বাজারে আপেল বিকোচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। বেদানা ১২০ টাকা, নাসপাতি ৭০ টাকায়। কাঁথি বাজারে ছোট ছাঁচের লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে ১৫০- ৪০০ টাকা দরে। এমনকি সুযোগ বুঝে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত দর হাঁকাতেও কসুর করছেন না বিক্রেতারা। আর একটু বড় লক্ষ্মী প্রতিমার দাম প্রায় ৬০০-৮০০ টাকা। এমনই আগুন দামের বাজারে । কোজাগরী পূর্ণিমায় ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় নাভিশ্বাস বাঙালির। বাজার অগ্নিমূল্যভুরিভোজ ছাড়া বাঙালির দুর্গাপুজো কল্পনাই করা যায় না। পুজোর ক’দিন বেলাগাম খরচে এমনিতেই গৃহস্থের পকেটে টান। তার উপর সৌভাগ্য কামনায় লক্ষ্মী পুজোর সামগ্রী কিনতে বাজারে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ।
কোজাগরি লক্ষ্মীপুজোর অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য নারকেল নাড়ু ও খইয়ের মোয়া। কাঁথিতে সাইজ অনুসারে ২৫-৪০ টাকায় বিকোচ্ছে একটি নারকেল। ঘরে নারকেল নাড়ু বানাতে গেলে চিনি ও গুড়ও প্রয়োজন। পুজোর মরসুমে প্রতি কিলোগ্রামে গুড়ের দামও দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ টাকা। মায়ের অন্নভোগের খরচও কম নয়। মহার্ঘ্য আতপ চাল, মুগের ডালও। ভোগের বাজার করতে নাভিশ্বাস পেশায় শিক্ষিকা জ্যোত্স্না আদকের। তাঁর কথায়, “সবেমাত্র পুজো শেষ হয়েছে। এমনিতেই হাত ফাঁকা। তার উপরে পুজোর ভোগের বাজার করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে।”
ফলের বাজার দরও আকাশছোঁয়া। আঙুর প্রতি কিলোগ্রাম ১৫০ টাকা, কলা ৪০ টাকা প্রতি ডজন, মুসুম্বি লেবু প্রতিটির দাম ৭-৮ টাকা, কমলালেবু ১০ টাকা প্রতিটি, তরমুজ ৩৫ টাকা। একটি আনারসের দামও ৫০ টাকা। কাঁথি শহরের বাসিন্দা পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নীলরতন সাউ বলেন, “ফলের বাজার দর আগুন। আপেল, কমলালেবু, কলার দাম বেশি। তবু পুজোর জন্য তো বাজার করতেই হবে।”
দামের দৌড়ে পিছিয়ে নেই ফুলের বাজারও। এ বার উত্পাদন কম। পাশাপাশি, আমাদনির থেকে ফুলের চাহিদা বেশি। ফলে দামও চড়ছে ভালই। এক একটি গাঁদাফুলের মালা বিকোচ্ছে ২০-২৫ টাকা দরে। রজনীগন্ধার মালার দাম ৩৫-৫০ টাকা, এক একটি পদ্মফুল ১০-১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পুজোর ঘটের জন্য এক একটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৫-২৫টাকা দরে। কাঁথি শহরের চৌরঙ্গীতে প্রতিমা কিনতে এসেছিলেন গৃহবধূ তপতী বাগ, অপর্ণা মাইতি। তাঁদের কথায়, “ঠাকুরের দাম আকাশছোঁয়া। খুব ছোট ছাঁচের প্রতিমাও ১৫০ টাকায় বিকোচ্ছে।”
শুধু কাঁথি নয়, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন বাজারেই ফুল-ফলের দাম চড়া। এগরাতেও প্রতিমার দামে উল্কাগতি। ছোট ঠাকুরগুলির দাম ৪০০-৫০০ টাকা। বড় ঠাকুরের দাম হাজারের কোটায়। লক্ষ্মী পুজো ও ঈদুজ্জোহা একসাথে পড়ায় বাজার দাম আরও আগুন হয়েছে বলেই মত অধিকাংশ বিক্রেতাদের।
মেদিনীপুর শহরেও বাজার অগ্নিমূল্য। গেল বার পুজোর সময় যে আপেল বিক্রি হয়েছে ৬০- ৭০ টাকায়, এ বার সেই আপেলই বিকোচ্ছে ৯০- ১০০ টাকায়। কলা ২০-৩০ টাকা ডজন (চাপা), ৪০- ৫০ টাকা (কাঁঠালি)। আঙুরের দাম কেজি প্রতি ১৫০ ছুঁয়েছে। ফল বিক্রেতারা অবশ্য জানাচ্ছেন, পুজোর সময় এমনিতেই দাম একটু বাড়ে। এ বার কিছু ফলের আমদানিও কম হয়েছে। ফলে, দাম উর্ধ্বমুখী। মেদিনীপুরের ফল ব্যবসায়ী গোপাল দাস, রণজিত্ বিশ্বাসদের কথায়, “সাধারণত, কাশ্মীর থেকেই আপেল আসে। কাশ্মীরে বন্যার জন্য এ বার আপেলের আমদানি কম হয়েছে। ফলে, গেল বারের থেকে এ বার দাম একটু বেড়েছে।” পুজোর দিনে অনেক বাড়িতেই খিচুড়ি হয়। তরকারির জন্য সব্জিও লাগে। সব্জির বাজারেও যেন আগুন! সব্জি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা কী দামে সব্জি বিক্রি করছেন, তার উপরই নির্ভর করে ওই সব্জির দাম খুচরো বাজারে কী হবে। বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে সব্জি আসে। তাই এ ক্ষেত্রে ৪- ৫ টাকার ফারাক হতেই পারে। সোমবারই লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতে বেরিয়ে ছিলেন মেদিনীপুরের বাসিন্দা সাধন দে, আশিস বসুরা। সাধনবাবুর কথায়, “সব্জি থেকে ফল- ফুল, সমস্ত কিছুর দামই তো চড়া! বাড়িতে অনেক দিন ধরেই পুজো হয়ে আসছে। পকেটের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ ব্যাগ ভরছে না!”
সব মিলিয়ে, লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন করতে গিয়ে এখন হাত পুড়ছে মধ্যবিত্ত বাঙালি গৃহস্থের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy