এমন ডগ ক্যানেলই তৈরি হওয়ার কথা। —নিজস্ব চিত্র।
তদন্তের কাজে পুলিশ কুকুরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রহস্যের কিনারা করা থেকে অভিযুক্তদের পাকড়াও করা, সবেতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রশিক্ষিত এই কুকুরেরা। অথচ, মাওবাদী প্রভাবিত পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা পুলিশের প্রশিক্ষিত কোনও কুকুর নেই। এর প্রধান কারণ, স্নিফার ডগ অর্থাৎ পুলিশ কুকুর রাখার কোনও জায়গা (ডগ ক্যানেল) নেই জেলা পুলিশ লাইনে। জেলার যে কোনও প্রান্তে তদন্তের প্রয়োজনে প্রশিক্ষিত কুকুর অর্থাৎ স্নিফার ডগ আনতে হয় খড়্গপুর থেকে। সেখানে রেল-পুলিশের এবং রাজ্য পুলিশের মেদিনীপুর রেঞ্জে ‘ডগ ক্যানেল’ রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ অবশ্য বলেন, “মেদিনীপুরে ‘ডগ ক্যানেল’ তৈরি হবে। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মিলেছে। অর্থও বরাদ্দ হয়েছে।”
জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর, মেদিনীপুর পুলিশ লাইন চত্বরে আপাতত ৬টি ‘ডগ ক্যানেল’ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য প্রাথমিক ভাবে ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ক’বছর আগেই এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। পুলিশ প্রস্তাব পাঠায় পূর্ত দফতরে। পূর্ত দফতর প্রকল্পের খসড়া করে পাঠায় পুলিশের কাছে। পরে জেলা পুলিশের কাছ থেকে প্রকল্পের খসড়া-সহ প্রস্তাব পৌঁছয় রাজ্যে। পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল প্রতিহার বলেন, “মেদিনীপুরে ‘ডগ ক্যানেল’ তৈরি করার প্রস্তাব রয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মিললেই কাজ শুরু হবে।” জেলা পুলিশের ওই সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই পূর্ত দফতরকে কাজ শুরু করার অনুমতি দিতে চলেছে পুলিশ।
‘ডগ ক্যানেল’ ঠিক কী?
পুলিশ সূত্রে খবর, যে ছোট ঘরে প্রশিক্ষিত কুকুরগুলি থাকে, তাকেই বলে ডগ ক্যানেল। অনেকের কাছে এটি ‘ডগ হাউস’ বলেও পরিচিত। সাধারণত, এক-একটি ক্যানেলে একটি করেই কুকুর থাকে। আশপাশের পরিবেশও কুকুরের বসবাসের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হয়। প্রশিক্ষিত পুলিশ কুকুর অর্থাৎ ‘স্নিফার ডগ’ বা ‘ডিটেকশন ডগ’ সাধারণত, গন্ধ শুঁকে তল্লাশির কাজ চালায়। সূত্র খুঁজতে পুলিশকে সাহায্য করে। সম্প্রতি পুলিশ কুকুর এনে বেশ কিছু ঘটনার তদন্ত করতে হয়েছে মেদিনীপুরে। সম্প্রতি ধেড়ুয়ায় মুন্ডুহীন এক বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। আশপাশে তল্লাশি চালিয়েও মুন্ডুর খোঁজ মিলছিল না। শেষমেশ তদন্তে পুলিশ কুকুর আনা হয়। সাফল্যও মেলে। পুলিশের তালিকায় সন্দেহভাজন ছিল নিহতের ভাইপো। কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে ওই ভাইপোকে এক সারিতে দাঁড় করানো হয়। তার আগে পুলিশ কুকুরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে রক্তের গন্ধ শোকানো হয়। এরপর কুকুরটিকে যখন ওই সারির সামনে আনা হয়, তখন সে নিহতের ভাইপোকে দেখেই চিৎকার করতে থাকে। পরে পুলিশি জেরায় ওই যুবক জ্যেঠুকে খুনের কথা কবুল করে। গত বুধবার রাতে মেদিনীপুর শহরে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুনের ঘটনাতেও পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত চালানো হয়। তার ভিত্তিতে গ্রেফতারও করা হয় দু’জনকে। অবশ্য পুলিশ কুকুর এনে সব ঘটনার কিনারা হয় না। দিন কয়েকের মধ্যে কোতয়ালি থানা এলাকার একাধিক মন্দিরে চুরির পর পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত হয়েছে। তবে কিনারা হয়নি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “পুলিশ কুকুর দিয়ে সব অপরাধমূলক ঘটনার কিনারা হয় না, এটা যেমন ঠিক। তেমন অনেক ঘটনার কিনারা হয়, এটাও ঠিক। পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় জেলা পুলিশের ‘ডগ ক্যানেল’ থাকা প্রয়োজন। থাকলে বিভিন্ন ঘটনার তদন্তেরই সুবিধে হবে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেদিনীপুরে ‘ডগ ক্যানেল’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy