করোনা আতঙ্কে সুনসান মাইশোরা বাজার। নিজস্ব চিত্র
‘আমপান’ ঝড় থেমেছে গত সপ্তাহে। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে করোনা ঝড় যেন থামতেই চাইছে না। মঙ্গলবার জেলায় ফের নতুন তিন করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে। এরা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। তবে আশার কথা, এই পরিস্থিতিতেও পূর্বের দুই আক্রান্ত এ দিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিন নতুন করে যে তিন জনের খোঁজ মিলেছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন হলদিয়া এলাকার ও একজন এগরা পুরসভা এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের সকলকে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে বড়মা করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত যে হারে জেলায় করোনা রোগীর খোঁজ মিলেছে, তাতে বড়মা হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে বড়মায় ২৫ জন আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হলদিয়ার এক আক্রান্ত তথা বছর পচিশের ওই যুবক কর্মসূত্রে মহারাষ্ট্রে ছিলেন। সম্প্রতি সড়ক পথে তিনি বাড়ি ফিরেছিল। ফেরার পথে ঝড়খন্ড সীমান্ত পার হওয়ার সময় আসানসোলে তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। মঙ্গলবার ওই যুবকের করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে। হলদিয়ার আরেক আক্রান্তের বয়স ২৩। তিনি উত্তরপ্রদেশে কাজ করতেন। আসানসোলে তাঁরও লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
হলদিয়ার পাশাপাশি এগরা পুরসভা এলাকায় ফের করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে এ দিন। জেলায় প্রথম এগরাতেই করোনা যোগ পাওয়া গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, নতুন আক্রান্ত পুরনো আক্রান্তের ওয়ার্ডের। তবে নতুন এই আক্রান্তেরও ভিন্ রাজ্য যোগ রয়েছে। বছর উনিশের ওই যুবক মহারাষ্ট্রে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। গত ১৯ মে বাড়ি ফেরার পরে স্থানীয় একটি কোয়রান্টিন সেন্টারে ছিলেন। সেখানেই স্বাস্থ্য কর্মীরা তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন। মঙ্গলবার তাঁর করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে। ওই তিনজনকেই এ দিন পাঁশকুড়ার বড়মা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, এ দিন পাঁশকুড়ার করোনা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দু’জন। এদের মধ্যে হলদিয়ার বাসিন্দা এক বৃদ্ধ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামের একজন রয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলায় নতুন করে তিনজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনজনই পরিযায়ী শ্রমিক। এ দিন পাঁশকুড়া করোনা হাসপাতাল থেকে দু’জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হলদিয়ার করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের শারিরীক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। চিকিৎসায় তাঁকে সুস্থ করে তোলা আমাদের একটা বড় সাফল্য।’’
এক দিন আগেই পাঁশকুড়ার মাইশোরায় এক জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আর তাতেই রাতারাতি সুনসান গোটা এলাকা। পঞ্চায়েতের তরফে মাইক প্রচার চালানো হচ্ছে এলাকায় এলাকায়। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে এ দিন জরুরি বৈঠকও করেন মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পর্যবেক্ষক আফজল শা। বৈঠকে ছিলেন মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পর্যবেক্ষক আফজল শা, উপপ্রধান স্বপন খাঁড়া-সহ এলাকার সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্য, গ্রাম কমিটির প্রধান ও আশা কর্মীরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, মাইশোরা এলাকার সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের যাদের বাড়িতে একের বেশি ঘর আছে তাঁদের থাকতে হবে নিজের বাড়িতেই। আর যাঁদের অতিরিক্ত ঘর নেই তাঁদের স্থানীয় সরকারি স্কুলে রাখা হবে। বিশেষ প্রয়োজনে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ির একজন মাত্র সদস্য বাইরে বেরোতে পারবেন।
মাইশোরা এলাকার সমস্ত বাজার ও হাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। মুদি ও ওষুধের দোকানগুলি এলাকা ভিত্তিক নির্দিষ্ট সময়ে খোলা থাকবে। মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পর্যবেক্ষক আফজল শা বলেন, ‘‘মাইশোরায় যাতে আর কোনও মানুষ করোনা আক্রান্ত না হন, তার জন্য আমরা সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। সমস্ত পঞ্চায়েত সসদ্য, আশাকর্মী ও গ্রাম পরিচালন কমতির প্রধানরা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy