Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফের স্কুলের চাল খেল দাঁতাল

মিড ডে মিলের পাতে বৈচিত্র্য আনার জন্য স্কুল লাগোয়া জমিতে হরেক রকম সব্জি ফলিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ‘হাতি ঠাকুরে’র দাপাদাপিতে আপাতত তছনছ হয়ে গিয়েছে সাধের ‘কিচেন গার্ডেন’। রবিবার ভোররাতে ঝাড়গ্রামের নেদাবহড়া আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের স্টোর রুমের দু’টি লোহার দরজা ভেঙে চালের খোঁজ করছিল একটি হাতি।

ভেঙে গিয়েছে লোহার দরজা।  —নিজস্ব চিত্র।

ভেঙে গিয়েছে লোহার দরজা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৭
Share: Save:

মিড ডে মিলের পাতে বৈচিত্র্য আনার জন্য স্কুল লাগোয়া জমিতে হরেক রকম সব্জি ফলিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ‘হাতি ঠাকুরে’র দাপাদাপিতে আপাতত তছনছ হয়ে গিয়েছে সাধের ‘কিচেন গার্ডেন’।

রবিবার ভোররাতে ঝাড়গ্রামের নেদাবহড়া আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের স্টোর রুমের দু’টি লোহার দরজা ভেঙে চালের খোঁজ করছিল একটি হাতি। তবে শেষ পর্যন্ত চালের বস্তা লুঠতে পারেনি হাতিটি। আসলে বস্তাগুলি দাঁড় করানো ছিল দরজার একেবারে উল্টো দিকে দেওয়াল গা ঘেঁষে। তাই বস্তা অবধি শুঁড় পৌঁছয়নি। কিন্তু দস্যি দাঁতালটি দূর থেকেই শুঁড় দিয়ে শুষে নিয়ে কিছুটা চাল খেয়ে নেয়।

গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় কিচেন গার্ডেনটি তছনছ করে দিয়ে চম্পট দেয় হাতিটি। স্কুল প্রাঙ্গণের বাহারি ফুল গাছের একাধিক টব হাতির পায়ের চাপে চৌচির হয়ে গিয়েছে।

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত তিনটে নাগাদ একটি দাঁতাল রেসিডেন্ট হাতি গড়শালবনির জঙ্গলের দিক থেকে নেদাবহড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। জঙ্গলঘেরা গ্রামের এক প্রান্তে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণ পাত্র, বুদ্ধেশ্বর মাহাতো, দিলীপ মাহাতো, সুবোধ মাহাতোরা জানালেন, তখনও চারিদিকে নিকষ অন্ধকার। হঠাৎ বিকট আওয়াজে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়।

নারায়ণবাবু বলেন, “স্টোর রুমের লোহার প্রথম দরজাটি উপড়ে ভাঙার পরে ভিতরের দ্বিতীয় দরজাটিও ভেঙে ফেলে হাতিটি। চালের বস্তার নাগাল না পেয়ে স্টোর রুমের পিছনের জানালাটিও ভাঙার চেষ্টা করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্টোর রুমের পিছনের দেওয়াল। ততক্ষণে গ্রামবাসীরা হুলা নিয়ে হাতিটিকে তাড়াতে শুরু করেন।” বাসিন্দারা জানালেন, তাড়া খেয়ে হাতিটি স্কুল প্রাঙ্গণের ভিতরে টিচার্স রুমের পাশে কিচেন গার্ডেনটিতে তাণ্ডব চালায়। একের পর এক কলাগাছ উপড়ে খেয়ে নেয়। সাবাড় করে দেয় ফলন্ত ভুট্টা ও গাছের কাঁঠাল। সব্জি বাগানের বেগুন ও ঢেঁড়শের গাছ তছনছ গড় শালবনির জঙ্গলের দিকে পালায়।

স্কুলের টিচার ইনচার্জ শঙ্করকুমার বেরা বলেন, “চারটি বস্তায় ২ কুইন্ট্যাল চাল ছিল। আর একটি ছোট বস্তায় ২৫ কেজির মতো চাল ছিল। ছোট বস্তাটি খোলা ছিল বলে শুঁড় দিয়ে খানিকটা চাল শুষে নিয়েছে হাতি। আপাতত ক্লাসঘরে চালের বস্তাগুলি রেখেছি। এরপরও হাতি হামলা চালালে কী হবে জানি না।”

স্কুল পড়ুয়া উমা পাতর, দেবজিত্‌ মাহাতো, রাজীব মাহাতোদের আক্ষেপ, “হাতির হানায় আমাদের স্কুল প্রাঙ্গণের চেহারাটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই মিলে অনেক যত্ন নিয়ে কিচেন
গার্ডেনটি করেছিলাম।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, এর আগেও বেশ কয়েক বার হাতি ঢুকেছিল নেদাবহড়ায়। কিন্তু গ্রামবাসীরা প্রতিবারই হাতিকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। রবিবার ভোর রাতে স্কুলের পিছনের জঙ্গল দিয়ে হাতিটি আচমকা ঢুকে পড়ায় বাসিন্দারা
বুঝতে পারেননি।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চারটি রেসিডেন্সিয়াল হাতি নেদাবহড়ার কাছাকাছি কেঁউদিশোলের জঙ্গলে রয়েছে। একটি হাতি ভোর রাতে নেদাবহড়ায় হামলা চালায়। শনিবার গভীর রাতে শিরষি, জারুলিয়া ও বোরিয়া গ্রামেও তিনটি মাটির বাড়ি ভেঙেছে
রেসিডেন্ট হাতিরা।

মাস খানেক ধরে রেসিডেন্ট হাতির হামলার নতুন লক্ষ্য হয়ে উঠেছে মিড ডে মিলের স্টোর রুমগুলি। গত এক মাসে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের বিভিন্ন বনাঞ্চল এলাকার প্রাথমিক স্কুল, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ও অঙ্গনওয়াড়ির মজুত-ঘরের লোহার দরজা ভেঙে চালের বস্তা লুঠ করেছে হাতিরা। এমন ঘটনার পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির কর্তৃপক্ষ মহা সমস্যায় পড়েছেন। কীভাবে হাতির নজর এড়িয়ে চাল রাখবেন, তা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে নানা ধরনের পরামর্শ ও পদক্ষেপ করার ভাবনা চিন্তা হচ্ছে। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বন দফতর খেদানোর চেষ্টা করেও রেসিডেন্ট হাতিগুলিকে এলাকাছাড়া করতে পারছে না। রোজই কোনও না কোনও গ্রামে হানা দিচ্ছে হাতিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE