Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না-হয়’

হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরে বিকেলে বাড়ি ফেরা।

উরির হামলায় নিহত বিশ্বজিতের ছবি নিয়ে বাবা-মা-বোন। —নিজস্ব চিত্র।

উরির হামলায় নিহত বিশ্বজিতের ছবি নিয়ে বাবা-মা-বোন। —নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
সাগর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৭
Share: Save:

প্রতি ভোরে বাড়ির উঠোনে জাতীয় পতাকা তোলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষটি। তারপর বেরিয়ে পড়েন দিনমজুরির কাজে। হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরে বিকেলে বাড়ি ফেরা।

দু’বছর ধরে এটাই ‘রুটিন’ সাগরের সূর্যবিন্দা গ্রামের রবীন্দ্রনাথ ঘোড়াইয়ের। কবে দিন পাল্টাবে জানেন না। স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছে দু’বছর আগে। জঙ্গিদের গুলি-গ্রেনেড কেড়ে নিয়েছে উরির সেনা ছাউনিতে থাকা তাঁর ছোট ছেলে বিশ্বজিতের প্রাণ। রাজ্যের দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য এবং সেনাবাহিনী থেকে বিশ্বজিতের পাওনাগণ্ডা ছাড়া আর কিছুই মেলেনি বলে ক্ষোভ রবীন্দ্রনাথের। কিন্তু পুলওয়ামায় জঙ্গি-হানার কথা জানার পরে সেই ক্ষোভ সরিয়ে রাগে ফেটে পড়ে ঘোড়াই পরিবার।

বিশ্বজিতের মা রেখাদেবী বলেন, ‘‘আমার মতো আবার কত মায়ের কোল খালি করল জঙ্গিরা। এর বিহিত চাই।’’ তাঁর বড় ছেলে রণজিৎ বলেন, ‘‘কোনও দয়া না-দেখিয়ে কেন্দ্রের উচিত জঙ্গিদের কড়া জবাব দেওয়া।’’

আরও পড়ুন: ভাল স্কুলে পড়া হল না সন্তানদের

তিন ভাইবোনের মধ্যে বিশ্বজিৎ ছিলেন মেজো। ২০১৪ সালে বিএ প্রথম বর্ষে পড়ার সময়েই সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দেন। সুখের মুখ দেখে পরিবার। শুরু হয় স্বপ্ন দেখা। কিন্তু দু’বছর পরে, ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে সব শেষ। উরিতে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান বছর বাইশের বিশ্বজিৎ। ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্বজিতের দেহ পৌঁছয় বাড়িতে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গোটা সাগরদ্বীপের মানুষ ভিড় করেছিলেন। সেনা জওয়ানরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে গান স্যালুট দেন। নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ওই বাড়িতে এসেছিলেন কলকাতার তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা। রণজিতের অভিযোগ, ‘‘বঙ্কিমবাবুরা আমাদের পরিবারের পাশে থাকা, এক জনের সরকারি চাকরি, দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং গঙ্গাসাগরে সরকারি উদ্যোগে ভাইয়ের মূর্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ক্ষতিপূরণের টাকা মিললেও বাকি প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। চাকরির আশায় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি।’’ অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন বিধায়ক বঙ্কিমবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘মূর্তি বসানো নিয়ে কোনও কথা দেওয়া হয়নি। ওই পরিবারের জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ওঁরাই রাজি হননি।’’ এ কথা আবার রণজিৎ মানছেন না। তিনিও দিনমজুরি করেই চালাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সেনাবাহিনী চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমার বয়স বেশি হওয়ায় হয়নি।’’

আরও পড়ুন: তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে অতীতের আতঙ্ক

ক্ষোভ থাকলেও রবীন্দ্রনাথ আর এ সব নিয়ে ভাবেন না। তাঁর মনে পড়ে ছোট ছেলের কথা। রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘জাতীয় পতাকা তোলার সময় ওর মুখটা মনে পড়ে।’’ রেখাদেবী চান, ছেলের মূর্তিটা অন্তত বসানো হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE