বন্ধই পড়ে টিকিট কাউন্টার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার নিকোপার্কে যাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। কাজ সেরে বাড়ি থেকে বেরোতে একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল। স্টেশনে পৌঁছে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে স্ত্রী, সন্তানদের দাঁড় করিয়ে রেললাইন পেরিয়ে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের একমাত্র টিকিট কাউন্টারে টিকিট কাটতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার আগেই দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে হাজির হাওড়াগামী পুরুলিয়া এক্সপ্রেস। টিকিট কেটে সিঁড়ি ভেঙে ফের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছনোর আগেই ট্রেন ছেড়ে যায়। অগত্যা বাড়তি কড়ি খসিয়ে গাড়ি ভাড়া করে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন প্রসেনজিৎবাবু।
শুধু প্রসেনজিৎবাবু নয়, খড়্গপুরের অন্যতম ব্যস্ত রেল স্টেশন গিরিময়দানের অধিকাংশ যাত্রীই একই অভিজ্ঞতার শিকার। স্টেশনে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম চালু হওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। টিকিট ঘর তৈরি থাকলেও এখনও তা চালু করা যায়নি। ফলে চরম ভোগান্তিতে রেল যাত্রীরা। রেল যাত্রীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত এই স্টেশনের ফুটব্রিজটিও দু’টি প্ল্যাটফর্মের টিকিটঘর থেকে অনেকটা দূরে। ফলে রেললাইন পার হয়ে যাতায়াতের প্রবণতা বাড়ছে। আবার ডাউন লাইনের ট্রেনগুলির বেশিরভাগ দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোয় টিকিট কেটে ট্রেন ধরতে গিয়ে চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ফলে অনেকের ট্রেন মিসও হয়ে যাচ্ছে।
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে খড়্গপুরের রেল কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে রেল শহরের চায়না টাউন সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া ময়দানে সভা করেছিলেন ভিভি গিরি। তখন থেকেই তাঁর নামে এই মাঠের নাম হয় গিরি ময়দান। রেলমন্ত্রী থাকাকলীন গনি খান চৌধুরী খড়্গপুরের নিত্য যাত্রীদের চাহিদার কথা ভেবে খড়্গপুর-মেদিনীপুর রেলপথের মাঝে গিরিময়দানের ধারে একটি স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা নেন। স্টেশনের নামও হয় গিরিময়দান। শহরের নিমপুরা, মালঞ্চ, মথুরাকাটি সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, রেল কলোনির-১ ও ২ নম্বর এলাকা, নিউ সেটেলমেন্টের বাসিন্দারা অনেকাংশে যাতায়াতের জন্য এই স্টেশনের উপর নির্ভরশীল। এই স্টেশন দিয়ে আদ্রা-হাওড়ার মতো মেমু নিয়ে দিনে ৪৮টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল করে।
দীর্ঘদিন খড়্গপুর থেকে গোকুলপুর প্রায় ৭ কিলোমিটার রেলপথে একটিমাত্র লাইন থাকায় দীর্ঘক্ষণ ট্রেনগুলিকে গোকুলপুরে অপেক্ষা করতে হত। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর গিরিময়দান থেকে গোকুলপুর ডবল লাইন চালু হয়েছে। তবে এখনও খড়্গপুর পর্যন্ত বাকি ৩ কিলোমিটার রেলপথ ডবল হয়নি। গত বছরের জানুয়ারি মাসে গিরি ময়দান স্টেশনে দ্বিতীয় প্ল্যাটফর্মও চালু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের অভিযোগ, বছর ঘুরে গেলেও নবনির্মিত দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে এখনও টিকিট কাউন্টার চালু হয়নি। প্রবীণ অমিয় চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “মাঝেমধ্যে এই স্টেশন দিয়েই যেতে হয়। আমার হাঁটুতে সমস্যা রয়েছে। সিঁড়ি ভেঙে অত দূরে গিয়ে টিকিট কেটে ফের সিঁড়ি ভেঙে ফিরে আসা কষ্টকর। বিষয়টিতে রেলের নজর দেওয়া উচিত।”
দূরে টিকিট কাউন্টার হওয়ায় অনেকেই শেষ মুহূর্তে টিকিট কাটতে না পেরে ট্রেনে উঠে পড়ে জরিমানার মুখে পড়ছেন। খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই টিকিটঘর চালু করতে গেলে যন্ত্রাংশ ও কর্মী লাগবে। চালু টিকিট কাউন্টারগুলির জন্যও আমাদের কাছে এখন পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে। এখন তাই নতুন ধরনের অটোমেটিক টিকিট ভেন্ডিং মেশিন অথবা এজেন্ট দিয়ে টিকিট ঘর চালুর ভাবনা চলছে। প্রক্রিয়া পূরণ হলেই টিকিট ঘর চালু হবে।”
কবে তা চালু হয় সেই অপেক্ষায় খড়্গপুরের রেলযাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy