ইন্দার বামুনপাড়ায় মৃত অভিষেক দে (ইনসেটে)-র শোকার্ত পরিজনেরা
সপ্তাহ খানেক আগে নতুন বাইক কিনেছিলেন। রোজ বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বেরোচ্ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যাতেও মোটরবাইক নিয়েই এক বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। আর ফেরেননি ইন্দার বছর একুশের যুবক অভিষেক দে। শনিবার দুপুরে বাড়িতে এসেছে দেহ।
খড়্গপুরের পুরীগেট উড়ালপুলে বাইক দুর্ঘটনায় শুক্রবার রাতে প্রাণ গিয়েছে অভিষেক ও তাঁর বন্ধু এস ঈশ্বর রাওয়ের। মৃতদের পরিবার অবশ্য একে দুর্ঘটনা বলে মানতে নারাজ। তাদের দাবি, পিছন থেকে কোনও গাড়ির ধাক্কা মেরেছে।
খরিদার রজকপল্লি ও ইন্দার বামুনপাড়ার মধ্যে দুরত্ব মেরেকেটে ৫ কিলোমিটার। শনিবার সকালে দুই এলাকাই ছিল শোকস্তব্ধ। মৃত দু’জনের বাড়িতেই আত্মীয়-পড়শিদের ভিড়। সকলের একটাই প্রশ্ন— কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল?
ঈশ্বর পিতৃহীন। দুই দাদার সংসারে মাকে নিয়ে থাকতেন। মেজদা রামা রাও রেশন দোকানে কাজ করেন। বড়দা তুলসীর ছোটখাট ঠিকাদারির ব্যবসা রয়েছে। মাস কয়েক হল ঈশ্বর রেল কারখানায় ঠিকাশ্রমিকের কাজে ঢুকেছিলেন। মজুরি থেকে মাকে কিছুটা দিয়ে বাকি টাকা বন্ধুদের সঙ্গে খরচ করতেন। কাঁদতে কাঁদতে ঈশ্বরের মা এস লীলা বলেন, “শুক্রবার বিকেলে চারশো টাকা দিয়ে বলল, ঘুরে আসছি। কিন্তু সেই যে গেল আর এল না।” কিন্তু অভিষেকের নতুন বাইক কী ভাবে উড়ালপুলের গার্ডওয়ালে ধাক্কা মারল তা বুঝতে পারছেন না ঈশ্বরের মা। ঈশ্বরের মেজদা এস রামা রাওয়ের আবার ধারণা, “অভিষেকের বাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছে। মনে হচ্ছে কেউ পিছন থেকে ধাক্কা মারায় এই দুর্ঘটনা হয়েছে।”
খরিদার বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত এস ঈশ্বর রাওয়ের মা।
শনিবার ছবিগুলি তুলেছেন রামপ্রসাদ সাউ।
বামুনপাড়ায় অভিষেকদের বাড়ি মেরামত হচ্ছে। তাই পরিজনেরা ইন্দার রামকৃষ্ণপল্লিতে ভাড়া বাড়িতে থাকছিলেন। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বারবার কান্নায় মুর্ছা গিয়েছেন অভিষেকের মা রিনা দে। বাবা পেশায় চিত্রশিল্পী স্বপন দে ব্যস্ত ছিলেন ময়নাতদন্ত নিয়ে। বাড়িতে ছিলেন ছোটভাই অরিত্র। জানা গেল, নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন অভিষেক। দেহসৌষ্ঠবে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে ছেলেকে দামি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন স্বপনবাবু। কিন্তু সেই বাইকেই এমন দুর্ঘটনা মানতে পারছেন না পরিজনেরা। মা রিনাদেবী বলেন, “আমার ছেলে খুব ভাল বাইক চালাত। ওর হাতে এমন দুর্ঘটনা হতে পারেনা। ছেলেকে কেউ মেরে ফেলেছে।” অভিষেক খুব ভাল বাইক চালাতেন বলে জানান তাঁর বন্ধুবান্ধবরাও।
কিন্তু কেউ কেন মারবে অভিষেককে? পরিজনদের অভিযোগ, মাস ছ’য়েক আগে একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে অভিষেককে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। রামনবমীর রাতে পাড়ার পুজো থেকে কেউ ডেকে নিয়ে গিয়ে ওঁদের খুন করেছে বলে মনে করছেন পরিজনেরা। এ দিন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে মৃত দু’জনের ময়নাতদন্ত হয়। খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে দুর্ঘটনাতেই ওই দুই যুবক মারা গিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy