সময়টা ২০০৭। জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্প ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল শালবনি। আশায় বুক বেঁধেছিলেন শয়ে শয়ে বেকার যুবক-যুবতী। যদিও প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ না হওয়ার অভিযোগে জমি ফেরানোর জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই জিন্দলদের উপর চাপ বাড়াচ্ছিল রাজ্য সরকার। সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কয়েক মাস আগে কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেন সজ্জন জিন্দল। আন্দোলনে নামেন জমিদাতারা। জিন্দলরা জমি ফিরিয়ে দিতে চাইলেও কারখানা গড়ার দাবিতে এখনও অনড় তারা।
কারখানায় কাজের স্বপ্ন নিয়ে কর্ণাটকের বেলারিতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন আনন্দ রায়। জমিদাতা পরিবারের যে ক’জনকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী, তাঁদের মধ্যেই ছিলেন আনন্দ। একটা সময় ভেবেছিলেন, চাকরিটা তাঁর হচ্ছেই। সময়ের সাথে স্বপ্ন ভেঙেছে। আনন্দর কথায়, “যখন প্রশিক্ষণ নিতে যাই, তখন ভেবেছিলাম ফিরে এসে শালবনির কারখানায় চাকরি হবেই। প্রায় এক বছর কর্ণাটকে ছিলাম। কিন্তু কোথায় কী! কারখানাই তো হল না!” তাঁর কথায়, “জিন্দলদের কারখানা হলে প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি হত। এই কারখানা ঘিরে আমার মতো অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন।”
রাজ্যে পালাবদলের পর নতুন শিল্পের মুখ দেখেনি পশ্চিম মেদিনীপুর। উল্টে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়েছেন কয়েকশো শ্রমিক। কেউ অস্থায়ী ভাবে ঠিকা শ্রমিকের কাজ খুঁজে নিয়েছেন। কেউ এখনও কাজ পাননি। কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র আশার আলো জিন্দলদের কারখানাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আঁধারে শালবনি। জিন্দলদের কারখানার জন্য জমি দিয়েছেন দিলীপ চালক। দিলীপের কথায়, “কোনও রকমে দিন কাটছে এই যা। ভেবেছিলাম কারখানা হলে সেখানে কাজ পাব। তা আর হল কই! এখনও কারখানা না হওয়ায় আমার মতো অনেকেই হতাশ।”