Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঐতিহ্য মেনেই দশেরা রেলশহরে

জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দীর্ঘকায় দশানন। চলছে রাম-রাবণের যুদ্ধও। শেষমেশ আতসবাজির রোশনাইয়ের সঙ্গে পুড়ে ছাই হল রাবণ। অশুভ শক্তি বিনাশের বার্তা নিয়ে প্রতিবারের মতো এ বারও দশেরা উৎসবে মাতল রেলশহর। গত শুক্রবার দশমীর বিকেলে খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্ট সংলগ্ন রাবণ ময়দানে এই রাবণ বধের আয়োজন করা হয়েছিল। দিল্লির রামলীলা ময়দানের দশেরা উৎসবের আদলে ৮৯ বছর ধরে খড়্গপুরে এই আয়োজন হচ্ছে। রেলশহরের নানা প্রান্ত তো বটেই, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেই মানুষ এসেছিলেন উৎসবের শরিক হতে।

খড়্গপুরে দশেরা উৎসবে পোড়ানো হচ্ছে রাবণ। —নিজস্ব চিত্র।

খড়্গপুরে দশেরা উৎসবে পোড়ানো হচ্ছে রাবণ। —নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচি
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দীর্ঘকায় দশানন। চলছে রাম-রাবণের যুদ্ধও। শেষমেশ আতসবাজির রোশনাইয়ের সঙ্গে পুড়ে ছাই হল রাবণ। অশুভ শক্তি বিনাশের বার্তা নিয়ে প্রতিবারের মতো এ বারও দশেরা উৎসবে মাতল রেলশহর। গত শুক্রবার দশমীর বিকেলে খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্ট সংলগ্ন রাবণ ময়দানে এই রাবণ বধের আয়োজন করা হয়েছিল। দিল্লির রামলীলা ময়দানের দশেরা উৎসবের আদলে ৮৯ বছর ধরে খড়্গপুরে এই আয়োজন হচ্ছে। রেলশহরের নানা প্রান্ত তো বটেই, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেই মানুষ এসেছিলেন উৎসবের শরিক হতে।

মিনি ইন্ডিয়া খড়্গপুরে ১৯২৫ সাল থেকে রাবণ বধের আয়োজন করছে দশেরা উৎসব কমিটি। এই উৎসবে সামিল হন গুজরাতি, মারোয়াড়ি, তেলুগু, বিহারি, বাঙালি-সহ রেলনগরীর নানা ভাষাভাষি মানুষ। গেটবাজার সংলগ্ন রাবন ময়দানে বোমা-আতসবাজিতে মোড়া রাবণের বিশালাকার কুশপুতুলটি সাজানো হয়। রাম-রাবণের নকল যুদ্ধেরও আয়োজন থাকে। আর তা দেখতে ভিড় হয় লক্ষাধিক মানুষের।

গত বছর বৃষ্টিতে তাল কেটেছিল। রাবণের ১০টি মাথার ৯টিই জ্বালানো যায়নি স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায়। তবে এ বছর আবহাওয়া ছিল উপযুক্ত। ৫৫ ফুটের বারুদে ভরা রাবণের কুশপুতুলেও ছিল কিছু নতুনত্ব। লাল আলো ব্যবহার করে রাবণের চোখের পাতা খোলা-বন্ধের ব্যবস্থা ছিল। ফলে, প্রায় জীবন্ত হয়ে উঠছিল লঙ্কারাজ। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১৪টি আখড়া এসেছিল রাবণ ময়দানে। তারাই নিজেদের মধ্যে নাটকীয়ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল রাম-রাবণের যুদ্ধ। ব্যবসায়ীদের একাংশের পৃষ্ঠপোষণায় দশেরা উৎসবের জাঁক ক্রমেই বাড়ছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, এ বার দশেরায় খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা।

এ বছর রাবণ বধের এই অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল ডিআইজি মেদিনীপুর রেঞ্জ বিশাল গর্গ ও খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে কেউই আসতে পারেননি। সলতে দেওয়া তিরে আগুন লাগিয়ে রাবন বধের সূচনা করেন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর। উপস্থিত ছিলেন এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল, দশেরা উৎসব কমিটির কার্যকরী সভাপতি আলো সিংহ, সহ-সভাপতি রাজা রায় প্রমুখ। দশেরা উৎসবের জেরে কয়েকটি রাস্তায় যানজটে ভোগান্তিও হয়। রাবন ময়দানমুখা বোম্বে সিনেমা ও অরোরা সিনেমা ঘেঁষা দু’টি পথেই যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকায় এই সমস্যা বলে ধারণা শহরবাসীর। তাঁদের মতে, একটি রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্যটি দিয়ে ফেরার বন্দোবস্ত করলে যানজট এড়ানো যেত। দশেরা উৎসব কমিটির সহ-সভাপতি রাজা রায় অবশ্য বলেন, “বিপুল জনসমাগমে কিছ তো সমস্যা হবেই। তবে বোম্বে সিনেমার রাস্তা দিয়ে আখড়াগুলি ঢোকায় কিছুক্ষণের জন্য যানজট হয়। তবে গিরিময়দানের রেলগেটও এর একটা কারণ।”

উৎসবের আনন্দে যানজটের ভোগান্তি অবশ্য শেষমেশ ভুলে গিয়েছেন দর্শনার্থীরা। দশেরার ভিড়ে সামিল ভেঙ্কটেশ্বর, সঞ্জীব দাসদের কথায়, “খুব কষ্ট করে রাবণ ময়দানে পৌঁছেছি। কিন্তু এই রাবণ পুড়ে ছাই হওয়ার দৃশ্যই দেখে মন একেবারে চাঙ্গা হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debmalya bagchi pujo kharagpur dasara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE