Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ডাইনি অপবাদে খুন

অন্যত্র বাড়ি খুঁজছিলেন অতিষ্ঠ তরুবালার পরিবার

বৃদ্ধার মাথা কেটে খুনের ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছিল খুনির পরিবারের অনেকেই। প্রাথমিক ভাবে এমনই অনুমান পুলিশের।

এখনও লেগে রয়েছে রক্ত।

এখনও লেগে রয়েছে রক্ত।

দেবরাজ ঘোষ
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৩
Share: Save:

বৃদ্ধার মাথা কেটে খুনের ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছিল খুনির পরিবারের অনেকেই। প্রাথমিক ভাবে এমনই অনুমান পুলিশের। তবে ডাইন অপবাদে খুন, নাকি সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ— তা নিয়ে ধন্দ রয়েই গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সাঁকরাইল থানার বনপুরার নওগাঁয় কাটারির কোপে তরুবালা বেরা ওরফে চেঁপিদেবীর (৬৫) মাথা কেটে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর সম্পর্কিত এক নাতি রাধাকান্ত বেরার বিরুদ্ধে। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতের বিচারক অনিরুদ্ধ সাহা রাধাকান্তকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘কাটা মাথাটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আরও কেউ জড়িত কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় সচেতনতা মূলক প্রচারও শুরু করছে পুলিশ।’’

জানা গিয়েছে, এর আগেও বহুবার তরুবালাদেবীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে রাধাকান্ত। সে কথা স্বীকার করেছেন তরুবালার স্বামী ভৈরব বেরাও। এ দিন ভৈরব বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ কাটারি হাতে ঘরে ঢুকে আমার স্ত্রীকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যায়। এর আগেও এমন করেছে ও। আবার ছেড়েও দিয়েছে। কিন্তু এ বার একেবারে মাথাটা কেটে ফেলল।’’ ভৈরবের অভিযোগ, এর আগে তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেছেন রাধাকান্তর বাবা মিহির বেরা ও কাকা হাগরু বেরা। হাগরু আবার তৃণমূলের বুথ সভাপতি। মাস কয়েক আগেই ছাগল নিয়ে বিবাদের জেরে তরুবালাদেবীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। সাঁকরাইল থানায় গিয়ে মুচলেকাও দিয়েছিলেন মিহির, হাগরু। খুনের ঘটনার পর থেকেই তাঁরা বেপাত্তা। ভৈরব বলেন, ‘‘অতিষ্ঠ হয়ে অন্যত্র বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিছুদিনের মধ্যেই উঠে যেতাম! কিন্তু রাধাকান্তকে দিয়ে খুন করিয়ে দিল পরিবারের লোকেরা।’’ ভৈরবের অভিযোগের ভিত্তিতে তরুবালাদেবী খুনের ঘটনায় পারিবারিক বা সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।

তারুবালা বেরা।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, রাধাকান্তর মানসিক সমস্যা ছিল। কিন্তু সে জন্য চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা কখনও করেনি পরিবার। বরং তাঁরা ভরসা করত জানগুরুকে। এ দিন রাধাকান্তর আর এক ঠাকুমাও বেমালুম বলে ফেললেন, ‘‘চেঁপি (তরুবালা) ডাইন, আমার নাতিটাকে খাচ্ছিল।’’ অথচ সদর ব্লক রোহিণী থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে বনপুরা। ঝকঝকে সবুজ গ্রামে রয়েছে বনপুরা তারকনাথ হাইস্কুল। প্রায় ৬০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। ভূত, ডাইন, জানগুরুতে বিশ্বাস নেই তাদের। কিন্তু আগের প্রজন্মের বিশ্বাস অটুট। নবম শ্রেণির লিমা মাহাতো বলে, ‘‘খুনের কথা শুনেছি। আমরা ডাইনে বিশ্বাস করি না। কিন্তু গ্রামের সকলে তো জানগুরুকেই বিশ্বাস করে।’’

ঝাড়গ্রামের মাহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। কয়েক দিনের মধ্যে রোহিণীর বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা মূলক কর্মসূচি শুরু করছি।’’ এ দিকে খুনের ঘটনায় তৃণমূলের বুথ সভাপতির নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে শাসকদলও। রোহিণী ৪ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল যুব সভাপতি মথুর মাহাতো বলেন, ‘‘এ সব সহ্য করা যায় না। অভিযোগ প্রমাণ হলে উপযুক্ত শাস্তিও হবে।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tarubala Harassed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE