অভাবের সংসার। বাবা বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য বাড়ি বাড়ি পুজো করেন। মা গৌরিদেবী একটি মেসে রান্না করেন। টেনেটুনে কষ্টে সংসার চলে। তবু হাল ছাড়েনি সৌরভ ভট্টাচার্য। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে সে। চোখে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপকে বাস্তবায়িত করতে গেলে যে আরও লড়াই সামনে রয়েছে, তা ভেবেই চিন্তায় সৌরভ। মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের ছাত্র সৌরভ এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪২০ নম্বর পেয়েছে। গণিত (স্নাতক) বিভাগে মেদিনীপুর কলেজে পড়তে চায় সে। তবে তার চিন্তা, দারিদ্র্যের মধ্যে পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হবে কি না। গণিত (অনার্স)-এ পড়াশোনার খরচ তো অনেক। এই পড়াশোনার খরচ কে দেবে? সৌরভের কথায়, “পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। জানি না কতদূর এগোতে পারব। দেখা যাক কি হয়।”
অন্য দিকে, মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটি হাইস্কুলের ছাত্র সৌমেন হেলানী এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪১৪ নম্বর পেয়েছে। সৌমেনের বাড়ি রাঙামাটির কবরডাঙায়। তার বাবা বরুণ হেলানী পুরোহিত। বরুণবাবুর সামান্য আয় থেকেই সংসার চলে। দারিদ্র্যের সংসারে চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না। সামান্য জিনিসও অনেক কষ্ট করে পেতে হয়। এমন সংসারে সৌমেনের ফল যেন মুখে হাসি ফুটিয়েছে। একইসঙ্গে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেড়েছে দুশ্চিন্তাও। দারিদ্র্য স্বপ্নপূরণে কাঁটা হবে না তো। মেদিনীপুর কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়তে চায় সৌমেন। সে বলছিল, “যা পড়াশোনা করতে পেরেছি, তাতে এই নম্বরই আশা করেছিলাম। এর থেকে খুব একটা বেশি নয়।’’ সামনে আরও বড় লড়াই। এ বার নিজের স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছতে হবে। সৌমেনের আশা, অদম্য জেদ ও হার না মনোভাবই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আনন্দপুর হাইস্কুলের ছাত্রী সুচরিতা রায়ও এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৫৩ নম্বর পেয়েছে। সুচরিতা শিক্ষিকা হতে চায়। দারিদ্র্যকে হেলায় হারিয়ে সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে লড়াই ছাড়তে নারাজ সুচরিতা। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল এই আশা জিইয়ে রেখেছে। বাবা নলিনীবাবু গৃহশিক্ষক। তাঁর ‘টোল’ও আছে। মা অনিতাদেবী গৃহবধূ। সামান্য আয়েই সংসার চলে। দুই বোন। সুচরিতা ছোট। মেদিনীপুর কলেজে গণিতে অনার্স নিয়ে পড়তে চায় আনন্দপুরের এই ছাত্রী। সুচিরতার কথায়, “গণিত নিয়ে পড়ার ইচ্ছে তো রয়েছে। দেখা যাক কী হয়।” নলিনীবাবুর কথায়, “আর্থিক সমস্যার মধ্যেই সংসার চলে। জানি না মেয়ের ইচ্ছেপূরণ করতে পারব কি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পড়াশোনার খরচ তো রয়েছে। ওর দিদিও ভাল নম্বর পেয়েছিল। তবে ভাল কলেজে ভর্তি করতে পারিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy