দু-দু’জন স্যার তমলুকে স্কুলের পড়ুয়াদের খো-খো খেলাতে নিয়ে গিয়েছেন। দু’জন মহিষাদল বইমেলায় ক্যুইজ ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার জন্য পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দিতে ব্যস্ত। দু’জন অনুপস্থিত। অগত্যা মুখ্যমন্ত্রীর সই করা শুভেচ্ছা কার্ড আনতে টিফিনের পরেই ছুটলেন এক সহশিক্ষক। বিকেলে স্কুলছুটির পর সেইসব কার্ড পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হল।
শুক্রবার মহিষাদল ব্লকের লক্ষা হাইস্কুলে দেখা গেল এমনই ছবি। শুধু এই স্কুলই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ড সংগ্রহ করে তা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিলি করা নিয়ে এ দিন কমবেশি সব স্কুলই বিপাকে পড়ে। অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষই জানান, একেই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কম। তার উপর, পরিদর্শকের অফিস থেকে ওই ‘শুভেচ্ছাবার্তা’র কার্ড সংগ্রহ করতে কোনও না কোনও শিক্ষককে পাঠাতে হবে। ফলে ওই শিক্ষকের ক্লাস নিয়েও সমস্যা হয়েছে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দিতে হবে পড়ুয়াদের। রাজ্য সরকারের এমন নির্দেশিকা ‘পালন’ করতে গিয়েই কার্যত হিমশিম অবস্থা স্কুলগুলির। সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর না চড়ালেও, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই এমন ‘অভিনব’ পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্ত স্কুলকে স্কুল- পরিদর্শকের অফিস থেকে ‘শুভেচ্ছাকার্ড’ সংগ্রহ করতে হবে। তারপর স্কুলে বসে অভিভাবকের নাম লিখে পড়ুয়াদের হাতে সেইসব কার্ড বিতরণ করতে হবে। সরকারি নির্দেশিকায় আরও জানানো হয়েছে, শুক্রবারের মধ্যে সমস্ত শুভেচ্ছা কার্ডের কার্ড বিলির কাজ শেষ করতে হবে। শুধু তাই নয়, কার্ড বিলির পর পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে উল্লাসের ছবি সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শকের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করতে হবে।
জেলার অধিকাংশ স্কুলে চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া এখনও চলছে। তা ছাড়া স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া নিয়েও ব্যস্ত অনেক স্কুল। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাকার্ড পৌঁছে দেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকমহল। অনেকেরই বক্তব্য, এমনিতে স্কুলে ক্লাস ছাড়াও নানা কাজের চাপ রয়েছে। তাই হাতে দু’একদিন সময় পেলে ভাল হত। লক্ষা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস পাহাড়ী বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্ড দিতে না পারলে বিতর্ক দেখা দিতে পারে। তাই শুক্রবার স্কুলছুটির আগে পড়ুয়াদের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ প্রতীক বেরা নামে এক সহ শিক্ষকের দাবি, নির্দিষ্ট সূচী মেনে এযাবৎ স্কুল চলত। তবে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ ‘সফল’ করার ব্যাপারটি সতর্কভাবে সারতে হচ্ছে।’’ এমনকী ক্লাস পন্ড করে এই কাজ করতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের এমন উদ্যোগকে শাসক দলের ‘রাজনীতি’ বলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মানস কুমার রায় বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে এভাবে তৃণমূল নেত্রী স্কুলপড়ুয়াদের মারফৎ বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করে দিলেন। এটা খুবই নিন্দনীয়।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল কুমার মাইতি বলেন, ‘‘এটা শিক্ষাক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা।’’ যদিও বিরোধীদের এমন মন্তব্যে কান দিতে রাজি নয় তৃণমূলের শিক্ষা সেল। সংগঠনের জেলা সভাপতি জয়ন্ত কুমার দাস বলেন, ‘‘স্কুলে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ড দেওয়া কোনও সমস্যা নয়। যাঁরা এসব নিয়ে রাজনীতি দেখছেন, তাঁরা রাজনীতির আঙিনা থেকেই হারিয়ে গিয়েছেন।’’
জেলা স্কুল পরিদর্শক চাপেশ্বর সর্দারের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছি। পরে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy