Advertisement
E-Paper

নগদহীন লেনদেন! ওরলি স্বচ্ছন্দ বিনিময় প্রথায়

নোটবন্দির দু’বছর পার। সময় হল ফিরে দেখার। ঘাটালের সোনার কারিগরেরা কাজ হারিয়ে ফিরেছিলেন গ্রামে। কেমন আছেন তাঁরা। টাঁকশালের কর্মীরা সড়গড় হলেন ই-লেনদেনে? কেমন আছে জঙ্গলমহল। খোঁজ নিল আনন্দবাজার নোট বন্দি করে দু’বছর আগে ‘ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নগদ ছাড়া লেনদেনে সড়গড় হবে ভারতবাসী— এমনই ছিল আশা। 

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নোট বন্দি করে দু’বছর আগে ‘ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নগদ ছাড়া লেনদেনে সড়গড় হবে ভারতবাসী— এমনই ছিল আশা।

নগদ ছাড়া লেনদেন হয় ঝাড়গ্রাম জেলার বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলের ওড়লি-র মতো প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলিতে। এখানে মানুষের হাতে সবসময় টাকা থাকে না। তখন কেউ মুরগির বিনিময়ে বাসন অথবা জামাকাপড় কেনেন। কেউ আবার লাউ, কপির মতো খেতের আনাজ দিয়ে সাবান কেনেন। মনোহারি বিক্রেতা শেখ আলতাফ বললেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের অনেকে এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সাইকেলে মনোহারি জিনিসপত্র গ্রামে গ্রামে ফেরি করেন। বাসিন্দাদের কাছে সব সময় বেশি টাকা থাকে না। তখন ধান, চাল, সর্ষে, মুরগি, আনাজের বিনিময়ে জিনিসপত্র দিতে হয়। খদ্দেরকে তো ফেরানো যায় না।’’

মাথায় আনাজের ঝুড়ি নিয়ে ঝাড়গ্রামের হাটের পথে যাচ্ছিলেন সাপধরা গ্রামের বিমলা মাহাতো। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে? অবাক চোখে ষাটোর্ধ্ব বিমলা বললেন, “একশো দিনের কাজে পোষায় না। মজুরি পেতে দেরি হয়। তাই চাষিদের কাছ থেকে ধারে আনাজ কিনে বাজারে বিক্রি করে দু’টো পয়সা লাভ করি। ওসব ব্যাঙ্ক-ট্যাঙ্ক বুঝি না।” বিমলার গ্রাম থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের দূরত্ব মেরেকেটে কিলোমিটার দশেক।

আরও পড়ুন: নোংরা ঘেঁটেও পড়ার স্বপ্নে বুঁদ

প্রশাসনের দাবি, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্তত একটি করে ব্যাঙ্কের শাখা চালু হয়েছে। বেলপাহাড়ির শিমূলপাল অঞ্চলের পাহাড় জঙ্গল ঘেরা মাকড়ভুলা গ্রাম থেকে নিকটবর্তী একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। বহু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের শাখা হয়তো হয়েছে। কিন্তু অভ্যেস বদলেছে কি? উঠছে প্রশ্ন। মাকড়ভুলার সুরেন্দ্র সিংহ এক সময় খাদানে পাথর ভাঙার কাজ করতেন। এখন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় পাথর খাদান বন্ধ হয় যাওয়ায় জঙ্গলের ডালপাতা সংগ্রহ করে হাটে বিক্রি করে দিন গুজরান করেন করেন তিনি। সুরেন্দ্রর কথায়, “রোজগারের বাড়তি টাকা পয়সা এলাকার গরিবগুর্বো মানুষগুলি ঘরে বাঁশের কোটরে রাখেন। যাঁরা একটু সম্পন্ন তাঁরা ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন।”

ব্যাঙ্কের শাখা থাক বা না থাক। রাজনীতি আছে তার জায়গাতেই। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলেন, “কেন্দ্রের নোট বাতিলের কোনও সুফলই মানুষ পাননি। আর কীসের ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া? জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী কেন্দ্রের মিথ্যা প্রচার ও ভুল সিদ্ধান্ত।”

আরও পড়ুন: যেমন খুশি চলো, এটাই নিয়ম হলুদ ট্যাক্সির

বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “কেন্দ্রের সব প্রকল্প রাজ্যে এসে ধাক্কা খেয়েছে। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার জন্য ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার সুফল জঙ্গলমহলবাসী পাচ্ছেন না।” ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া দূর অস্ত। ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির প্রতারণার জেরে জঙ্গলমহলের একাংশে এখন ফের মাথা চাড়া দিয়েছে মহাজনী কারবার। ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যে সমবায় আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ায় জঙ্গলমহেলর গরিব বাসিন্দাদের একমাত্র বিকল্প মহাজনী প্রথা। এলাকার প্রান্তিক চাষিরা চড়া সুদে মহাজনের থেকে টাকা ধার নিয়ে চাষ করছেন।”

গ্রামে না হয় অনেক সমস্যা। কিন্তু কী অবস্থা শহরের? ঝাড়গ্রাম শহরের একটি প্রসিদ্ধ বই দোকানের মালিক চন্দন দত্ত বলেন, “আমার দোকানে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে দাম মেটানোর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মাসে এক-দু’জনের বেশি কেউ কার্ডে দাম মেটান না। সবই নগদে কারবার হয়।”

জঙ্গলমহলে নগদহীন লেনদেন আকাশকুসুম কল্পনা? ওড়লি বলছে কল্পনা নয়। ঘোর বাস্তব।

Jhargram Demonetisation নোটবন্দি ঝাড়গ্রাম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy