Advertisement
E-Paper

আলুর ধসা রোগের পর ধানে ঝলসা, শঙ্কায় চাষিরা

আলুর ‘ধসা’ রোগের পর বোরো ধানে ছত্রাক ঘটিত ‘ঝলসা’ রোগের লক্ষ্মণ দেখা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও এগরা কৃষি মহকুমা এলাকায়।

অমিত কর মহাপাত্র

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০১:১৯

আলুর ‘ধসা’ রোগের পর বোরো ধানে ছত্রাক ঘটিত ‘ঝলসা’ রোগের লক্ষ্মণ দেখা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও এগরা কৃষি মহকুমা এলাকায়। এমন জোড়া ফলায় বিদ্ধ হয়ে শঙ্কিত চাষিরা। কৃষি আধিকারিকদেরও আশঙ্কা, ঝলসার প্রকোপে এই মরশুমে ধানের কম ফলনের পাশাপাশি ধানের গুণগত মান খারাপ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের সচেতন করতে লিফলেট বিলি-সহ কৃষি আধিকারিকদের গ্রামে গ্রামে পাঠিয়ে সচেতন করার কর্মসূচি নিয়েছে জেলা কৃষি দফতর।

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বিগত ক’য়েক বছরে সমস্যা এত ব্যাপক হয়নি। ঝলসা হলেও তা সীমাবদ্ধ ছিল ৫ শতাংশের মধ্যে। দফতরের পর্যবেক্ষণ, যে সব এলাকায় বন্যা ও অতিবর্ষণে আমন ধানের ক্ষতি হয়েছিল সেখানে এবং যে সব জমিতে মোটা ধান চাষ হয়েছে সেই দুই ক্ষেত্রেই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।

‘পাইরিকুলাইরা ওরাইজি’ নামের ছত্রাকের কারণেই এই রোগ হয় বোরো মরসুমে। এমনই মত কৃষি দফতরের আধিকারিকদের। ধানের বীজ, জমির আগাছা ও বায়ুর মাধ্যমেই এই ছত্রাক চাষজমিতে আসে। তাঁদের বক্তব্য, এই রোগের মূল কারণ দিনে ও রাতের সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তারতম্য। তাপমাত্রার এই পার্থক্য যত বেশি হয়, ততই ধানগাছ আক্রমণ করার অনুকূল পরিবেশ পায় ছত্রাকগুলি। মেঘলা আবহাওয়া, ভোরের কুয়াশাও রোগের অনুকূল। নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম সার মাটিতে সুষমমাত্রায় প্রয়োগ না করলে অর্থাৎ, মাটিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে গাছের পাতা-কাণ্ড নরম ও বেশি সবুজ হয়। তাতে রোগ ছড়ায় বেশি। তা ছাড়া, অনুখাদ্য (জিঙ্ক) প্রয়োগ না হলে বা ঘাটতি হলে এই রোগ দেখা যায়।

আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, এ বছর শীতের প্রভাব বেশি দিন ধরেই রয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য বেড়েছে। হয়েছে বৃষ্টিও। কখনও মেঘলা আবহাওয়া, কখনও ভোরের কুয়াশা। তা ছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বর্ষা এবং বর্ষার পরে দীর্ঘ দিন জলে ডুবে থাকায় আমন ধানের গাছ ও আগাছা পচে মাটিতে জৈব উপাদান বাড়িয়েছে। অর্থাৎ, মাটিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা অতিরিক্ত ছিল। তার উপরে চাষিরা ফের নাইট্রোজেন ঘটিত রাসয়নিক সার দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। ফলে গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে ছত্রাক ও কীটাণু আক্রমণের পথ সহজ হয়েছে। বর্ষার পর মাটি ঠিকমতো শুকোনোর আগেই ফের বোরো চাষ হওয়ায় তৈরি হয়েছিল ‘ঝলসা’র যথার্থ পরিবেশ।

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, তমলুক ও এগরা এই দুই মহকুমায় ঝলসা রোগে আক্রান্ত চাষ-জমির পরিমাণ প্রায় ১০-১৫ শতাংশ। তমলুকের সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মানস প্রধান জানান, তমলুক ব্লকের অনন্তপুর ২, নীলকণ্ঠা, শ্রীরামপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতগুলি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এই ব্লকগুলির ২৫-৩০ শতাংশ জমি রোগের প্রকোপে। নন্দকুমার ব্লকে ১০-১৫ শতাংশ, শহিদ মাতঙ্গিনী, কোলাঘাট, মহিষাদল, সুতাহাটা ব্লকের গড়ে ১০ শতাংশ জমি এখনও ঝলসার প্রকোপে রয়েছে। তবে, অন্য ব্লকগুলিতে এর পরিমাণ কিছুটা কম।

এগরার সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) কল্লোলকুমার পাল জানান, ভগবানপুর ১, পটাশপুর ১ ও ২ ব্লকে এর হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তাঁর আশঙ্কা, “আগামী ৭-১৫ দিনের মধ্যে ধানের শিস বের হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ঝলসা রোগে গাছের পাতা ও গাঁট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিসে এই এই রোগের প্রকোপ হলে ফসলই হবে না।” তবে গত এক সপ্তাহে রোগের হার কিছুটা কমেছে বলে কৃষি দফতরের মত। তমলুকের সহ-কৃষি অধিকর্তা মলয়কুমার মেইকাপ বলেন, “গাছে ছত্রাক নাশক ও অনুখাদ্য ব্যবহারের সঙ্গে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় ও পাতা শক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা শুধরেছে। তবে, শিষ বেরনোর সময় ফের রোগের আশঙ্কা রয়েছে।”

তমলুকের কাজীচক গ্রামের কৃষক দিলীপ সামন্ত জানান, দু’বিঘা জমি তিনি চাষ করলেও ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টি হওয়ার পর ১৫ ডেসিমেল জমিতে এই সমস্যা শুরু হয়েছে। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের আলুয়াচক গ্রামের চাষি শঙ্কর মণ্ডলের দু’বিঘা জমির মধ্যে ২৪ ডেসিমেল জমি ঝলসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “কৃষি দফতরের সহযোগিতা পেয়েছি। সতর্ক আছি যাতে রোগ না ছড়ায়।” নন্দকুমার ব্লকের ঠাকুরচক গ্রামের কৃষক কালিশঙ্কর দিন্দারও একই সমস্যা। খেতের বীজতলা শোধন না করা ও রাসয়নিক সার প্রয়োগে ত্রুটির জন্য যে ঝলসা রোগ হয়েছে তা বুঝেছেন পটাশপুর ১ ব্লকের কাটরঙ্কা গ্রামের দিলীপ মণ্ডলও।

এই পরিস্থিতিতে কৃষি দফতরের দাবি, তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থাকতে ছত্রাকনাশক, অনুখাদ্য ও লিফলেট বিলি করছেন। ব্লক কৃষি আধিকারিক ও কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের গ্রামে গ্রামে পাঠিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

amit kar mahapatra disease potato
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy