Advertisement
E-Paper

শয্যা সমস্যায়  নাকাল জেলা  হাসপাতাল

দুর্গন্ধে টিঁকতে পারেন না বিভাসের বাবা বীরেন্দ্রনাথ জানা। তালপাতার পাখা, গামছা, খবরের কাগজ— যখন যা পান হাতের কাছে তা দিয়েই মশা, মাছি তাড়ান।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৩
চিকিৎসা: জেলা হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতেই রয়েছেন রোগীরা। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা: জেলা হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতেই রয়েছেন রোগীরা। নিজস্ব চিত্র

আট দিন ধরে জ্বর কমছে না বিভাসের। চিকিৎসা চলছে জেলা হাসপাতালে। মূল ফটক থেকে মেল মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল বিভাগে যাওয়ার পথে বারান্দায়। জ্বরের ঘোরে ঠান্ডা হাওয়ায় কুঁকড়ে যাচ্ছে বছর ষোলোর কিশোর। পাশেই হাসপাতালের জল নিকাশি নালা। দুর্গন্ধে টিঁকতে পারেন না বিভাসের বাবা বীরেন্দ্রনাথ জানা। তালপাতার পাখা, গামছা, খবরের কাগজ— যখন যা পান হাতের কাছে তা দিয়েই মশা, মাছি তাড়ান।

চিকিৎসা চলছে!

চণ্ডীপুরের দিবাকর গ্রামের বাসিন্দা বিভাস জানাকে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল বরাঘুনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত সোমবার তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে জেলা হাসাপাতালে। তবে শয্যা জোটেনি। বিভাসের পাশেই বিছানা পেতে শুয়ে বছর আঠারোর সৌরভ বর্মন। নন্দকুমারের বরগোদা গ্রামের ওই তরুণও জ্বরে ভুগছেন। সোমবার রাত থেকে তাঁরও ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দায়। সৌরভ বলেন, ‘‘নালার গন্ধে থাকতে পারছি না। সন্ধ্যা হলেই মশার উপদ্রব বাড়ছে। এ ভাবে কি চিকিৎসা হয়?’’

জেলা হাসপাতালে প্রায় ৪০ জন জ্বরের রোগী ভর্তি। অনেকেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। বিভাস, সৌরভদের ঠাঁই হয়নি। তবে শুধু জ্বর নয়, অন্য অনেক রোগীই লাইন দিয়ে শুয়ে রয়েছেন বিভাসদের পাশে। আছেন বহু বয়স্ক মানুষও।

এটাই তমলুক জেলা হাসপাতালের চেনা ছবি।

হাসপাতাল সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘শয্যা সংখ্যার তুলনায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাই সব রোগীকে শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না।’’ সুপারের দাবি, হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স আছেন পর্যাপ্ত। তাতে চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু সমস্যা শয্যা সংখ্যা আর স্বাস্থ্য কর্মী নিয়ে। শয্যা সংখ্যা ও স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ানোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠনের পর একদা তমলুক মহকুমা হাসপাতাল উন্নীত হয়েছে জেলা হাসপাতালে। ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী এই হাসপাতালে ৫০০ টি শয্যার অনুমোদন ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৩৮৩। এরপর এসএনসিইউ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট)-এর ২০ টি শয্যা ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের ১২ টি শয্যা যুক্ত হয়। সব মিলিয়ে এখন মোট শয্যা সংখ্যা ৪১৫।

বাড়ছে রোগী

২০১৪- রোগী ৩৭,৫২৪

২০১৫- রোগী ৪৫,৮১৪

২০১৬- রোগী ৫৫,৭৮০ *

* জেলা হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী

হিসাব বলছে গত তিন বছরে জেলা হাসপাতালে ভর্তির রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১৮ হাজারের বেশি। চলতি বছর ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫০,৭০৫ জন। শয্যা না থাকায় প্রতিদিন ভর্তি থাকা রোগীর একটা বড় অংশকে মেঝেয় রাখতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী গত ২৪ অক্টোবর হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর মোট সংখ্যা ছিল ৫৯৪ জন। অর্থাৎ, মোট শয্যা সংখ্যার চেয়ে ১৭৯ জন বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁরা সকলেই বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝে কিংবা বারান্দায় ভর্তি। ২৫ অক্টোবর ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৩২। অর্থাৎ সে দিন ২১৫ জন রোগী মেঝেতে ভর্তি ছিলেন।

Patient Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy