Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মনুয়া এমন? বিশ্বাস হচ্ছে না মামার

জমাট রক্তের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত এক দেহ। মেঝের উপরে পড়ে থাকা শরীরের পা দু’টি দেখেই জামাইবাবুকে চিনতে পেরেছিলেন তিনি। দেখেই ছিটকে বেরিয়ে আসেন। শরীর খারাপ লাগতে থাকে।

মনুয়া মজুমদার এবং তাঁর মামা সব্যসাচী দাস। —নিজস্ব চিত্র।

মনুয়া মজুমদার এবং তাঁর মামা সব্যসাচী দাস। —নিজস্ব চিত্র।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
বারাসত শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০৩:১৩
Share: Save:

জমাট রক্তের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত এক দেহ। মেঝের উপরে পড়ে থাকা শরীরের পা দু’টি দেখেই জামাইবাবুকে চিনতে পেরেছিলেন তিনি। দেখেই ছিটকে বেরিয়ে আসেন। শরীর খারাপ লাগতে থাকে। কোনও মতে বাড়ি ও পাড়ার লোকেদের খুনের খবরটা দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার এই প্রথম সংবাদমাধ্যমের কাছে সব কথা খুলে বললেন সবসাচী দাস ওরফে বুবাই, নিহত অনুপম সিংহের দেহ যিনি প্রথম দেখেছিলেন।

সম্পর্কে মনুয়ার মামা হন বুবাই। কিন্তু বয়সে ছোট বলে মনুয়াকে দিদি ডাকেন। বুবাইয়ের কথায়, ‘‘আমরা দু’জনে হরিহর-আত্মা ছিলাম।’’ বুবাইও নৃত্যশিল্পী। মনুয়ার সঙ্গে বুবাই অনেক নাচের অনুষ্ঠানও করেছেন। খুনের পরে, ধরা পড়ার দু’দিন আগে পর্যন্তও মনুয়াদের বাড়িতে একসঙ্গে কাটিয়েছেন দু’জন। সেই মনুয়ার মধ্যেই যে এমন এক জন অপরাধী লুকিয়ে ছিল, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না আতঙ্কিত বুবাই। তাঁর কথায়, ‘‘ওকে দেখে ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারিনি কিছু। অদ্ভূত লাগছে!’’

বুবাইয়ের দাবি, খুনের পরদিন, ৪ মে সকালে তাঁকেই ফোন করেছিল মনুয়া। বুবাই বলেন, ‘‘আমাকে ফোন করে মনুয়া বলে, অনুপমকে ফোনে পাচ্ছি না। বাড়ি গিয়ে আমাকে ফোন করতে বল তো।’’ বুবাইয়ের বাড়ি থেকে অনুপমদের বাড়ি পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। বুবাই বলেন, ‘‘কলিং বেল বাজাই। ডাকাডাকি করি। কিন্তু সাড়া পাই না। দেখি, গেট খোলা। লোহার দরজাটাও সামান্য ফাঁক করা। ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। মাথা ঘুরতে থাকে। দেখি, সারা শরীরটা পুরো ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে।’’

খুনের দিন মনুয়া যখন প্রেমিক অজিত রায়ের সঙ্গে অনুপমের ঘরে কাটাচ্ছিল, তখন মনুয়াকে ফোন করেছিলেন বুবাই। ফোন কেটে দেয় মনুয়া। বুবাই বলে, ‘‘কিছু ক্ষণ পরে ও ফোন করে। বলে, অফিসের মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বাড়ি ফিরছি। পরে কথা হবে।’’ এর পরের ফোনটি আসে পরদিন সকালে।

অনুপম যে খুন হয়েছে, সে কথা বুবাইয়ের পরিবারই ফোনে মনুয়ার মাকে জানায়। বুবাইয়ের কথায়, ‘‘খবরটা শোনার পর থেকে মনুয়াদি ভেঙে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছিল। আমরা খুব ভাল বন্ধু বলে আমার বাড়ির লোক ঘটনার পর থেকে ওদের বাড়ি গিয়ে থাকতে বলে।’’ গ্রেফতারের দু’দিন আগে পর্যন্ত দিন দশেক
ধরে মনুয়ার ছায়াসঙ্গী ছিলেন বুবাই। এর পরে একটি অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে চলে যান। সেখানে থাকতেই সব কথা জানতে পারেন তিনি। অনুপমের বিরুদ্ধে কখনও কিছু বলেনি মনুয়া? বুবাই বলেন, ‘‘ঝামেলা হয়েছে, এসে কান্নাকাটি করেছে। আবার স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। আমিও ভাবছি, যদি এ সবের বিন্দুমাত্র আভাস পেতাম, তা হলে বোঝাতেও তো পারতাম।’’

আরও পড়ুন:সুপারি কিলারে খরচ নয়, তাই খুনি অজিত

খুনের পরে খুনির সঙ্গে একসঙ্গে ১০ দিন! সেই সময়ে মনুয়ার কোনও অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি? বুবাই বলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, আমি এখনও ভাবতে পারছি না! মারা যাওয়ার পরে ওর কান্নাকাটি, বিলাপ— এ সব ভাবলে আমার এখন কষ্ট হচ্ছে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’’ এর পরে চোখ-মুখ বদলে যায় বুবাইয়ের। মুখ ঢেকে বলেন, ‘‘এখন আমার একা থাকতে ভয় করছে। আবার কেউ বোঝাতে এলে তাঁকেও বিশ্বাস হচ্ছে না। পরিবারের কেউ হলেও।’’

এই সঙ্কটে ভুগছে মনুয়ার পরিবারও। মনুয়া ধরা পড়ার পর থেকে বাড়িছাড়া মা-বাবা।
রানিগঞ্জ থেকে বারাসতের নবপল্লির বাড়ি সামলাচ্ছেন মনুয়ার এক কাকা, মির হালদার। এ দিন তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘জন্ম থেকে মনুয়াকে দেখছি। জন্মদাতা মা-বাবাও যদি কোনও দিন কিছু বুঝতে না পেরে থাকে, আমরা কী করে বুঝব বলুন?’’ পরে তিনি বলেন, ‘‘মনুয়া ওর মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদেরও লজ্জা। ‘ভাল মেয়ে’, এই মুখোশের আড়ালে এমন নোংরা কাজ করবে কে ভেবেছিল? ও তো পরিবারটাকেও খুন করে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Manua Majumdar Anupam Sinha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE