ভোটের আগে ভাঙন-রোধে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি আর ভোট ফুরোলে সব প্রতিশ্রুতিই নদীর জলে! এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাস করছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। আর জঙ্গলমহলে নদী-ভাঙনের বিষয়টি অনিবার্যভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম-সহ বিরোধীদের যুতসই প্রচারের অস্ত্র।
জঙ্গলমহলে সুবর্ণরেখা তীরবর্তী গোপীবল্লভপুর-১, গোপীবল্লভপুর-২, সাঁকরাইল ও নয়াগ্রাম ব্লক এবং কংসাবতী নদী তীরবর্তী ঝাড়গ্রাম ও বিনপুর ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় নদী-ভাঙনের সমস্যা তীব্র আকার নিয়েছে। সেচ দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দশ বছরে জঙ্গলমহলে নদী-ভাঙন ও ভূমিক্ষয়ের ফলে প্রায় আড়াইশো হেক্টর উর্বর চাষ-জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। প্রতি বছরই একটু একটু করে চাষের জমি ও জনপদ গ্রাস করছে সুবর্ণরেখা ও কংসাবতী। লালগড়ের কংসাবতী তীরবর্তী নেতাই গ্রামের ৯ বাসিন্দার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিধানসভা ভোটে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছিল তৃণমূল। সেই নেতাই গ্রামটিও ভাঙনে কবলে। অভিযোগ, ভাঙন-ঠেকাতে প্রতিশ্রুতি অনেক মিলেছে, কাজ কিছুই হয় নি। রাজ্য সরকারের তরফে ভাঙন-রোধে ঘোষণার তালিকাটি অবশ্য ভোটারের কাছে যথেষ্ট আশাপ্রদ। কিন্তু অভিযোগ, ঘোষণা ও বাস্তবের মধ্যে আসমান জমিন ফারাক।
ভোট-প্রচারে এই প্রসঙ্গেই তৃণমূলকে বিঁধছে সিপিএম ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি জঙ্গলমহলে এসে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁদের সরকার ক্ষমতার আসার পরে মাত্র আড়াই বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় নদী ভাঙন ও ভূমিক্ষয় রোধে ইতিমধ্যেই ১৮৫ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। আরও জানান, সুবর্ণরেখা তীরবর্তী নয়াগ্রাম ব্লকের ৮টি মৌজা, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ১২টি মৌজা, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের ২টি মৌজা এবং কংসাবতী নদীর তীরবর্তী ঝাড়গ্রাম ব্লকের ৪টি মৌজা ও বিনপুর-১ ব্লকের ২টি মৌজায় ভাঙন-রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ করার জন্য সমীক্ষার কাজ হয়ে গিয়েছে। এ জন্য দেড়শো কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের চোরচিতা গ্রামে সুবর্ণরেখা নদীর ভাঙন ও ভূমিক্ষয় রোধ প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন রাজীববাবু। চোরচিতায় ২৭০০ মিটার (২.৭ কিমি) দীর্ঘ নদীপাড় এলাকায় বোল্ডার দিয়ে ভাঙন ও ভূমিক্ষয় রোধ প্রকল্পের কাজ সবে শুরু হয়েছে। এ জন্য ৭ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।