Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সিন্ডিকেটের ছায়া, নির্বিকার প্রশাসন

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি বেদখল দিঘায়

জমি স্বাস্থ্য দফতরের। কর্তৃত্ব করছে রোগী কল্যাণ সমিতি। কারণ মাথার উপর হাত শাসক দলের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বকলমে রামনগর -১ পঞ্চায়েত সমিতি গ্রাস করছে অঘোর কামিনী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি।

দোকান ঘরের পিছন থেকে তিন ফুট জায়গা ছে়ড়ে নতুন পাঁচিল গাঁথা হয়েছে। ছবি: সোহম গুহ

দোকান ঘরের পিছন থেকে তিন ফুট জায়গা ছে়ড়ে নতুন পাঁচিল গাঁথা হয়েছে। ছবি: সোহম গুহ

সুব্রত গুহ
দিঘা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০১:৩৮
Share: Save:

জমি স্বাস্থ্য দফতরের। কর্তৃত্ব করছে রোগী কল্যাণ সমিতি। কারণ মাথার উপর হাত শাসক দলের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বকলমে রামনগর -১ পঞ্চায়েত সমিতি গ্রাস করছে অঘোর কামিনী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি না নিয়েই সীমানা পাঁচিল ভেঙে দিয়ে, রাস্তার জন্য জমি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রোগী কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে। রামনগর-১ ব্লকের অঘোর কামিনী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই ঘটনার বিষয়ে ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। লাভ হয়নি।

রামনগর-১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বালা জানান, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই রয়েছে শিবালয় রোড। সে রাস্তা দেখভালের দায়িত্ব দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের। সম্প্রতি রাস্তা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারির একটি বৈঠক করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগী কল্যাণ সমিতি। সিদ্ধান্ত হয় রাস্তার ধারে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পশ্চিমপ্রান্তের চৌহদ্দির ভিতরের তিনফুট জায়গা খালি করে দেওয়া হবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি না-নিয়েই শুরু হয়ে যায় পুরনো পাঁচিল ভাঙার কাজ। এমনকী তিন ফুট করে জমি ছেড়ে নতুন করে সীমানা পাঁচিল গাঁথার কাজও শুরু করে রোগী কল্যাণ সমিতি।

প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি রামনগর-১ বিডিও ঊর্মি দে সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। অভিযোগ পত্রের প্রতিলিপি নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, কাঁথির সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও রামনগরের বিধায়ক তথা রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি অখিল গিরিকেও পাঠানো হয়। তারপর ওই পাঁচিল নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পর ফের কাজ শুরু হয়েছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা এর মধ্যে সিন্ডিকেটের ছায়া দেখছেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের মায়ের নামে তৈরি অঘোর কামিনী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের একাংশের মদতেই। অভিযোগ, ওই রাস্তার ধারে রয়েছে বেশ কিছু গুমটি দোকান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি নিয়ে তাঁদের কিছুটা পিছিয়ে দোকান ঘর করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এই অভিযোগের ছবি যেন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায় রামনগরের বিধায়ক ও ব্লক রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি অখিল গিরির বক্তব্যে। অখিলবাবু বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পশ্চিমপ্রান্তে শিবালয় রোডের ধারে প্রচুর গুমটি দোকান রয়েছে। ফলে রাস্তাটি ঘিঞ্জি। সম্প্রতি শিবালয় রোড সংস্কারের কাজ হচ্ছে। দোকানপাট তিনফুট পেছনে সরিয়ে দিলে রাস্তাটি চওড়া হবে। তাই পড়ে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতে সীমানা পাঁচিল মাত্র তিনফুট পিছিয়ে নতুন পাঁচিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রামনগর -১ পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে নতুন সীমানা পাঁচিলও তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।”

এই নতুন পাঁচিলের বিরুদ্ধে ২৪ মে ফের বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। চিঠি দেওয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগের অধিকর্তাকেও। অভিযোগ, তার পরও প্রশাসনিকভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে পাঁচিল তোলার কাজের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। কাঁথির সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চন্দ্রশেখর মাইতিও সে কথা স্বীকার করেছেন, “রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি দেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতর অনুমতি দেয়নি। ফলে কোনও এই কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি।” তিনি জানান, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য মহকুমাশাসক ও বিডিও-কে জানানো হয়েছে।

কাঁথির মহকুমাশাসক সরিৎ ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ‘‘ভোটের আগেই বিষয়টি মহকুমা প্রশাসনের নজরে আসে। তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ফের নির্মাণ শুরু হয়েছে বলে কোনও খবর পাইনি।” রামনগর-১ বিডিও বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ পেয়ে অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে জন্য দিঘা মোহনা থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” থানাও স্বীকার করেছে বিডিও-র নির্দেশের কথা। বুধবারই পুলিশের দাবি করেছিল, দু’একদিনের মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিন ফুট ভিতরে দিব্যি দাঁড়িয়ে রয়েছে নতুন বেআইনি পাঁচিলটি। একটি লোহার দরজাও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগীকল্যাণ সমিতির অন্যতম সদস্য সুশান্ত পাত্র দাবি করেন, ‘‘ওই জমি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নয়। ‘সড়ক দফতর’-এর সঙ্গে কথা বলেই হাসপাতালের চৌহদ্দির জমি বের করে সীমানা পাঁচিল তৈরি করা হয়েছে। মোটেও তা অবৈধ বা বেআইনি নয়।’’

স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি ছাড়া এ ভাবে জায়গা দখল করা যায় কি? উত্তরে অখিলবাবু বলেন, “জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে ও তাঁরাও মৌখিক সম্মতিও দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Digha Health center illegally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE