Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পুলিশি অভিযানে ঢিলেমি

হেলমেট বিধির পঞ্চত্বপ্রাপ্তি

মোটর সাইকেল আরোহীদের হেলমেট ব্যবহারে বাধ্য করতে প্রচারের অন্ত নেই। ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর বার্তা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন এলাকায় ঘটা করে কর্মসূচিও হচ্ছে। বলা হচ্ছে, হেলমেট না থাকলে পাম্পে তেলও মিলবে না।কিন্তু নিয়ম মানা হচ্ছে কই!

হেলমেট ছাড়াই দিব্যি মিলছে পেট্রোল। খড়্গপুরের বোগদার একটি পাম্পে।— রামপ্রসাদ সাউ।

হেলমেট ছাড়াই দিব্যি মিলছে পেট্রোল। খড়্গপুরের বোগদার একটি পাম্পে।— রামপ্রসাদ সাউ।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

মোটর সাইকেল আরোহীদের হেলমেট ব্যবহারে বাধ্য করতে প্রচারের অন্ত নেই। ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর বার্তা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন এলাকায় ঘটা করে কর্মসূচিও হচ্ছে। বলা হচ্ছে, হেলমেট না থাকলে পাম্পে তেলও মিলবে না।কিন্তু নিয়ম মানা হচ্ছে কই!

খড়্গপুর শহরের পেট্রোল পাম্পগুলিতে হেলমেট ছাড়াই দিব্যি মিলছে জ্বালানি। শহরের ইন্দা, বোগদা, প্রেমবাজার, মালঞ্চ— সর্বত্র এক ছবি। নিয়ম মাফিক হেলমেট-হীন আরোহীকে পেট্রোল দিলে পাম্প মালিকের জরিমানা হওয়া উচিত। কিন্তু তা-ও নিয়মেই আটকে। রেলশহরের পথে হেলমেট-হীন বাইক আরোহীদের দাপাদাপিও চলছে আগের মতোই।

সকাল এগারোটা। জনবহুল মালঞ্চ রোড দিয়ে দ্রুত গতিতে একেবেঁকে চলছে একটি মোটরসাইকেল। আরোহী তিনজন। অথচ কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। এই ছবিই বলে দিচ্ছে বেপরোয়া বাইক আরোহীদের এখনও কাবু করতে পারেনি পুলিশি ধরপাকড়। ১২ জুলাইয়ের পরে পুলিশ যে ভাবে জোরকদমে অভিযানে নেমেছিল তা এখন অনেকটাই শিথিল। সেই সময়ই হেলমেট-হীন বাইক আরোহীদের ধরে জরিমানা এবং হেলমেট ছাড়া পেট্রোল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পুলিশ। তারপর ৭ অগস্ট খড়্গপুরে যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে খড়্গপুর পুরসভা ‘সেফ ড্রাইভ’ কর্মসূচি করেছিল। ওই দিনই পুলিশের পক্ষ থেকেও খোদ জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের নেতৃত্বে ‘সেফ ড্রাইভ’-এর বার্তা দিয়ে হয় বাইক র‍্যালি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পেট্রোল পাম্প হোক বা ব্যস্ত রাস্তা, হেলমেট-হীনদের ধরপাকড়ে পুলিশি অভিযানে এখন ভাটার টান।

আর সেই সুযোগেই পুরনো বদভ্যাসে ফিরছে শহর। গত জুলাই-অগস্টে যেখানে শহরের প্রায় ৬০ শতাংশ বাইক আরোহী হেলমেট ব্যবহার করছিলেন, এখন তা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে প্রায় ৪০ শতাংশে। অনেক পেট্রোল পাম্পে আবার মালিকের পক্ষ থেকে একটি হেলমেট রাখা হয়েছে। বাইক আরোহী এসে সেই হেলমেট গলিয়েই তেল নিচ্ছেন। নিয়মের ফাঁক গলে বিপদ তাই কাটছে না।

কিন্তু কেন নির্দেশ মানা হচ্ছে না?

ইন্দা কলেজের কাছে এক পেট্রোল পাম্পের মালিক পাপ্পু অটোয়াল বলেন, “বাইক আরোহীরা যদি হেলমেট না পড়েন আমরা কী করতে পারি। তা ছাড়া, আমি নির্দেশিকা কার্যকর করলে হেলমেট-হীন বাইক আরোহীরা অন্য পাম্পে চলে যাবেন। কে আর খদ্দের হারাতে চায় বলুন। তাই হেলমেট ছাড়াই পেট্রোল দিচ্ছি।’’ একই সঙ্গে তিনি মানছেন, এই নির্দেশ কার্যকর করতে পেট্রোল পাম্পগুলিতে অভিযান চালানো জরুরি। কিন্তু তা হচ্ছে না।

পুলিশি অভিযান শিথিল হয়ে যাওয়ার ক্ষুব্ধ একাংশ শহরবাসীও। ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা লক্ষ্মণ যাদবের কথায়, “যখন শহরে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছিল তখনই বুঝেছিলাম এই নিয়ম দু’দিন। এই অভিযানে কিছু হেলমেট ব্যবসায়ীর মুনাফা হতে পারে কিন্তু সাধারণ মানুষের কী হয়েছে জানি না।’’ তাই শহরবাসীর দাবি, পুলিশ লাগাতার অভিযান চালাক। পেট্রোল পাম্পের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

পুলিশ অবশ্য অভিযান শিথিলের ক্ষেত্রে বর্ষার দোহাই দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, বর্ষা চলে আসায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া, জনবহুল সড়কে অভিযান চালালে যানজট হয়। তবে ফের অভিযান হবে এবং পেট্রোল পাম্পগুলিতেও হানা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police helmet Petrol Law
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE