Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খোঁড়া রাস্তা, শহরে ভোগান্তির আশঙ্কা

স্থানীয়দের অভিযোগ, এর ফলে শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলিতে যান চলাচলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পথচারীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই। তাঁদের দাবি, বর্ষার আগে পরিকল্পনাহীন ভাবে খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নিকাশি ব্যবস্থাটাই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। তাঁদের আশঙ্কা একদিন ভারী বৃষ্টি হলেই শহর বেহাল হয়ে যাবে।

কাজের-ঠেলায়: বিপর্যস্ত যাতায়াত।—নিজস্ব চিত্র

কাজের-ঠেলায়: বিপর্যস্ত যাতায়াত।—নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০১:১৪
Share: Save:

নতুন জল প্রকল্প হবে। তাই শহর জুড়ে চলছে পাইপ লাইন বসানোর কাজ। তার জেরে অরণ্যশহরের রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে মাটি খঁুড়ে ফেলেছে পুরসভা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এর ফলে শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলিতে যান চলাচলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পথচারীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই। তাঁদের দাবি, বর্ষার আগে পরিকল্পনাহীন ভাবে খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নিকাশি ব্যবস্থাটাই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। তাঁদের আশঙ্কা একদিন ভারী বৃষ্টি হলেই শহর বেহাল হয়ে যাবে।

এমনিতেই শহরের নিকাশির সমস্যা রয়েছে। ২১ বর্গ কিমি ঝাড়গ্রাম শহরে পাকা, মোরাম ও কাঁচা মিলিয়ে মোট ২২০ কিমি রাস্তা রয়েছে। অথচ রাস্তার ধারে মাত্র ৫০ কিমি পাকা নর্দমা তৈরি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত উঁচু-নীচু হওয়ার ফলে নর্দমাগুলিতে ঠিকমত জল সরে না। ভারী বৃষ্টি হলেই শহরের কেন্দ্রস্থল পাঁচমাথার মোড় সহ বেশ কিছু এলাকায় জল জমে যায়। যথেচ্ছ রাস্তা খোঁড়াখুড়ির ফলে রাস্তার ধারে মাটির স্তূপ হয়ে রয়েছে। ব্যস্ত সময়ে যানজটে থমকে যাচ্ছে যানবাহন। পুরবাসীর একাংশের বক্তব্য, বর্ষার মুখে পরিস্রুত জল প্রকল্প রূপায়ণের সিদ্ধান্তটি একেবারে সঠিক হয়নি। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে টেলিফোনের কেবল কেটে গিয়ে শহরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিএসএনএল পরিষেবাও।

ঝাড়গ্রাম শহরের পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পের জন্য ৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে লালগড় ব্লকের বৈতা এলাকায় কংসাবতী নদীর জল তুলে এনে পরিস্রুত করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে অরণ্যশহরের বাড়ি-বাড়ি সরবরাহ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে রাজ্যের পুর বিষয়ক দফতর ঝাড়গ্রাম পুরসভাকে ৯ কোটি টাকা দিয়েছে। রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন সংস্থার সম্মতিক্রমে টেন্ডার ডেকে পুরুলিয়ার একটি সংস্থাকে পাইপ লাইন বসানোর কাজের বরাত দিয়েছে পুরসভা।

পাইপ লাইন বসানোর জন্য শহরকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এক নম্বর জোনে রয়েছে ১ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ড। দু’নম্বর জোনে রয়েছে ১০ থেকে ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিছুটা এলাকা। তিন নম্বর জোনের আওতায় ৮, ৯ ও ১৫ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা রয়েছে। তিন নম্বর জোনের অন্তর্গত ওয়ার্ডগুলিতে পাইপ লাইন বসানোর জন্য খোঁড়াখঁুড়ির কাজ হচ্ছে। অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে রাস্তার ধারে যে সব জবর দখল দোকান রয়েছে, সেগুলিকে না সরিয়ে কার্যত রাস্তা ঘেঁষে মাটি খুঁড়ে পাইপ বসানো হচ্ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের তিনটি জোনে মোট ২০০ কিমি পাইপ লাইন বসবে।

ঝাড়গ্রামের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “মাটির গভীরে সর্বত্র সমানভাবে পাইপ লাইন বসানো হচ্ছে না। বর্ষার আগে এই খোঁড়াখঁুড়ির ফলে রাস্তাগুলির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাবে। অপরিকল্পিত ভাবে কাজ শুরু হওয়ায় পুজোর আগে শহরবাসীকে অসুবিধার মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।”

পুরসভা সূত্রের ব্যাখ্যা, ২০১৬-১৭ অর্থ বর্ষের শেষের দিকে প্রকল্পটির জন্য টাকা মঞ্জুর করে রাজ্য সরকার। প্রথম পর্যায়ের টাকা হাতে পেতে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া করতে ৬-৭ মাস কেটে যায়। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। দেরিতে কাজ শুরু করলে সময় মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে না।

ঝাড়গ্রাম পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন শিউলি সিংহ বলেন, “ভাল কাজের জন্য একটু তো কষ্টভোগ করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE