Advertisement
E-Paper

ঝাড়খণ্ডে গুলি, জখম মাওবাদী নেতা রঞ্জিত

একটা গুলি পায়ে বিঁধেছে, আর একটা কোমরের নীচে। রাঁচির কাছে পটমদার জঙ্গলে ঝাড়খণ্ড পুলিশ ও সিআরপি-র সঙ্গে সংঘর্ষে পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী নেতা, বাঁকুড়ার বারিকুল এলাকার খেজুরখেন্না গ্রামের যুবক রঞ্জিত পাল এই রকম জখম হয়েছে বলে দাবি এই রাজ্যের গোয়েন্দাদের। তাঁদের অনেকে মনে করছেন, রঞ্জিতের ধরা পড়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০৩:৪৯
রঞ্জিতের উদ্দেশে পুলিশের আবেদন। —ফাইল চিত্র

রঞ্জিতের উদ্দেশে পুলিশের আবেদন। —ফাইল চিত্র

একটা গুলি পায়ে বিঁধেছে, আর একটা কোমরের নীচে। রাঁচির কাছে পটমদার জঙ্গলে ঝাড়খণ্ড পুলিশ ও সিআরপি-র সঙ্গে সংঘর্ষে পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী নেতা, বাঁকুড়ার বারিকুল এলাকার খেজুরখেন্না গ্রামের যুবক রঞ্জিত পাল এই রকম জখম হয়েছে বলে দাবি এই রাজ্যের গোয়েন্দাদের। তাঁদের অনেকে মনে করছেন, রঞ্জিতের ধরা পড়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ, তার জখম যে রকম, তাতে তার পক্ষে এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী ও গোয়েন্দাদের নজরদারি এড়িয়ে দ্রুত অন্য জায়গায় সরে যাওয়া মুশকিল।

গত ২ এপ্রিল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর হাতে বিকাশ ও তারা গ্রেফতার হওয়ার পর মাওবাদী নেতাদের মধ্যে রঞ্জিতই এই রাজ্যের প্রশাসনের কাছে সব চেয়ে বড় মাথাব্যথা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মাওবাদী রাজ্য কমিটির সদস্য বিকাশও ধরা পড়ার পরে জানিয়েছেন— পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদীদের মধ্যে কেবল রঞ্জিত পালই এখন লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে সে রাহুল নামে পরিচিত।

গত ১৭ এপ্রিল ভোরে ঝাড়খণ্ডে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে রাহুল জখম হয়। ওই ঘটনা ঘটে আমদাপাহাড়ির জঙ্গলে, যেখান থেকে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বড়জোর ২০ কিলোমিটার। কিন্তু রঞ্জিতের জখম হওয়ার খবর ঝাড়খণ্ড পুলিশ পেয়েছে কেবল গত বৃহস্পতিবার, ১২ মে। তার পর জেনেছেন এই রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রাহুল ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের পটমদা-দলমা স্কোয়াডের কমান্ডার। পুরুলিয়ার বলরামপুরের মাহুলিটাঁড় গ্রামের হাজারি হেমব্রমও ওই স্কোয়াডের সদস্য। তবে ১৭ এপ্রিলের গুলির লড়াইয়ে হাজারির কিছু হয়নি। ওই স্কোয়াডে এই রাজ্যের আর এক মাওবাদী, জামবনির সাহেবরাম হেমব্রম ওরফে জয়ন্তও আছে বলে গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি।

রঞ্জিতের নেতৃত্বাধীন ওই স্কোয়াডের দুই সদস্য ১০ মে পূর্ব সিংহভূম জেলা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তাদের নাম রাবণ পাহাড়িয়া ও মধুসূদন পাহাড়িয়া। ওই দু’জনকে জেরা করেই জানা যায়, রঞ্জিত ওরফে রাহুল গুলিতে জখম হয়েছে।

তবে রাহুলের জখম কতটা, তা নিয়ে সিআরপি-র সঙ্গে পুলিশের মতভেদ দেখা দিয়েছে। সিআরপি-ও মেনে নিচ্ছে, রাহুল গুলিতে জখম। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে সিআরপি-র এক শীর্ষকর্তা এ দিন বলেন, ‘‘গুলি রাহুলের ঊরু ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছে বলেই মনে হয়। অর্থাৎ সে জখম, ঠিক কথা। কিন্তু চলাফেরায় তেমন অসুবিধে ওর হচ্ছে না।’’ তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘১৭ এপ্রিলের ওই সংঘর্ষে রাহুলের স্কোয়াড জবরদস্ত ধাক্কা খেয়েছে।’’

রাহুল ছাড়া আরও দু’জন মাওবাদী ওই সংঘর্ষে আহত হয়েছে এবং তাদের জখম গুরুতর। এদের মধ্যে সমীর নামে এক মাওবাদীর শিরদাঁড়ায় গুলি লেগেছে। ওই ঘটনার পরেই রঞ্জিতের স্কোয়াডের সদস্যেরা চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। আর তাদের মধ্যে থেকেই গত মঙ্গলবার ধরা পড়ে যায় দু’জন।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘আমরা কিন্তু পাকা খবর পেয়েছি যে, রঞ্জিতের দেহে দু’টো গুলি লেগেছে। ওর অস্ত্রোপচারও হয়েছে।’’ তবে ওই অফিসারের বক্তব্য, ‘‘যত ক্ষণ না রঞ্জিত

পাল ধরা পড়ছে, তত ক্ষণ আমাদের স্বস্তি নেই।’’

প্রসঙ্গত, ভোটের কিছু দিন আগে বান্দোয়ানের শিরকা গ্রামে মাওবাদী পোস্টার পড়ে। তৃণমূলের কয়েক জন স্থানীয় নেতাকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ওই পোস্টার দেয় মাওবাদীরা। শিরকা গ্রামের এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই ঝাড়খণ্ড। রঞ্জিতের স্কোয়াড-সদস্যেরাই ওই পোস্টার সেঁটে গিয়েছিল বলে গোয়েন্দারা খবর পেয়েছিলেন।

মাওবাদী নেতা বিকাশ ধরা পড়ার পর খেজুরখেন্না গ্রামে রঞ্জিতের পরিবারের লোকজন জানিয়েছিলেন, তাঁরাও চান তাঁদের বাড়ির ছেলে এ বার ধরা দিন।

Maoist Jharkhand Shot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy