পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রশ্নোত্তরের প্রচলিত ধাঁচটাই ঢেলে সাজতে চলেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। স্কুল স্তর এবং বেশির ভাগ সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় এখন ছোট ছোট প্রশ্নের রমরমা। সামঞ্জস্য রেখে স্নাতক স্তরেও মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন (এমসিকিউ) চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়।
মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন বা এমসিকিউ হল, ছোট প্রশ্নের উত্তরগুচ্ছ থেকে যথাযথ উত্তরটি বেছে নেওয়া। এই পদ্ধতির দ্বিমুখী উপযোগিতা হল, পাঠ্যক্রমের সঙ্গে আগাগোড়া পরিচয় না-থাকলে ঠিক উত্তর বেছে নেওয়া কঠিন। অর্থাৎ কিছু অধ্যায় বেছে অন্য পরিচ্ছেদ এড়ানোর দিন শেষ। পরীক্ষার্থীকে বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতেই হবে। আর ফলপ্রসূ উপযোগিতা হল, দীর্ঘ সময় ধরে বড় উত্তর লিখতে গিয়ে প্রশ্ন ছেড়ে আসতে হবে না। কম সময়ে দ্রুত বেশি নম্বরের উত্তর দিতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা কমবে।
কেন্দ্রীয় বোর্ড-সহ বিভিন্ন পর্ষদ স্কুল স্তরে ছোট ছোট প্রশ্ন এবং সংক্ষিপ্ত উত্তরকে অগ্রাধিকার দিয়েছে অনেক আগেই। বাংলায় সেটা চালু না-হওয়ায় এখানকার পড়ুয়ারা নম্বরের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অবশেষে ২০১৭ সালের মাধ্যমিকে এমসিকিউ পদ্ধতিকে বরণ করে নিচ্ছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পরিধি বাড়িয়ে স্কুল স্তরের সেই উদ্যোগকে এ বার কলেজ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বৈঠকে আপাতত স্নাতক (জেনারেল) স্তরে এমসিকিউ পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব পেশ হয়েছে। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ামক, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষেরা বৈঠকে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, অধিকাংশ সদস্যই প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য পেশ করায় সেটি পাশ হওয়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ‘‘২০১৭ সাল থেকেই এই পদ্ধতিতে প্রশ্ন করার কথা ভাবা হচ্ছে,’’ বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা। তাঁদের দাবি, এ ক্ষেত্রে কলকাতার উদ্যোগ অভিনব। কারণ, রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই এমসিকিউ চালু নেই।
কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ই বা এমসিকিউ পদ্ধতি চাইছে কেন?
জবাবে নম্বরের দৌড়ে টিকে থাকার কথাই বলা হচ্ছে। এ রাজ্যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকে এমসিকিউ চালু নেই। কিন্তু দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠার তাগিদে এটা জরুরি হয়ে পড়েছে। সময়ের সেই দাবি মেনে অধ্যক্ষেরা এমসিকিউয়ের পক্ষে মত দেন। এ দিনের বৈঠকে এক অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘চাকরির অধিকাংশ পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রশ্ন হয়। কম সময়ে বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে অসুবিধে হয় আমাদের ছাত্রছাত্রীদের। স্নাতক স্তর থেকেই এই ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া অভ্যাস করলে তাদেরই সুবিধে হবে।’’ অন্য এক অধ্যক্ষের পর্যবেক্ষণ, একই মানের পরীক্ষা দিয়েও কলকাতার পড়ুয়ারা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে কম নম্বর পান। এমসিকিউ পদ্ধতি রপ্ত করতে পারলে সেই সম্ভাবনা কমবে। সর্বোপরি পাঠ্যবই আগাগোড়া পড়তে বাধ্য হবেন পড়ুয়ারা। তাতে উন্নতি হবে মানেরও।
বৈঠক শেষে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগতবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখা হচ্ছে।’’