Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জমি-জট, নতুন প্রাথমিক স্কুলের লক্ষ্যমাত্রা অধরা

নতুন প্রাথমিক স্কুল চালুর লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। জেলায় সব মিলিয়ে ১২১টি প্রাথমিক স্কুল চালুর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য হয়েছিল। এর মধ্যে ৯০টি স্কুল শিক্ষা দফতরের অনুমোদন পেয়েছে। বাকি ৩১টি কবে অনুমোদন পাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সমস্যাটা কোথায়? জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ ক্ষেত্রেও জমি-জটই বাধা। কোন জমির উপর নতুন স্কুল গড়ে উঠবে, তা চূড়ান্ত হচ্ছে না।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০০:২১
Share: Save:

নতুন প্রাথমিক স্কুল চালুর লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। জেলায় সব মিলিয়ে ১২১টি প্রাথমিক স্কুল চালুর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য হয়েছিল। এর মধ্যে ৯০টি স্কুল শিক্ষা দফতরের অনুমোদন পেয়েছে। বাকি ৩১টি কবে অনুমোদন পাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সমস্যাটা কোথায়?

জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ ক্ষেত্রেও জমি-জটই বাধা। কোন জমির উপর নতুন স্কুল গড়ে উঠবে, তা চূড়ান্ত হচ্ছে না। সমস্যার কথা মানছেন কর্তৃপক্ষও। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “কয়েক’টি ক্ষেত্রে জমির সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে জমির সংস্থান হয়েছে। আশা করি, শীঘ্রই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।” জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি নারায়ণ সাঁতরা বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপও করা হচ্ছে। মার্চের মধ্যে বাকি স্কুলগুলোও স্কুল শিক্ষা দফতরের অনুমোদন পেয়ে যাবে বলে আশা করছি।”

২০০৯-’১০ আর্থিক বছরে ১২টি এবং ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে ১০৯টি, সব মিলিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন ১২১টি প্রাথমিক স্কুল চালুর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়। কিন্তু ৩১টিই এখনও বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরের অনুমোদন পায়নি। জানা গিয়েছে, এই ৩১টির মধ্যে একটির প্রস্তাব বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরের বিচারাধীন রয়েছে। ৩টির প্রস্তাব ওই দফতরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ২টির ক্ষেত্রে জমিদাতা পাওয়া গিয়েছে। দ্রুতই জমি হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। ১৬টির ক্ষেত্রে খাস জমিতে স্কুল তৈরির জন্য ব্লকস্তরের পরিদর্শন দলের প্রস্তাব ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিচারাধীন রয়েছে। বাকি ৯টির জমি চিহ্ণিত করার ক্ষেত্রে ব্লকস্তরের পরিদর্শন দল জানিয়েছে। সেই মতো কাজও শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বলেন, “স্কুলগুলো দ্রুত চালু নিয়ে জেলায় স্থায়ী সমিতির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৪ হাজার ৮৬২টি। স্থায়ী প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ১৪ হাজার ৭৩২ জন। পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ৪০৩ জন। অর্থাৎ, সংখ্যাটা সব মিলিয়ে ১৬ হাজার ১৩৫। সেখানে জেলায় প্রাথমিকের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। আগে স্কুলে ৪০ জন ছাত্রপিছু এক জন করে শিক্ষক থাকার কথা ছিল। এখন সেখানে ৩০ জন ছাত্রপিছু এক জন করে শিক্ষক থাকার কথা। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, পশ্চিম মেদিনীপুরে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রয়েছে। তা-ও প্রত্যন্ত গ্রামের অধিকাংশ স্কুল নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। দেখা যায়, এমন অনেক স্কুল রয়েছে যেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি অথচ শিক্ষক সংখ্যা কম। আবার এমন অনেক স্কুল রয়েছে যেখানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা কম অথচ শিক্ষক সংখ্যা তুলনায় বেশি। বদলির ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতি না-মানার ফলেই এই সমস্যা বলে মনে করে বিভিন্ন মহল।

শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়েছে। কিন্তু বহু স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো তিমিরে। এক শিক্ষকের কথায়, “আমাদের তো পিওন-দারোয়ান-কেরানি-মিড ডে মিল, সব কাজই সামলাতে হয়! এক-দু’জন শিক্ষক থাকলে স্কুল চলবে কী করে? চারটি শ্রেণিতে পড়াব কী করে?” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নারায়ণবাবুর অবশ্য দাবি, “ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে সামঞ্জস্য আনতে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে।” কেমন?

সংসদ-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বেশি সংখ্যক শিক্ষক রয়েছে, এমন স্কুলের এক বা একাধিক শিক্ষককে আশপাশের স্কুলে গিয়ে পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক কর্তা মানছেন, “একটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪০, আর শিক্ষক ৪ জন, পাশের একটি স্কুলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১৫০, আর শিক্ষক ২ জন, এ তো হতে পারে না।”

কোথায় কোথায় নতুন প্রাথমিক স্কুল তৈরির প্রয়োজন রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে আগেই রাজ্যের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। স্কুলগুলো চালু হলে স্কুলছুটের সংখ্যা কমবে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। কারণ, অনেকেই দূরের স্কুলে ছেলেমেয়েকে পাঠাতে চান না। বাবা-মা কাজের খোঁজে অন্যত্র চলে যান। ছেলেমেয়ে ঘরেই থাকে। গ্রামের আশপাশে স্কুল চালু হলে এই সব ছেলেমেয়েও স্কুল আসবে। সাধারণত, এক কিলোমিটার ছাড়া একটি করে প্রাথমিক স্কুল থাকার কথা। কিন্তু জেলায় তা নেই। ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে রাজ্যে সব মিলিয়ে ৪২৭টি নতুন প্রাথমিক স্কুল তৈরির কথা ছিল। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ১০৯টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE