এমনই ব্যঙ্গচিত্র দেখা যাবে মণ্ডপ চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।
এই পুজোর সঙ্গেও জড়িয়ে থাকে রাজনীতির আকচাআকচি। থাকে থিমযুদ্ধে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই। বাগদেবীর আরাধনায় এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
রাজনৈতিক চাপানউতোরের আবহে পুজো জমে ওঠা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ, থিমে উঠে আসছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ থেকে সোনিয়া গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অনেকেই। মেদিনীপুর শহরে কলেজ মোড়ের পুজোর বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে এ বার পুজোর আকাশ জুড়ে যেন শুধু সারদা! বিরোধীরা যেমন সারদা কাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন থিম বানিয়ে শাসক দলকে খোঁচা দেবে। তেমন পাল্টা থিম বানিয়ে শাসক দলও এর মোকাবিলা করবে। এখন প্রস্তুতি তুঙ্গে। রাত জেগে চলছে থিম সাজানোর কাজ। হাতে সময় নামমাত্র। আজ, শনিবার সন্ধে থেকেই যে পুজোর উদ্বোধনপর্ব।
মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ের সরস্বতী পুজো দেখতে শুধু শহরের মানুষই নন, আশপাশের এলাকার বহু মানুষ আসেন। পুজোর দিনে সকাল থেকেই দর্শকদের ভিড় জমতে শুরু করে। এরপর বেলা যত বাড়ে, পাল্লা দিয়ে ভিড়ও তত বাড়ে। এক একটি পুজো দেখতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে। কারণ, বিভিন্ন মডেলের পাশে লেখা থাকে। এই লেখাগুলোই মূল আকর্ষণ। প্রায় প্রতিটি লেখাই ব্যাঙ্গাত্মক। কোনও না কোনও দলকে খোঁচা দেয়। শহরের এই এলাকায় প্রায় কুড়িটি পুজো হয়। প্রায় প্রতিটি পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কোথাও পুজোর নেপথ্যে টিএমসিপি। কোথাও সিপি। কোথাও বা এসএফআই কিংবা এবিভিপি।
পুজোয় উঠে আসে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়। রাজ্যে পালাবদলের পরের বছর থিম খুঁজতে হিমশিম খেতে হয়েছিল বেশ কিছু পুজো কমিটিকে। কারণ, হাতেগোনা কয়েকটি বিষয় ছাড়া তেমন কিছু ছিল না। যা থিম হিসেবে হাজির করে দর্শকদের প্রশংসা কুড়নো যায়। গেল বার অবশ্য এমন সমস্যা হয়নি। পুজোর থিমে উঠে আসে গার্ডেনরিচ থেকে ভাঙড়, সব কিছুই। এ বারও অবশ্য থিমের অভাব নেই। চারিদিকে বিষয়ের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে সারদা প্রসঙ্গ অন্যতম। কলেজ মোড়ের পুজোর আকাশেও রয়েছে সেই সারদার আঁচ।
ছাত্র পরিষদ প্রভাবিত পুজো কমিটিগুলোর মধ্যে ‘প্রগতি’ ক্লাবের পুজো অন্যতম। ক্লাবের অন্যতম সদস্য তথা সংগঠনের জেলা নেতা মহম্মদ সইফুল বলেন, “পুজোয় সারদার আঁচ থাকছেই। তৃণমূলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রী জেলে যাচ্ছেন। মানুষ কী চেয়েছিলেন, কী পেলেন, তা ভাবতে হবে। মানুষ ভাবছেও।” এসএফআই প্রভাবিত পুজোর মধ্যে ‘রেড ক্যাসেল’ অন্যতম। ক্লাবের অন্যতম সদস্য অভিজিত্ কর বলেন, “সারদায় টাকা রেখে লক্ষ লক্ষ আমানতকারী প্রতারিত হয়েছেন। দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে মুখ্যমন্ত্রী এমন সব শব্দ বলছেন, তা শোনা যায় না। বাম্বু শব্দটা কী মুখ্যমন্ত্রীর মুখে মানায়? থিমে এই সব প্রসঙ্গও থাকছে।”
কলেজ মোড়ের একটি থিমে আবার উঠে আসছে ‘সারদা এক্সপ্রেস’। ট্রেনের রুট কালীঘাট থেকে আলিপুর জেল, ভায়া নবান্ন। জবাবে কী বলছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন? টিএমসিপি প্রভাবিত পুজোগুলোর মধ্যে ‘অগ্নিকন্যা’ ক্লাবের পুজো অন্যতম। ক্লাবের অন্যতম সদস্য টিএমসিপি নেতা বুদ্ধ মণ্ডল বলেন, “ভয় দেখিয়ে লাভ নেই! যতই কুত্সা অপপ্রচার হোক, মানুষ আমাদের সঙ্গে ছিল, আছে, থাকবে! ভোটের আগে ভুরি ভুরি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল। তারপর? কালো টাকা কী দেশে ফেরত এল? পুজোর থিমে এই সব বিষয় থাকছে।” কয়েক’টি পুজোয় সচেতনতামূলক থিমও থাকছে।
ছাত্র পরিষদ প্রভাবিত পুজোর মণ্ডপে দেখা যাবে, মদন মিত্র পুকুরে জাল ছুঁড়ছেন। বলছেন, ‘আমি জেলে’। টিএমসিপি প্রভাবিত পুজোর মণ্ডলে দেখা যাবে, লালকৃষ্ণ আদবানিকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধাশ্রমের বাইরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ নৃত্য দেখছেন। এসএফআই প্রভাবিত পুজোর মণ্ডপে দেখা যাবে, এক পুলিশ কর্মী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছেন, ‘দিদি ঘাসফুলে হল না বলে বিছুটি পাতা ঘসে দিলাম!’ মমতা বলছেন, ‘এত বাম্বু দিচ্ছে। সারদার বাঁশের জ্বালা আর সহ্য করতে পারছি না!’
এসেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাও। দেখা যাবে, পদত্যাগ করার পর অভিজিত্ চক্রবর্তী বলছেন, ‘প্রথম দেখেছি অবাক হয়েছি, অবাক হব বার বার, এই কলরব থামানোর মতো পাশে রইল না কেউ আর!’
সব মিলিয়ে, কলেজ মোড়ের পুজোয় এ বারও রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত। ভাবনা নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টার কসুর করছেন না কেউই। ব্যস্ত শিল্পীরা। ব্যস্ত ছাত্র নেতারাও। শেষ পর্যন্ত রাজনীতির আকচাআকচিতে কে কাকে ছাপিয়ে গেল, সেটাই দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy