খড়্গপুরের নতুন বাজার থেকে কৌশল্যা যাওয়ার অপরিসর রাস্তায় গাড়ির ভিড়।
কোথাও রাস্তার পাশে অবৈধ ঝুপড়ি, কোথাও বা রাস্তা জুড়ে পড়ে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। ফলে ১২০ ফুটের রাস্তার মাপ দাঁড়িয়েছে ৩০ ফুটে! আর এই সঙ্কীর্ণ রাস্তায় দিয়েই চলছে গাড়ি যাতায়াত। ফলে বাড়ছে যানজট। রেলশহরের ইন্দা মোড় থেকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের চৌরঙ্গী পর্যন্ত সংযোগকারী ওড়িশা ট্রাঙ্ক গ্র্যান্ড রোডের অবস্থা এমনই। সমস্যা সম্পর্কে জেনেও উদাসীন পুরসভা। পূর্ত দফতরের সঙ্গে চলছে দায় ঠেলাঠেলিও। এলাকায় কিছু পথবাতি লাগানো ছাড়া শহরের সৌন্দর্যায়নের কোনও দিশাও মেলেনি। আর সব মিলিয়ে সমস্যায় নাজেহাল সাধারণ পথচলতি মানুষ।
১৮৯৮ সালে রেল কারখানা গঠনের পর থেকে ক্রমেই বহর বেড়েছে খড়্গপুরের। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে রেলের দীর্ঘতম জংশন স্টেশনের সঙ্গে কলকাতা-মুম্বই ৬নম্বর জাতীয় সড়ক ও খড়্গপুর-ভুবনেশ্বর ৬০নম্বর জাতীয় সড়ক এই শহরকে গতিশীল করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা। ফলে ক্রমশ চাপ বাড়ছে সড়কপথে। যান চলাচল সচল রাখতে বছর চারেক আগে শহরের ইন্দা মোড়, পুরাতনবাজার মোড়ে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা গড়া হলেও তা এখনও চালু করা হয়নি। কোথাও রাস্তার পাশে ফুটপাথ নেই। আবার কোথাও ফুটপাথ থাকলেও তা চলে গিয়েছে জবরদখলকারীদের হাতে। ফলে রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি দু’টো গাড়ির পরিসর নেই বললেই চলে। অধিকাংশ পথে নেই পথবাতিও। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবে যায় ইন্দা মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড হয়ে বড়বাতি, পুরাতনবাজার থেকে স্টেশন, অরোরা সিনেমা গেট থেকে নিমপুরা-সহ অধিকাংশ রাস্তাই। ফলে উঠছে নিরাপত্তার প্রসঙ্গও।
কেন এমন পরিস্থিতি?
পরিসংখ্যান বলছে, ইন্দা মোড় থেকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের চৌরঙ্গী পর্যন্ত সংযোগকারী পূর্ত দফতরের অধীনস্থ ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোড ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হচ্ছে। আদতে ১২০ ফুটের রাস্তা কোথাও দাঁড়িয়েছে ৩০ ফুটে, কোথাও ৪০, কোথাও মেরেকেটে ৫০ ফুট। বাকি রাস্তা চলে গিয়েছে ঝুপড়ি দোকান, অবৈধ নির্মাণ, অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিংয়ের দখলে। ২০১০ সালে রাস্তা সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয় খড়্গপুর পুরসভা। পূর্ত দফতর অবৈধ নির্মাণ ভেঙে কৌশল্যা মোড় থেকে ঝাপেটাপুর পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ করেছিল।
কিন্তু ছবিটা তারপর থেকে আবার একই। সময় যত এগিয়েছে, রাস্তার ধারে অবৈধ নির্মাণ বেড়েছে। আর সঙ্কীর্ণ থেকে সঙ্কীর্ণতর হয়েছে রাস্তা। ইন্দার বাসিন্দা সোমনাথ আচার্যের কথায়, “দিনে দিনে যানবাহনের সংখ্যা যেমন বেড়েছে ততই রাস্তার দু’দিকে দোকান পরিধি বাড়িয়েছে। ফলে রাস্তা সরু হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অসুবিধে ভোগ করা ছাড়া উপায় কী?”
শহরের সৌন্দর্যায়ন প্রাথমিকভাবে দেখা দায়িত্ব পুরসভার। ২০১০ সাল নাগাদ পুরসভার প্রস্তাবে এই শহরের প্রবেশদ্বার চৌরঙ্গী থেকে ইন্দা মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২০ ফুট চওড়া সড়ক চার লেনের করার পরিকল্পনা হয়। রাস্তাকে সাড়ে ১১মিটার করে দু’টি ভাগে ভাগ করা, ফুটপাথ গড়ার ভাবনা ছিল। পরে পূর্ত দফতর অর্থ সঙ্কটের মুখে পড়ে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। গত বছর অগস্টে পুরসভায় অনাস্থা ভোটে জয়ী হয়ে তৃণমূলের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় কংগ্রেস। কিন্তু হাল ফেরেনি শহরের। তাই শহরের সৌন্দর্যায়নে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। কৌশল্যা মোড়ের এক দোকানদারের অভিযোগ, “নিকাশি নালায় জমে থাকা জল উপচে ওঠে। বলেও কাজ না হওয়ায় আমরাও চুপ করে থাকি। সবাই একসঙ্গে মিলে কাজ করলেই তো মিটে যায়।”
সমস্যাটা ঠিক সেখানেই। রাস্তার সংস্কার, শহরের সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব যে পুরসভার সেই পুরসভা কী বলছে? শহরের পুরসভার প্রাক্তন তৃণমূল পুরপ্রধান জওহরলাল পাল বলেন, “আমার সময়ে উদ্যোগী হয়ে প্রস্তাব পাঠিয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম গড়তে চেয়েছিলাম। সৌন্দর্যায়নের জন্য নানা পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন তো কিছুই হচ্ছে না।” পুরসভার বর্তমান পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “আমরা মালঞ্চ রোডে পথবাতি বসাতে পেরেছি। ঝাপেটাপুরে-সহ অন্যত্র পথবাতির পরিকল্পনা রয়েছে। জবরদখলের ব্যাপারে আমরা কী করতে পারি, তা নিয়ে পূর্ত দফতর ও প্রশাসন সাহায্য চাইলে আমরা প্রস্তুত।”
মেদিনীপুর-কড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমকেডিএ-র কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী স্কিম করা হয়েছে। তবে শহরের সৌন্দর্যায়নে পুরসভাকেই উদ্যোগী হতে হবে।” পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র গৌতম শট বলেন, “পুজোর আগে কাগজে-কলমে চৌরঙ্গী থেকে ইন্দা হয়ে মকরামপুর পর্যন্ত রাস্তাটি খড়্গপুর ডিভিশন থেকে আমাদের হাতে এসেছে। সদ্য এখানে এসেছি। কাজ নিয়ে কিছু বলতে পারব না।”
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy