গেল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে! রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ বা নিন্দা না করে ফেসবুকে শুধুই কেন্দ্র বা বিজেপি-বিরোধী তোপে নিজেকে আটকে রেখেছেন মমতা। ঝাড়গ্রামে বৃহস্পতিবারও সেই ধারায় ছেদ পড়ল না! মেরেকেটে মিনিট দশেক মুখ্যমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত এবং অগোছালো বক্তব্যেরই সাক্ষী থাকল ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম।

ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

ঘটনার পক্ষকাল পরে প্রথম বার জনসমক্ষে বক্তৃতা। তবুও বর্ধমানে-বিস্ফোরণ ও তার পরের ঘটনাবলি নিয়ে একটি শব্দও শোনা গেল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে!

রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ বা নিন্দা না করে ফেসবুকে শুধুই কেন্দ্র বা বিজেপি-বিরোধী তোপে নিজেকে আটকে রেখেছেন মমতা। ঝাড়গ্রামে বৃহস্পতিবারও সেই ধারায় ছেদ পড়ল না! মেরেকেটে মিনিট দশেক মুখ্যমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত এবং অগোছালো বক্তব্যেরই সাক্ষী থাকল ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম।

দুর্গাপুজো ও ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। মঞ্চে তিনি মানেই দীর্ঘ বক্তব্য, খোশমেজাজে খুঁটিনাটি নানা কথা বলা ‘মমতা-সুলভ’ এই সব দৃশ্যের কোনও কিছুই এ দিন দেখা যায়নি। উল্টে অন্যমনস্কই দেখিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। নাচ-গান দেখতে দেখতে এক-দু’বার হেসেছেন বটে। তবে দ্রুত সে হাসি মিলিয়েও গিয়েছে। মগ্ন হয়েছেন মোবাইলে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিনও খাগড়াগড়-কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতা ভাঙেনি। শুভেচ্ছা বিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে কোনও শব্দব্যয় করেননি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী। বলা ভাল, সাংবাদিকদের এ নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশই দেননি মমতা! রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসের জাল কাটতে তদন্তে নেমেছে একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে এনআইএ, এনএসজি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এত কিছুর পরেও মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতা ক্রমশই বিস্ময় বাড়িয়ে তুলছে! বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ যেমন কটাক্ষ করেছেন, “খাগড়াগড় হোক বা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, এ সব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আদৌ চিন্তিত নন। বিভিন্ন কাণ্ডে তাঁর দলের লোকজনের নাম জড়ানো নিয়েই তিনি বেশি চিন্তিত! সেই সঙ্গে তাঁর ভাবনা বিজেপি-র উত্থান।” কড়া নিরাপত্তায় স্টেডিয়ামের ঘেরাটোপে পুলিশের অনুষ্ঠানে মমতার উপস্থিতি নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি রাহুলবাবু। তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।”

ঝাড়গ্রামের সভাতেও এ দিন বিজেপি-কে কৌশলে আক্রমণ করতে ছাড়েননি তৃণমূল নেত্রী। বিজেপি-র নাম না করেই তিনি বলেন, “কিছু দুষ্টচক্র মানুষে মানুষে বিভেদ ঘটানোর চেষ্টা করছে, অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে। যারা এ ভাবে বিভেদ তৈরি করে, তারা সাময়িক রাজনৈতিক স্বার্থে তা করে। আমরা বাংলার মাটিকে বিভক্ত করতে দেব না, দাঙ্গার রক্ত বইতে দেব না।” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, মৃত্যু নয় জীবন চাই, ধ্বংস নয় সৃষ্টি চাই এটাই আমাদের স্লোগান।”

বুধবার সন্ধ্যাতেই ঝাড়গ্রামে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ প্রথমে ঝাড়গ্রাম পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিজি জিএমপি রেড্ডি-সহ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও বিভিন্ন দফতরের সচিবেরা। জেলাশাসক, সভাধিপতি ও অন্য আধিকারিকরাও ছিলেন। প্রশাসনিক বৈঠকে মাওবাদী শব্দটি ব্যবহার করেননি মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এক নাগাড়ে তাঁর সরকারের আমলে জঙ্গলমহল-সহ গোটা রাজ্যে কী ‘উন্নয়ন’ চলছে, কত ক্ষেত্রে রাজ্য এক নম্বর হয়েছে, তার ফিরিস্তি দিয়েছেন। সেখানে নিজে খাগড়াগড় তোলেননি, সাংবাদিকদেরও তুলতে দেননি!

ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের সভায় জেলার বিভিন্ন পুজো কমিটি, ঈদ কমিটি, বিভিন্ন ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রতিনিধি মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন। জঙ্গলমহল জুড়ে নির্বিঘ্নে দুর্গাপুজো ও ঈদ পালনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। মনে করিয়ে দেন, একটা সময় জঙ্গলমহলে অশান্তির জেরে কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল উৎসবের পরিবেশ। মমতার কথায়, “ঘরে শান্তি থাকলে, মনে শান্তি থাকলে, সব কিছুই ভাল হয়।”

যদিও বর্ধমান-কাণ্ডের জেরেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, “ঘরে শান্তি কোথায়?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE