Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের, সন্ধ্যার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ

দু’দিন আগেই মেদিনীপুরে দলের সভায় প্রচারে সময় দেওয়া নিয়ে অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। এ বার এগরায় প্রচারে এসে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন মেদিনীপুর কেন্দ্রের তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। প্রার্থী কেন আগে অন্যত্র জনসভা করলেন, তাদের এলাকায় এলেন না, সেই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার সকালে এগরার হট্টনগর শিবমন্দির এলাকায় সন্ধ্যাদেবীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় হাজার খানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। প্রার্থীকে গাড়ি থেকে নামতে দেওয়া হবে না বলে পথ আটকে দাঁড়ায় তারা। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন এগরার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা দলের শহর সভাপতি তপনকান্তি কর ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়ন্ত সাউ। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল তৃণমূলের দলীয় পতাকা।

মঙ্গলবার এগরার হট্টনগর মন্দিরের সামনে সন্ধ্যা রায়ের গাড়ি ঘিরে তৃণমূল সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: কৌশিক মিশ্র।

মঙ্গলবার এগরার হট্টনগর মন্দিরের সামনে সন্ধ্যা রায়ের গাড়ি ঘিরে তৃণমূল সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: কৌশিক মিশ্র।

কৌশিক মিশ্র
এগরা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

দু’দিন আগেই মেদিনীপুরে দলের সভায় প্রচারে সময় দেওয়া নিয়ে অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। এ বার এগরায় প্রচারে এসে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন মেদিনীপুর কেন্দ্রের তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায়।

প্রার্থী কেন আগে অন্যত্র জনসভা করলেন, তাদের এলাকায় এলেন না, সেই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার সকালে এগরার হট্টনগর শিবমন্দির এলাকায় সন্ধ্যাদেবীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় হাজার খানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। প্রার্থীকে গাড়ি থেকে নামতে দেওয়া হবে না বলে পথ আটকে দাঁড়ায় তারা। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন এগরার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা দলের শহর সভাপতি তপনকান্তি কর ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়ন্ত সাউ। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল তৃণমূলের দলীয় পতাকা।

শেষমেশ পরিস্থিতি সামলায় পুলিশ। সন্ধ্যাদেবীর সফর-সঙ্গী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সময় কয়েকজন সাংবাদিককে ঠেলাঠেলি করা হয় বলে অভিযোগ। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে, দুপুর ১টা নাগাদ অবস্থা আয়ত্তে আসে। বিরক্ত মুখে গাড়ি থেকে নেমে মন্দিরে পুজো দিতে যান সন্ধ্যাদেবী।

গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে বিক্ষোভের কথা মেনে নিয়েছেন এগরার তৃণমূল বিধায়ক তথা লোকসভা নির্বাচনে দলের তরফে এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সমরেশ দাস। তিনি বলেন, “এ ভাবে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে না আনলেই ভাল হত। সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনাও অনভিপ্রেত। আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। দলীয় স্তরে তদন্ত হবে।” তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীও মানছেন, “দলের পক্ষে ঘটনাটি ঠিক হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করব।”

এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে হঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “ওখানে ভোটের দেরি আছে। আমাদের আশা, তার আগে সব মনোমালিন্য ঘুচে যাবে। সকলে মিলে সন্ধ্যাদির পাশে দাঁড়াবেন।” সন্ধ্যাদেবী অবশ্য বিক্ষোভের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। অভিনেত্রী-প্রার্থীর বক্তব্য, “আমি তো গাড়ির মধ্যে ছিলাম। তাই কিছু বুঝতে পারিনি।”

জেলাগত ভাবে পূর্ব মেদিনীপুরে পড়লেও এগরা বিধানসভা এলাকা মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এ দিন সকালে মেদিনীপুর থেকে এগরায় প্রচারে আসেন সন্ধ্যাদেবী। সঙ্গে ছিলেন প্রদ্যোৎবাবু। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এগরা শহরের দিঘা মোড়ে জনসভা করেন সন্ধ্যাদেবী। সেখানে হাজির ছিলেন শিশিরবাবু, সমরেশবাবু-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতারা। সভা সেরে সাড়ে ১২টা নাগাদ হট্টনগর শিবমন্দিরে পুজো দিতে যান সন্ধ্যাদেবী। সঙ্গে ছিলেন শুধু প্রদ্যোৎবাবু। সেখানেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন অভিনেত্রী।

বিক্ষোভকারীদের তরফে প্রাক্তন পুরপ্রধান তপনকান্তি করের অভিযোগ, “ঠিক ছিল সন্ধ্যাদেবী প্রথমে হট্টনগর মন্দিরে পুজো দেবেন। তারপর জনসভায় যাবেন। সেই মতো মন্দিরের কাছে হাজার খানেক লোক জড়ো হয়েছিল। কিন্তু বিধায়ক (সমরেশবাবু) প্রার্থীকে আগে এখানে আসতে দেননি। আমাদের হেয় করতে এমনটা করা হয়েছে।” সমরেশবাবু জানিয়েছেন, আগে দিঘা মোড়েই সভা হওয়ার কথা ছিল। তপনবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা অবশ্য সেই সভায় ছিলেন না।

এগরায় দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিরোধ রয়েছে। এক দিকে আছে বিধায়ক সমরেশবাবু এবং বর্তমান পুরপ্রধান স্বপন নায়কের গোষ্ঠী এবং অন্য দিকে প্রাক্তন পুরপ্রধান তপনবাবু ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়ন্ত সাউয়ের গোষ্ঠী। তৃণমূল সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন কংগ্রেসের পুরপ্রধান পদে থাকা স্বপনবাবু ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূলে যোগ দেন। এর ফলে এগরা পুরসভাও দখল করে তৃণমূল। সমরেশবাবুর হাত ধরে স্বপনবাবুর এই দলবদল তপনবাবু ও তাঁর অনুগামীরা মানতে পারেননি। সেই সূত্রেই দুই গোষ্ঠীর বিরোধ। স্বপনবাবু এ দিন এগরায় ছিলেন না। ফোনে তিনি বলেন, “আমি বাইরে আছি। তবে এটুকু বলতে পারি, দলের মধ্যে থেকে এ ভাবে দলের বিরোধিতা ঠিক নয়।”

এ দিন বিক্ষোভের পরে মন্দিরে পুজো দিয়ে এগরা শহরের একটি লজে যান সন্ধ্যাদেবী। দুপুরে সেখানে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে কুদি এবং বালিঘাই এলাকায় আরও দু’টি জনসভা করেন তিনি। প্রতিটি সভাতেই তাঁর আহ্বান ছিল, “আমি রাজনীতির লোক নই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে এখানে এসেছি। মানুষের সেবা করতে চাই। দিল্লিতে গিয়ে এই রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়তে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kaushik mishra egra sandhya roy votebadyi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE