Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
জঙ্গলমহলের সুপার স্পেশ্যালিটি

কমোড ভর্তি আবর্জনায়, নরককুণ্ড শৌচালয়

জঙ্গলমহলের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের শৌচাগারগুলির পরির্তন চাইছেন কর্তৃপক্ষ। কারণ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিংহভাগ রোগী কমোডের ব্যবহার জানেন না। ফলে, শৌচাগারে গিয়ে কমোডের পরিবর্তে মেঝেতে বিষ্ঠাত্যাগ করে ভরিয়ে দিচ্ছেন রোগীদের একাংশ।

হাসপাতালে শৌচাগারের হাল এমনই। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

হাসপাতালে শৌচাগারের হাল এমনই। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৩
Share: Save:

জঙ্গলমহলের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের শৌচাগারগুলির পরির্তন চাইছেন কর্তৃপক্ষ। কারণ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিংহভাগ রোগী কমোডের ব্যবহার জানেন না। ফলে, শৌচাগারে গিয়ে কমোডের পরিবর্তে মেঝেতে বিষ্ঠাত্যাগ করে ভরিয়ে দিচ্ছেন রোগীদের একাংশ। দুর্গন্ধে ওয়ার্ডে টেকা দায় হয়ে উঠেছে। দিনের পর দিন এই পরিস্থিতি চলতে থাকায় বেঁকে বসছেন সাফাই কর্মীরাও। তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, হয় রোগীদের কমোডের ব্যবহার শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক। না হলে কমোড তুলে দিয়ে চিরাচরিত ভারতীয় পদ্ধতির শৌচাগার তৈরি করা হোক। এভাবে দিনের পর দিন মেঝে ভর্তি নোংরা সাফ করা সম্ভব নয়।

জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রীর ‘ড্রিম প্রোজেক্ট’-এর এই দুর্দশার জন্য অবশ্য পরিকল্পনার ত্রুটিকেই দায়ী করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার একাংশ বাসিন্দাদের এখনও শৌচাগার মুখী করা যায়নি। তা ছাড়া কমোড ব্যবহারে অনেকেই অভ্যস্ত নন। তা সত্ত্বেও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলিতে ভারতীয় পদ্ধতির শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

সদ্য চালু হওয়া ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রাম এই তিনটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সমস্ত শৌচাগারেই কমোড-ব্যবস্থা রয়েছে। সুপার স্পেশ্যালিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে ৬টি করে শৌচাগার রয়েছে। সব ক’টিই কমোড। হাসপাতাল চত্বরে সর্বসাধারণের জন্য শৌচাগার নেই। ফলে, রোগীর পরিজনরাও বেআইনি ভাবে হাসপাতালের শৌচাগার ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। কিন্তু ব্যবহার বিধি না থাকায় প্রতিটি শৌচাগার নরককুণ্ড। নোংরা-বর্জ্য জমে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটির শৌচাগারের পাইপ লাইন একাধিক বার অবরুদ্ধ হয়ে গিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলেছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, শৌচাগারে কমোডের মধ্যে কলার খোসা, আবর্জনা ফেলে সেটিকে ডাস্টবিনে পরিণত করে ফেলা হয়েছে। অন্য শৌচাগার গুলির মেঝেতে বিষ্ঠা-নোংরায় ভর্তি। মেঝের ঢাল ঠিক না থাকায় নোংরা জল ঢুকছে ওয়ার্ডে। দুর্গন্ধে দম বন্ধ করা পরিবেশ।

রোগীর পরিজন হপনা সরেন, পার্বতী মাহাতোদের বক্তব্য, “এমন শৌচাগারের ব্যবহার আমাদের জানা নেই। তাই চিকিৎসাধীন বাড়ির লোকের ও আমাদের ভীষণই সমস্যা হচ্ছে।” হাসপাতালের এক নার্স বলেন, “সকালবেলা ডিউটি থাকলে শৌচাগারের দুর্গন্ধে বসা যায় না।” সুপার স্পেশ্যালিটির বিশাল ভবন সাফ রাখার মতো পর্যাপ্ত কর্মী নেই। একটি বেসরকারি সংস্থার ঠিকা কর্মীদের দিয়ে পরিষ্কার করানো হয়। উপযুক্ত নজরদারি ও সাফাইয়ের অভাবে মাস খানেকের মধ্যেই ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিঁড়ির কোণে চাপচাপ পানের পিক আর গুটখার থুতুর দাগ। শৌচাগারের নোংরা জল পায়ে পায়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে মাখামাখি।

ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “সিংহভাগ রোগী কমোডের ব্যবহার জানেন না বলে সমস্যা। শৌচাগারের সমস্যার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” তিনি জানান, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hospital Unclean
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE