Advertisement
E-Paper

নথি ছাড়াই বিকোচ্ছে সিম কার্ড

শুধু মোবাইলের সার্ভিস সেন্টার নয়— পানের দোকান, মনোহারি দোকান, এমনকী ভুসিমাল সামগ্রীর দোকানেও মিলছে মোবাইলের সিম কার্ড। অভিযোগ, পরিচয়পত্র ছাড়াই দেওয়া হচ্ছে সিম কার্ড। শুধু সিমের নির্ধারিত দামের থেকে একটু বেশি টাকা দিলেই হল। দিন কয়েক আগে খড়্গপুরের খড়িদার এক দোকান থেকে মোবাইলের সিম কার্ড কেনেন স্থানীয় এক বাসিন্দা।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০০:৪২

শুধু মোবাইলের সার্ভিস সেন্টার নয়— পানের দোকান, মনোহারি দোকান, এমনকী ভুসিমাল সামগ্রীর দোকানেও মিলছে মোবাইলের সিম কার্ড। অভিযোগ, পরিচয়পত্র ছাড়াই দেওয়া হচ্ছে সিম কার্ড। শুধু সিমের নির্ধারিত দামের থেকে একটু বেশি টাকা দিলেই হল।

দিন কয়েক আগে খড়্গপুরের খড়িদার এক দোকান থেকে মোবাইলের সিম কার্ড কেনেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘সপ্তাহ খানেক আগে মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সিম কার্ড কিনতে খরিদার একটি দোকানে গিয়েছিলাম। ওরা আমার থেকে টাকা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সিম কার্ড দিয়ে দিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দোকানদারকে আমি জিজ্ঞেস করি, পরিচয়পত্র হিসেবে ভোটার কার্ড, ছবি লাগবে না? দোকানদার বলল, ‘প্রি-অ্যাক্টিভেটেড’ সিম কার্ড আছে। এখন চালান, পরে ‘ডক্যুমেন্টস’ দিয়ে যাবেন। এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে এখনও সংযোগ তো বিচ্ছিন্ন হয়নি। আর কেউ পরিচয়পত্র চাইতেও আসেনি।”

খড়্গপুর শহরের অলিগলিতে গজিয়ে উঠেছে এ রকম অনেক সিম বিক্রির দোকান। অভিযোগ, এই সব দোকানে কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই দেদার সিম কার্ড বিকোচ্ছে। ‘টার্গেট’ পূরণ করতে গিয়ে সিম বিক্রেতারাও নিয়ম মানছেন না। অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে নথিবিহীন সিমকার্ডের ক্ষেত্রে অন্য কোনও ব্যক্তির পরিচয়পত্র জমা দেওয়া হচ্ছে। অথচ যে ব্যক্তির পরিচয়পত্র জমা দেওয়া হচ্ছে, তিনি অনেকক্ষেত্রে বিষয়টি জানতেও পারছেন না। বিভিন্ন বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার উদাসীনতাও এ জন্য দায়ী বলে অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের।

খড়্গপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৭০০টি দোকানে বিভিন্ন সংস্থার মোবাইলের সিম কার্ড বিক্রি হয়। এর অর্ধেকেরও বেশি দোকানে পরিচয়পত্র না নিয়েই সিম কার্ড বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন সিম কার্ড পেতে হলে গ্রাহককে একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। পূরণ করা ফর্মের সঙ্গে যে কোনও পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ফোনে সিম কার্ড লাগানোর পর সংযোগ চালু হতেও কিছুটা সময় লাগে।

অভিযোগ, বর্তমানে বিভিন্ন মোবাইল পরিষেবা সংস্থা সিম বিক্রেতাদের ‘প্রি অ্যাক্টিভেটেড সিম’ দেয়। ‘প্রি অ্যাক্টিভেটেড সিম’ আগে থেকেই চালু করা থাকে। এই সিম ফোনে লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই সংযোগ চালু হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, এই সিম দেওয়ার সময় গ্রাহকের পরিচয়পত্র জমা নেওয়া বাধ্যতামূলক। যদিও নিয়ম বাঁধা থাকছে খাতায়-কলমেই। একটু বেশি টাকা দিয়ে সিম বিক্রির লোভে বিক্রেতারাও নিয়ম ভাঙছেন বলে অভিযোগ। পরে অন্য কোনও গ্রাহকের জমা দেওয়া ছবি ও পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি তৈরি করে মোবাইল পরিষেবা সংস্থায় জমা দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল সংস্থার উদাসীনতাও দায়ী বলে অভিযোগ। সালুয়ায় সিম কার্ড বিক্রেতা দোলন ভঞ্জ বলেন, “এখানে অনেকেই পরিচয়পত্র ছাড়া সিম কার্ড চান। আমি দিই না। তবে শুনেছি কিছু দোকানে এ ভাবেই কার্ড বিক্রি চলে।”

মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, এক সময়ে একটি সিম কার্ড বিক্রি করলে এক জন ‘ডিস্ট্রিবিউটর’ ২০ টাকা পেতেন। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫-৬ টাকায়। অথচ এখন একজন ‘ডিস্ট্রিবিউটর’কে প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার সিম কার্ড বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে। আর এই চাপের কারণেই নথি ছাড়া সিম কার্ড বিক্রির প্রবণতা বাড়ছে। অভিযোগ, অনেকে দুষ্কর্মের উদ্দেশেও সিম কার্ড কিনছেন। আর প্রয়োজন ফুরোলেই সেই কার্ড ভেঙে ফেলে দিচ্ছেন। শহরের এক ডিস্ট্রিবিউটর গগণ জৈন বলেন, “ভুয়ো সিম কার্ড বিক্রির কথা শুনেছি। কিছু গ্রাহক আমাদের কাছেও এমন সিম কার্ড চান। তবে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।”

নথি ছাড়াই সিম কার্ড বিক্রির জেরে মোবাইল চোর ধরতেও হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “মোবাইল চুরির অভিয়োগের ভিত্তিতে তদন্তে নামলে হিমসিম খেতে হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীরা চুরি যাওয়া মোবাইলের সিম ফেলে দিয়ে অন্য সিম কার্ড লাগায়। মোবাইলে লাগানো সিম কার্ডের গ্রাহকের পরিচয় হয়তো অন্য। ফলে চোরকে পাকড়াও করা মুশকিল হয়।’’ এ বিষয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ‘ট্রাই’-র নির্দেশিকা মেনে পুলিশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। আমার কাছে কোনও অভিযোগ এলেও খতিয়ে দেখব।”

Sim card Document
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy