Advertisement
E-Paper

বিচার পেতে আইন পাশ, রোকেয়ার লড়াই চলছেই

পণ আর যৌতুকের দাবিতে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে হওয়া অত্যাচার, নির্যাতিতা বধূর মৃত্যু, কিংবা থানায় ১৪৮ (এ) ধারায় দায়ের হওয়া মামলা— এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৭:৩৪
রোকেয়া খান। — নিজস্ব চিত্র।

রোকেয়া খান। — নিজস্ব চিত্র।

পণ আর যৌতুকের দাবিতে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে হওয়া অত্যাচার, নির্যাতিতা বধূর মৃত্যু, কিংবা থানায় ১৪৮ (এ) ধারায় দায়ের হওয়া মামলা— এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। কিন্তু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আর সন্তানের অধিকার দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া বধূ নিজেই আইনজীবী হয়ে সুবিচারের জন্য লড়ছেন, এমনটা বোধহয় বিরল।

তিনি কাঁথি আদালতের আইনজীবী রোকেয়া খান। ১৬ বছর আগে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁর একমাত্র শিশুপুত্রকে কেড়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তার আগে রোকেয়ার ভাগ্যে জুটেছিল উপুর্যপরি মারধর। একমাত্র ছেলেকে ফিরে পেতে ২০০০ সালেই আইনি লড়াইতে নেমেছিলেন রোকেয়া। প্রাথমিক ভাবে যে আইনজীবী নিয়োগ করেছিলেন, তাঁর কাজে ভরসা রাখতে পারেননি। বেঁচে থাকার তাগিদে শুরু করেছিলেন পড়াশোনা। ২০১১ সালে উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাশ করেন। তারপর নিজের মামলা নিজেই লড়ছেন। কিন্তু ১৪ জুন কাঁথি আদালত তাঁর আনা বধূ নির্যাতনের মামলা খারিজ করে দিয়েছে। তবে হাল ছাড়তে নারাজ রোকেয়া খান। শুক্রবার কাঁথি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনে বসে তিনি জানান, “রায়ের প্রতিলিপি এখনও হাতে পাইনি। পেলে উচ্চ আদালতে আবেদন করব।”

রোকেয়ার অভিযোগ, ১৯৯৩ সালে বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়েছিল শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার। তাঁর স্বামী রামনগর থানার খোজাবাড় গ্রামের বাসিন্দা নাসির আলি পেশায় মাদ্রাসা শিক্ষক। বিয়ের সময় লক্ষাধিক টাকা যৌতুক দেওয়ার পরেও অতিরিক্ত যৌতুকের দাবিতে রোকেয়ার উপর অত্যাচার শুরু হত। এরপর তাঁর বাবা মেয়ের নামে দশ কাঠা জমিও লিখে দেন। ১৯৯৫ সালে রোকেয়ার ছেলে হলে সাময়িক অত্যাচার বন্ধ হয়। কিন্তু বছর তিনেক পরেই ছেলে সাহিলকে কেড়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয় রোকেয়াকে।

স্বামী নাসির আলি, ভাসুর নাসিম আলি, শ্বশুর খাদেম আলি, শাশুড়ির কসিমন বিবি ও বড় জা কোহিনুর বিবির বিরুদ্ধে রামনগর থানায় বধূ নির্যাতনের মামলা করেন রোকেয়া। পাশাপাশি শুরু করেন পড়াশোনা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ রোকেয়া ২০০৬ সালে কাঁথি কলেজ থেকে স্নাতক হন। ২০১১ সালে আইন পাশ করেন।

এ দিন রোকেয়া দাবি করেছেন শ্বশুর ও ভাসুর পুলিশকর্মী হওয়াতেও পুলিশ চার্জশিটে তাদের নাম বাদ দিয়েছে। ফলে মামলা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। এ দিকে রোকেয়ার স্বামী নাসির আলিও দাবি করেছেন, যে দিনের ঘটনা উল্লেখ করে রোকেয়া মামলা করেছেন, সে দিন তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাঁর দাদা সরকারি কাজে ছিলেন। ফলে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করা যায় না। যে ছেলেকে নিয়ে এত কিছু। সেই সাহিল এখন কলকাতায় থাকেন। আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা করেন। রোকেয়া বলেন, ‘‘মুসলিম আইন অনুযায়ী সাত বছরের পর ছেলে বাবার কাছেই থাকবে। কিন্তু আমি ওকে দেখতে চেয়েছিলাম। মাঝেমধ্যে দেখা হত। কিন্তু আমার লড়াই শেষ হয়নি।’’

rokeya khan justice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy