Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালে গিয়ে প্রহৃত বাম প্রার্থী, প্রশ্নে নিরাপত্তা

ভোটে সন্ত্রাস রুখতে জেলায় ইতিমধ্যেই চলে এসেছে আধা সামরিক বাহিনী। নজরদারিও চলছে। আর তারই মধ্যে শাসক দলের হাতে এ বার সরকারি হাসপাতালেই আক্রান্ত হলেন বাম প্রার্থী তাপস সিংহ।

জখম তাপস সিংহ (বাঁ দিকে), প্রচারে ইব্রাহিম আলি (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

জখম তাপস সিংহ (বাঁ দিকে), প্রচারে ইব্রাহিম আলি (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল ও সুব্রত গুহ
তমলুক ও দিঘা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

ভোটে সন্ত্রাস রুখতে জেলায় ইতিমধ্যেই চলে এসেছে আধা সামরিক বাহিনী। নজরদারিও চলছে। আর তারই মধ্যে শাসক দলের হাতে এ বার সরকারি হাসপাতালেই আক্রান্ত হলেন বাম প্রার্থী তাপস সিংহ।

রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বুধবার রাতে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন অসুস্থদের পড়ুয়াদের। তাপসবাবু ও তাঁর সঙ্গী সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিককে হাসপাতালের স্যালাইন স্ট্যান্ড, বাঁশ, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আর অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকেই। তাপসবাবুর ডান চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে। এছা়ড়া কপালেও গভীর ক্ষত হয়েছে। বুধবার রাতেই রামনগরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে আক্রান্ত দুই নেতার চিকিৎসা করানো হয়। বৃহস্পতি সন্ধ্যায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে মেদিনীপুরের একটি নার্সিং হোমে।

বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে এক কদম এগিয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। তার দিন দু’য়েক পর কয়েকটি আসনে বামেরা প্রার্থী ঘোষণা করে। রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, পিছিয়ে নয়। বরং কিছুটা গুছিয়েই শুরু করল বামেরা। কিন্তু যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়েছিল, তাঁদেরও প্রচারের ময়দানে খুব একটা চোখে পড়েনি। তাও কিছুটা কাজ শুরু করেছিলেন রামনগরের প্রার্থী তাপসবাবু। প্রচারের শুরুতেই তিনি আক্রান্ত হলেন।

কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?

তাপসবাবু জানিয়েছেন, বুধবার দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখেন কয়েকশো অসুস্থ পড়ুয়াকে সামলাতে নাস্তানবুদ হচ্ছেন একজন চিকিৎসক। হাসপাতালের গেট থেকে মাত্র তিরিশ মিটার দূরে একটি ওষুধ দোকানে হাসপাতালেরই অন্য এক চিকিৎসক টাকার বিনিময়ে পড়ুয়াদের চিকিৎসা করছেন। তাপসবাবু তাঁকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করার কথা জানান। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘ওই চিকিৎসককে নিয়ে হাসপাতালে ঢোকামাত্রই ভেতরে থাকা তৃণমূল নেতা ও রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত পাত্র রে রে করে তেড়ে আসেন।’’ এরপর হাসপাতালের বাইরে জড়ো হয়ে থাকা তৃণমূলের সুশান্ত পাত্র ও কুড়ি পঁচিশ দুষ্কৃতী বেধড়ক মারতে থাকে তাঁদের।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘শাসক দলের দুষ্কৃতীদের হাতে বিরোধী প্রার্থীর আক্রান্তের প্রতিবাদে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে দলের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভার ডাক দেওয়া হয়।” তবে অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শিশির অধিকারী লেন, “ঘটনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাই এব্যা পারে কিছু বলতে পারব না।’’ জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানান, রামনগরের সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহ দিঘা মোহনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়েরও করা হচ্ছে। নিবার্চন কমিশনের নির্দেশ মতো কোনও প্রার্থী নিরাপত্তার জন্য আবেদন জানালে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তারও ব্যবস্থা হবে।”

তবে এইসব বিপত্তির মাঝেও জেলায় চণ্ডীপুরের সিপিএম প্রার্থী মঙ্গলেন্দু প্রধান, কাঁথি উত্তরের সিপিএম প্রার্থী চক্রধর মাইকাপ, পাঁশকুড়া পূর্বের সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলি ও পাঁশকুড়া পশ্চিমের সিপিআই প্রার্থী চিত্তদাস ঠাকুর, পটাশপুরের সিপিআই প্রার্থী মাখন নায়েকরা প্রচার শুরু করেছে । কিন্তু শাসক দল তৃণমূলের শক্তঘাটি পূর্ব মেদিনীপুরে যেভাবে এবার বাম ও কংগ্রেস জোট বেঁধে রীতিমত টক্কর দেওয়ার কথা ভেবেছিল রাজনৈতিক মহল শুরুতেই তা ধাক্কা খেয়েছে।

তবে জেলা বাম নেতৃত্বের একাংশ দাবি করেন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ভোট গ্রহণের দিন একবারে শেষধাপে আগামী ৫ মে। ফলে ভোট প্রচারের জন্য এখনও অনেকটা সময় আছে। তবে অন্যান্য বারের মত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট যেভাবে এগিয়ে থাকত এবার তা না হওয়ায় কর্মী-সমর্থকদের কাছেও কিছুটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। আর শাসক দল তৃনমূল প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ায় চাপ আরও বেড়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি অবশ্য বলেন, ‘‘যেসব কেন্দ্রে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়েছে সেখানে প্রার্থীরা ইতিমধ্যে এলাকায় প্রচার শুরু করেছ । আর তাতে শাসক দল ভয় পেয়েছে বলেই রামনগরে আমাদের প্রার্থী তাপস সিংহের উপর তৃণমূলের স্থানীয় নেতা – কর্মীরা নৃশংসভাবে আক্রমণ করেছে। যে বিধানসভা কেন্দ্রে এখনও প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়নি কয়েকদিনের মধ্যে তা ঘোষণা হবে।’’

বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণায় জেলার নন্দীগ্রাম, হলদিয়া ও দক্ষিণ কাঁথি এই তিনটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ বার বাডতি উদ্যমে বামেরা ভোটের ময়দানে নামেন কি না সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

digha hospital tapas sinha attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE