বিশৃঙ্খলায় অসুস্থ মহিলা।—ছবি পিটিআই।
কাজ পরে করবেন, আগে বাচ্চাটাকে ধরুন। প্রেস বক্সের সামনে এসে আর্ত চিৎকার করে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক।
ঘটনাস্থল, ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থল। মঞ্চের সামনে সাংবাদিকদের জন্য তৈরি করা বেষ্টনীর ব্যারিকেড ততক্ষণে ভেঙে গিয়েছে। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ঢোকার চেষ্টা করছেন সে দিকে। তারই মধ্যে টাল সামলাতে সামলাতে হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকা বছর চারেকের একটি শিশুকে কোনও মতে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন এক বৃদ্ধ। শেষ পর্যন্ত এক সাংবাদিকের জিম্মায় সেই শিশুটিকে রেখে জনতার স্রোতে মঞ্চের দিকে ভেসে গেলেন তিনি।
মিনিট পনেরো পরে জনতার ওই স্রোতের ভিতর থেকেই বাচ্চাটির দিকে কোনও মতে এগিয়ে এলেন ওর বাবা। বাচ্চাকে নিয়ে উঠে পড়লেন চিত্রগ্রাহকদের জন্য তৈরি হওয়া ডায়াসে। নাম জানা হয়নি তাঁদের।
আরও পড়ুন: বাস থামিয়ে ভাঙচুর, মার
কারণ, ততক্ষণে অনতি দূরে ভাঙা ব্যারিকেডের বাঁশে ঠেস দিয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন গিরিশ পার্কের গার্গী। জলের ছিটেয় জ্ঞান ফেরার পর তাঁর আর্তি, ‘‘মোদীকে দেখতে এসেছিলাম। আর আসব না। একটু ট্রেনে তুলে দেবেন?’’
প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ী চপার তখন পাক খাচ্ছে ভাঙা সভার উপরে। নীচে, মঞ্চের সামনে নিরাপত্তা বেষ্টনীর গালিচায় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে অশোকনগরের শিপ্রা ভট্টাচার্য। বছর ষাটের শিপ্রা বিজেপি করেন না। দেখতে এসেছিলেন মোদীকে। সঙ্গী প্রতিবেশীর হাহাকার, ‘‘বারণ করেছিলাম আসতে। কী হবে এবার?’’
আরও পড়ুন: বাংলায় পরিবর্তন নিশ্চিত, সভা থেকেই বড় চ্যালেঞ্জ মোদীর, নস্যাৎ মমতার
মঞ্চের পিছনের ছবি তখন আরও ভয়াবহ। এসপিজি কর্মীরা তখনও কাজ গুটিয়ে উঠতে পারেননি। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ সেখানে হাজির হয়েছেন প্রাথমিক চিকিৎসার খোঁজে। কারও চোট লেগেছে। কেউ ভুগছেন ট্রমায়। অসংখ্য মানুষ লাইন দিয়েছেন হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়ে, সঙ্গীদের খোঁজ পেতে।
সেখানে দাঁড়িয়েই হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন তরুণ বিশ্বাস। ১২ বছরের ছেলে তন্ময় বিশ্বাস নিখোঁজ। ভিড়ের স্রোতে ছেলের হাত ছুট হয়েছিল। লণ্ডভণ্ড মাঠে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ছেলেকে খুঁজে পাননি তিনি।
তাঁরই পিছনে দাঁড়িয়ে বগুলার নির্মলা বিশ্বাস। বয়সের ভার শরীরে। এক হাতে ছেঁড়া জামা, অন্য হাতে ২৬০ টাকা। পাশে বসা বৃদ্ধ ভিড়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার সময় সামান্য সম্বলটুকু নিয়ে যেতে পারেননি। ‘‘যদি খুঁজে পাওয়া যায়! যদি ফিরিয়ে দেওয়া যায় জিনিসগুলো!’’ আর্তি বৃদ্ধার।
মঞ্চের পিছনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি অফিস ততক্ষণে হাসপাতালের চেহারা নিয়েছে। ছেড়া শাড়ি গায়ে তখনও স্তব্ধ ঠাকুরনগরেরই তরুণী বাসন্তী মণ্ডল। মাঠে পড়ে গিয়েছিলেন। তাঁর উপর দিয়েই দিকশূন্য হয়ে দৌড়েছেন সাধারণ মানুষ। আর কপালে তীব্র চোট নিয়ে তাঁরই পাশে ক্রমাগত বমি করে যাচ্ছেন গৃহবধূ ঋতা বাগচী।
দুর্গাপুরের সভায় ঠাকুরনগরের ভিড় নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব খুশি, মানুষের ‘ঢল’ দেখে। আর ভাঙা হাটে আহত, বিহ্বল অধিকাংশ মানুষের মুখে কেবল একটিই কথা— ‘‘কেন এলাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy