Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিতর্ক বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন পাঠ্যসূচি চালুর আগেই শুরু ক্লাস

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ বার বিতর্ক দেখা দিল স্নাতকস্তরের পাঠ্যসূচি পরিবর্তন নিয়ে। এই নিয়ে দু’টি স্তরে বিতর্ক বেধেছে। প্রথমত, বৃহস্পতিবার থেকেই স্নাতক স্তরের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত সব কলেজে। কিন্তু এখনও নতুন পাঠ্যসূচি তালিকা পায়নি কলেজগুলি। তা হলে ছাত্রছাত্রীদের এখন কী পড়ানো হবে? দ্বিতীয়টি হল, পাঠ্যসূচি চূড়ান্ত পরিবর্তন করা হল কী ভাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের।

এ বার বিতর্ক দেখা দিল স্নাতকস্তরের পাঠ্যসূচি পরিবর্তন নিয়ে। এই নিয়ে দু’টি স্তরে বিতর্ক বেধেছে। প্রথমত, বৃহস্পতিবার থেকেই স্নাতক স্তরের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত সব কলেজে। কিন্তু এখনও নতুন পাঠ্যসূচি তালিকা পায়নি কলেজগুলি। তা হলে ছাত্রছাত্রীদের এখন কী পড়ানো হবে? দ্বিতীয়টি হল, পাঠ্যসূচি চূড়ান্ত পরিবর্তন করা হল কী ভাবে। কারাই বা তা করলেন। এই প্রশ্নও তুললেন খোদ ‘বোর্ড অব স্টাডিজ’এর সদস্যরাই। যাঁদের হাতে পাঠ্যসূচি পরিবর্তনের দায়িত্ব অর্পিত।

ইংরেজি বিভাগের বোর্ড অব স্টাডিজের সদস্য তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা ইন্দ্রানী দত্ত চৌধুরীর কথায়, “পাঠ্যসূচির চূড়ান্ত পরিবর্তন হয়েছে নাকি? এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এ নিয়ে অনেক আগে কর্মশালা হয়েছিল। তাতে ছিলাম। কিন্তু সেখানে তো খসড়া পাঠ্যসূচি তৈরি হয়েছিল। চূড়ান্ত সূচি পরিবর্তনের কোনও বৈঠক হয়েছে বলে আমার তো মনে পড়ছে না। অন্তত আমি ডাক পাইনি।” একই কথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আর এক বোর্ড অব স্টাডিজের সদস্য, বেলদা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক তথা ওয়েবকুপার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতি তুহিন দাসেরও। তিনি আবার এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “তা হলে কী খসড়া পাঠ্যসূচিকেই চূড়ান্ত বলে চালানো হচ্ছে। খসড়া পাঠ্যসূচি চূড়ান্ত করার জন্য তো বৈঠক করার কথা ছিল। সেখানে আমাদেরও থাকার কথা। কিন্তু এমন কোনও বৈঠক ডাকাই হয়নি। তা হলে তা চূড়ান্ত করল কে?” কিন্তু ক্লাস তো শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্লাসে কী পড়াচ্ছেন? কলেজগুলিতে পরিবর্তিত পাঠ্যসূচী তো এখনও যায়নি। তুহিনবাবুর জবাব, “পাঠ্যসূচিই জানলাম না তো পড়াব কী!”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য বিধান পাত্র বলেন, “পুরোপুরি তো পরিবর্তন হয়নি। কর্মশালায় আলোচনার ভিত্তিতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ফলে পড়াতে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়াও এই সমস্যা না হয় সে জন্য আমরা কিছু কলেজে খসড়া পাঠ্যসূচি পাঠিয়েও দিয়েছি। নতুন পাঠ্যসূচি ছাপাতে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আশা করি, দিন কয়েকের মধ্যেই তা পেয়ে যাব। তারপর তা সব কলেজেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

সমস্যা হতে পারে জেনেও কেন আগে থেকে পাঠ্যসূচি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হল না? বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী বলেন, “সামান্য একটু দেরি হয়েছে ঠিকই, তবে এ বার দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তিনটি বাদে ২৭টি বিষয়ের পাঠ্যসূচি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।” চূড়ান্ত পাঠ্যসূচি তৈরি হয়ে গেল অথচ বোর্ড অব স্টাডিজের সদস্য জানলেন না কেন? বিধানবাবুর কথায়, “কর্মশালাতে আলোচনার মাধ্যমে যে সব বিষয় পরিবর্তন বা সংযোজনের বিষয় উঠে এসেছিল তার থেকে তো খুব বেশি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।” তাঁর দাবি, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত নিয়েই তা পরিবর্তন করা হয়েছে।”

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচির শেষ পরিবর্তন হয়েছিল ২০০৬ সালে। তা লাগু হয় ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে। তারপর থেকে একই পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পঠন-পাঠন চলছিল। চলতি বছরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঠ্যসূচি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। বিধানবাবুর দাবি, দু’টি বিষয় মাথায় রেখে এই পরিবর্তনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রথমটি হল, নেট ও সেট পরীক্ষার পাঠ্যসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ও বিগত ৬ বছরে বিভিন্ন বিষয়ে ঘটে যাওয়া নানা অগ্রগতির কথা মাথায় রেখেই পাঠ্যসূচির পরিবর্তন করা। যাতে ছাত্রছাত্রীরা নতুন বিষয় সম্বন্ধে অবহিত হতে পারেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে বিধানবাবুর যুক্তি, প্রাণিবিদ্যার ক্ষেত্রে আগে কেবল মরফো ট্যাক্সোনমি পড়ানো হত। মরফো ট্যাক্সোনমি অর্থাৎ কোনও একটি জীবের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য দেখে তার নামকরণ করা। কিন্তু এক্ষেত্রে ভুলের সম্ভাবনা থেকেই যায়। কারণ, একই রকম দেখতে দু’টি প্রাণিকে একই প্রজাতির বলে ভুলও হতে পারে। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তা দেখা গেলে ভুল থাকার সম্ভাবনা নেই। তাই এ বার পাঠ্যসূচিতে যোগ করা হয়েছে মলিকিউলার ট্যাক্সোনমি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিজ এ আগে ৮০০ নম্বরের মধ্যে ৪০০ নম্বর ছিল থিওরি ও ৪০০ নম্বর প্র্যাকটিক্যাল। এ বার সেখানে ৫০০ নম্বর থিওরি করা হয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল ৩০০ নম্বরের।

কেন? বিধানবাবু জানান, মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে ধরতে সমুদ্রের গভীরে চলে যান। ফিরতে অনেক সময় লাগে। তারপর ফিরে আড়তে বিক্রি করা। তারও পরে বাজারে। এই দীর্ঘ সময় কী ভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, তা শুধু কোনও এলাকায় গিয়ে দু’একবার দেখানো হত। কিন্তু তাতে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে পুরোটা বোঝা সম্ভব হত না। বিধানবাবু বলেন, “এ বার তা বিস্তারিত পড়ানো হবে। তারপর প্র্যাকটিক্যাল দেখানো হবে। তাতে বোঝা সহজ হবে।”

এই পরিবর্তন আনতেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল কর্মশালা। এক একটি বিষয়ের জন্য এক-একদিন কর্মশালা হয়। ৩০টি বিষয়ের কর্মশালা শেষ হয় মে মাসেই। কিন্তু ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও অফিস ম্যানেজমেন্ট এন্ড সেক্রেটারি প্র্যাকটিস, মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট ও বটানি এই তিনটি বিষয়ের পাঠ্যসূচি এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। বাকিগুলি চূড়ান্ত করে ছাপতেও পাঠানো হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি। পাঠ্যসূচি ছাপা হয়ে আসতে আরও মাস খানেক লেগে যাওয়ার কথা। তারপর তা কলেজে কলেজে পাঠানো। কলেজগুলি তা বিতরণ করবে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের। শিক্ষকেরা তৈরি হবেন, ছাত্রছাত্রীরা বই কিনবেন। এই দীর্ঘ সময় ব্যয়ের পর শুরু হবে পঠনপাঠন! এত করে যে পাঠ্যসূচি তৈরি হল তা নিয়েও আবার বিতর্ক!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE