রাস্তায় পা ফেলার জায়গা নেই। দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে যানবাহন। দু’দিকে বিরাট বিরাট দোকান। তারই ফাঁকে ছোট্ট কোণে গজিয়ে উঠেছে পানের গুমটি, চা দোকান। এত দ্রুত লয়ে যে একটি গ্রামের চেহারা এভাবে বদলে যেতে পারে তা কে বলবে। বেলদা এখন পুরোদস্তুর শহর। যা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অনেক পুর এলাকাকেও হার মানিয়ে দেবে। মূলত, ব্যবসার কারণেই বেলদার এই বাড়বাড়ন্ত। আর এই কারণেই বেলদাকে পুরসভা করার দাবিও উঠেছিল অনেক আগে থেকেই। এ বার সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
বেলদার জন্মের ইতিহাস এক রূপকথা। মুগবেড়িয়ার জমিদার ছিলেন গঙ্গারাম নন্দ। তাঁর দাদা দিগম্বর নন্দ বিদ্যানিধি একবার পুরী যাচ্ছিলেন। তখন বেঙ্গল নাগপুর রেলের সৌজন্যে বেলদার উপর দিয়েই রেলপথ গিয়েছিল। ওই বৃদ্ধা থাকতেন একটি ঝুপড়িতে। তাঁর ছিল ছোট্ট একটি দোকান আর দোকানের সামনে পুুকুর। তাঁর দোকান থেকে বাতাসা কিনে দূর থেকে আসা মানুষ পুকুরের জল খেতেন। দিগম্বর নন্দ বিদ্যানিধিও পুরী যাওয়ার পথে বেলদা যখন পৌঁছান তখন সন্ধে হয়ে গিয়েছে। আহ্নিক করার জন্য পুকুর থেকে জল নিচ্ছিলেন বৃদ্ধার বিনা অনুমতিতে। বৃদ্ধা তীব্র বেগে প্রশ্ন ছোঁড়েন, কে জল নিচ্ছে? দিগম্বর নন্দ উত্তর দেন, ‘আমি মুগবেড়িয়ার জমিদার দিগম্বর নন্দ বিদ্যানিধি।’ আর তখনই বৃদ্ধার মুখ থেকে ঝরে পড়ে সেই পরিহাস, “আচ্ছা জমিদার হে, যাকে লোকের পুকুরে জল নিতে হয়। এতই যদি জমিদার তো একটা পুকুর কেটে দেখাও না!”
জমিদারপুত্রের মনে কথাটা দাগা দিয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুরী যাওয়া বাতিল করে বাড়ি ফেরেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ভাই গঙ্গাধর নন্দকে জানান, বেলদাতে পুকুর খনন করার কথা। গঙ্গাধর নন্দ শুধু পুকুর খনন (যার নাম চাঁদনি ঘাট) করেছিলেন তা-ই নয়, একটি ধর্মশালাও তৈরি করেছিলেন। যাতে পুরী যাওয়ার পথে মানুষ বিশ্রামের একটা জায়গা পান। তারই পাশাপাশি বেলদাতে বসতি গড়ার জন্য পুত্র বিরাজচরণ নন্দকে নির্দেশ দেন। বাবার নির্দেশ মতো ২২ বছর ধরে বেলদায় থেকে বসতি স্থাপন করার কাজ করেন বিরজাচরণ নন্দ। ময়না কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সংস্কৃতের শিক্ষক তথা নন্দ বংশের বংশধর ব্রহ্মময় নন্দ বলেন, “এ ভাবেই বেলদার পত্তন করেছিলেন গঙ্গাধর নন্দ।” ওই বংশেরই উত্তরসূরি চৈতন্যময় নন্দ বলেন, “বসতি স্থাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা করতে দীর্ঘদিন বেলদাতে নিজের জীবন কাটিয়েছিলেন বিরজাচরণ নন্দ।”