১৭ দিনের মাথায় মেদিনীপুরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুনের কিনারা করল পুলিশ। ধরা পড়ল অন্যতম এক অভিযুক্ত। আগেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুনে এই তিনজনই জড়িত। ধৃতদের জেল হেফাজতে রেখে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করা হবে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “এই ঘটনা শহরে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল। কম সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের ধরা আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ওই ব্যবসায়ীর কাছে এক লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল। তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। তাই অভিযুক্তরা তাঁকে খুন করেন।” ধৃতদের সঙ্গে বড় কোনও দুষ্টচক্রের যোগ রয়েছে কি না, তদন্তে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
ঘটনাটি ঘটে ২৫ জুন, বুধবার রাতে। সে দিন বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্তিনা-নাইজিরিয়া খেলা ছিল। দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে খুন হন স্বপন পাণ্ডব নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। বাড়ি পাটনাবাজারে। বটতলাচকে ওই ব্যবসায়ীর সোনার দোকান ছিল। বাড়ির কিছু দূরেই তাঁকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তিন দুষ্কৃতী একটি মোটর বাইকে ছিল। গুলি করে খুন করার পর ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মোটর বাইকটি নিয়েও চম্পট দেয় তারা। সাম্প্রতিক অতীতে মেদিনীপুর শহরে খুনের ঘটনা ঘটলেও এ ভাবে কোনও স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হতে হয়নি। ফলে উদ্বেগ ছড়ায়। প্রশ্নের মুখে পড়ে শহরের আইনশৃঙ্খলা।
তদন্তে নেমে রাহুল হাতি এবং শম্ভু নায়েক নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রেলসেতুর পাশ থেকে ব্যবসায়ীর বাইকটিও মেলে। শুক্রবার ধরা পড়ে বাবু মাইতি ওরফে কুচন। ধৃত রাহুলের বাড়ি হর্ষণদীঘিতে। শম্ভুর বাড়ি তলকুইতে। অন্যদিকে, বাবুর বাড়ি বেহারাপাড়ায়। বেহারাপাড়া এবং হর্ষণদীঘি এই দুই এলাকাই বটতলাচকের আশপাশে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাহুলই ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা চেয়েছিল। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। এই দু’জনের মধ্যে টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে এ বার দাবি মতো টাকা দিতে অস্বীকার করেন স্বপনবাবু। এরপরই তাঁকে খুন করার পরিকল্পনা করে রাহুলরা। পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন কয়েক আগেও দ্বারিবাঁধ এলাকায় ওই ব্যবসায়ীকে ধরে খুন করার পরিকল্পনা ছিল দুষ্কৃতীদের। তবে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ২৫ জুন বিকেলে ধর্মার একটি ধাবায় বসে নতুন করে পরিকল্পনা করে রাহুল-শম্ভু। সেই মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর পিছু নেয় তারা। মোটর বাইকে তিনজনই ছিল। শম্ভু বাইকটি চালাচ্ছিল। রাহুল পিছনে বসেছিল। মাঝে ছিল বাবু। রাহুল স্বপনবাবুকে ‘মামা’ বলে ডাকত। ওই রাতেও পাটনাবাজারের কাছে এসে সে স্বপনবাবুকে ‘মামা’ বলে ডাকে। পরিচিতের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়েন এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। এরপরই তাঁকে গুলি করা হয়। দু’টি গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
পুলিশের দাবি, ঘটনার পর তিনজনই রেলসেতুর কাছে চলে গিয়েছিল। পরে তারা পরিস্থিতি বুঝতে নিজেদের এলাকাতেও ফিরে আসে। রাতে বেশ কিছুক্ষণ তারা এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে। পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় রাহুল এবং শম্ভু। তবে সুযোগ বুঝে বাবু পালিয়ে যায়। এতদিন সে অন্যত্র পালিয়ে পালিয়েই বেড়াচ্ছিল। বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং চারটি সোনার আংটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। শহরের এই ঘটনার প্রতিবাদে একদিন কাজও বন্ধ রাখেন শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং স্বর্ণশিল্পীরা। তাঁরা প্রতিবাদ দিবস পালন করেন। ঘটনার পর মেদিনীপুরের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে সরব হয় কংগ্রেস- সিপিএম- বিজেপির মতো বিরোধী দলগুলো। তারা দাবি করে, পুলিশি নিস্ক্রিয়তার ফলেই শহরে দুস্কৃতীদের দাপট বাড়ছে। অসামাজিক কাজকর্ম বাড়ার ফলে আতঙ্ক- উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। পুলিশ অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে নারাজ। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “অসামাজিক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। শহরে নজরদারি চলে। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy